মহামারী করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় ঢাকার রিজেন্ট ও জেকেজি হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যখন দেশ জুড়ে তোলপাড় চলছে, তখন সিলেটে খোঁজ মিলেছে ভয়ানক এক চিকিৎসকের! যিনি নমুনা পরীক্ষা তো দূরের কথা, রোগী না দেখে টাকা পেলেই দিয়ে দেন ‘নন কভিড সার্টিফিকেট’।
তার টার্গেটে থাকেন বিদেশযাত্রীরা। প্রতি সার্টিফিকেটের জন্য নেন চার হাজার টাকা। তবে রিপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি খুবই কৌশলী। করোনা নেগেটিভ রিপোর্টের পরিবর্তে দেন ‘নন কভিড’ প্রত্যয়নপত্র। এ এইচ এম শাহ আলম নামের ওই চিকিৎসক নিজেকে ওসমানী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার দাবি করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তিনি সেখানে কর্মরত নন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. এ এইচ এম শাহ আলম নগরীর মধুশহীদ এলাকায় মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেডের নিচতলায় চেম্বার করেন। বিদেশযাত্রীদের জন্য বিভিন্ন দেশ ও এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সার্টিফেকেট বাধ্যতামূলক করার পর প্রবাসীদের টার্গেট করেন ডা. শাহ আলম।
বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি বিদেশযাত্রীদের কাছে খবর পৌঁছান ‘করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট’র ব্যবস্থা করে দেওয়ার। ‘করোনা নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বলে বিদেশযাত্রীদের কাছ থেকে তিনি চার হাজার টাকা করে আদায় করেন। ফ্লাইটের ৪৮ ঘণ্টা আগে তিনি ওই প্রবাসীকে ডেকে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেন প্রত্যয়নপত্র। রোগী বা যাত্রীকে না দেখেই নিজের প্যাডে দেওয়া ওই প্রত্যয়নপত্রে ডা. শাহ আলম লিখে দেন, তিনি ওই ব্যক্তিকে তার চেম্বারে দেখেছেন।
তার মধ্যে কভিড-১৯ এর কোনো লক্ষণ নেই। এ ছাড়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে উপসর্গহীনদের করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই। এদিকে সংশ্লিষ্ট ট্রাভেলস বা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগের পর বিদেশযাত্রীরা বুঝতে পারেন ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দিয়ে ডা. শাহ আলম প্রতারণা করেছেন। কিন্তু ফ্লাইটের সময় ঘনিয়ে আসায় তারা ঝামেলায় না জড়িয়ে ঢাকায় গিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশ চলে যান।
নিজের পরিচয়ের ক্ষেত্রেও প্রতারণার আশ্রয় নেন ডা. শাহ আলম। তার প্রত্যয়নপত্রের নিচে নিজের পদবি লেখেন ‘মেডিকেল অফিসার, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’। কিন্তু ওসমানী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডা. এ এইচ এম শাহ আলম ওসমানীতে কর্মরত নন। এ ব্যাপারে ডা. শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকার বিনিময়ে ‘নন কভিড প্রত্যয়নপত্র’ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, চার হাজার টাকা নয়, দুই হাজার টাকা করে নিয়ে তিনি দুজন যাত্রীকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
এভাবে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া সঠিক হয়নি স্বীকার করে তিনি অনুশোচনাও করেন। ভুয়া পদবি ব্যবহারের ব্যাপারে ডা. শাহ আলম জানান, তিনি বর্তমানে কোনো সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নন। টাইপের সময় কম্পিউটার অপারেটর ভুলবশত তার নামের নিচে ওসমানী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার লিখে ফেলেছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. শিশির চক্রবর্তী জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষা ছাড়া কভিড-১৯ এর কোনো ধরনের রিপোর্ট বা প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। এরকম কাজ কেউ করলে তা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে করেছেন।