সংসারের অভাবের কারণে মেয়েকে কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন পিতা আব্দুল মালিক। জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জামিলা খাতুনের ঘরে মেয়ে রিনাকে পাঠান পিতা আব্দুল মালিক। কিন্তু তিনি ভাবেননি- সুখের বদলে মৃত্যু এসে আলিঙ্গন করবে তার মেয়েকে।
গত শনিবার (৩১ অক্টোবর) সিলেটের আখালিয়া সুরমা আবাসিক এলাকার ডা. জামিলা খাতুনের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় কোম্পানীগঞ্জের বাতুমারা নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল মালিকের মেয়ে জান্নাত আক্তার রিনার (১৫) লাশ। গলায় ছিলো আঘাতের চিহ্ন। রিনার পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতনের পর হত্যা। আর ডা. জামিলা খাতুনের দাবি- আত্মহত্যা করেছে রিনা।
এ মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছেন রিনার পিতা আব্দুল মালিক। অভিযোগটি কোতোয়ালি থানার ওসিকে ৩ দিনের মধ্যে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন আদালত। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সিলেট অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (ভারপ্রাপ্ত) বিচারক জিয়াদুর রহমান এই আদেশ দেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পাশাপাশি কিশোরী জান্নাত আক্তার রিনার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন চিকিৎসক দম্পতির ছেলে তাহসান। রিনার প্রতি তার কুদৃষ্টি ছিলো। মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ৬ জনকে অভিযুক্ত করেছেন আব্দুল মালিক।
অভিযুক্তরা হচ্ছেন, সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, তার স্ত্রী জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জামিলা খাতুন, তাদের ছেলে তাহসান, মেয়ে তাসকিয়া বেগম ও গোয়াইনঘাটের আঙ্গারজুর লামাপাড়া গ্রামের হাসনা বেগম। এছাড়াও মামলায় ১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্তরা নিজেদের বাসায় নেই বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ডা. ওয়েছ আহমদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জামিলা খাতুনও কর্মস্থলেও যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহসীন আহমদ বলেন, কিশোরীর পিতা আব্দুল খালিক তার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন। এ সময় আদালতের বিচারক তাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করার পাশাপাশি আব্দুল খালিকের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। সেইসঙ্গে অভিযোগপত্রে বাদির দাখিল করা বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত ৩ দিনের মধ্যে কোতোয়ালি থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে মামলা নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
রিনার পিতা আব্দুল মালিক জানান, অভাবের সংসার হওয়ায় বাসায় টুকটাক কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখা করানোর শর্ত দিয়ে ডা. ওয়েছ ও ডা. জামিলা খাতুনের বাসায় পাঠান রিনাকে। কিন্তু ডা. জামিলার পরিবারের সদস্যরা রিনাকে নানাভাবে অত্যাচার করতো। কাজে সামান্য ভুল হলেই রিনাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করতো সবাই। প্রায় সময় রিনা তার ওপর নির্যাতনের কথা জানালেও বাবা অভাবগ্রস্ত হওয়ায় মেয়েকে বুঝিয়ে আবারও ডা. জামিলার বাসায় পাঠাতেন।
গত ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামি হাসনা বেগম রিনার ভাই আল আমিনের মোবাইলে ফোন করে জানান, তার বোন আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে আখালিয়া সুরমা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের ৪৩ নম্বর বাসা গিয়ে স্বজনরা দেখেন, রিনার লাশ সিঁড়ির নিচে পড়ে আছে।
আব্দুল মালিক আরও বলেন, ডা. জামিলার ছেলে তাহসানের কুদৃষ্টি ছিলো রিনার প্রতি। মামলার ১১ নম্বর সাক্ষী শিরিনা বেগম আব্দুল মালিককে জানিয়েছেন, রিনা জীবিত অবস্থায় তাহসান তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে প্রায়ই নির্যাতন করতো।
উল্লেখ্য, ডা. জামিলার ফোনের ভিত্তিতে গত ৩১ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে আখালিয়া সুরমা আবাসিক এলাকার ৪ নং গলির ৪৩ নং (ডা. জামিলার) বাসা থেকে পুলিশ রিনার লাশ উদ্ধার করে। ওইদিনই ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় রিনার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ১০টায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বতুমারা (নোওয়াগাও) গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে রিনার মরদেহ দাফন করা হয়। মৃত্যুর দুইদিন পর মঙ্গলবার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন পিতা আব্দুল মালিক।