নিজেদের ভুলে ম্যাচের প্রথমভাগেই দুই গোল খেয়ে বসল রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিলেও উজ্জীবিত প্রতিপক্ষকে আটকানোর উপায় জানা ছিল না সান্তিয়াগো সোলারির দলের। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদেরকে তাদেরই মাঠে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে আয়াক্স।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর ফিরতি পর্বে ৪-১ গোলে জিতেছে নেদারল্যান্ডসের দলটি। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে পরের রাউন্ডে ওঠেছে তারা।
শেষ তিন ম্যাচে জালের দেখা না পাওয়া রিয়াল এগিয়ে যেতে পারতো চতুর্থ মিনিটেই। লুকাস ভাসকেসের ক্রসে রাফায়েল ভারানের হেড ক্রসবারে লেগে ব্যর্থ হলে হতাশায় পুড়তে হয় স্বাগতিকদের।
সুবর্ণ সুযোগ নষ্টের হতাশা কাটতে না কাটতেই সপ্তম মিনিটে নিজেদের ভুলে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। মাঝমাঠের কাছে টনি ক্রুসের দুর্বল ব্যাকপাস দুসান তাদিচ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে ছোট করে বাড়ান হাকিমকে। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান এই ডাচ মিডফিল্ডার।
প্রথম লেগে দুর্দান্ত খেলেও হেরে যাওয়া আয়াক্স গোল পেয়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তারই ফল মিলে অষ্টাদশ মিনিটে, ব্যবধান দ্বিগুণ করে সবশেষ ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে ইউরোপ সেরার মুকুট পরা দলটি।
এই গোলেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল সার্ব ফরোয়ার্ড তাদিচের। অবশ্য নিজেদের দায়ও এড়াতে পারবে না রিয়ালের খেলোয়াড়রা। কাসেমিরোকে কাটিয়ে তাদিচ অনেকটা এগিয়ে কোনাকুনি ডি-বক্সে বল বাড়ান। এসময় তাকে বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি কেউই। বল ধরে আগুয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেরেস।
এরই সঙ্গে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় চারবারের চ্যাম্পিয়ন আয়াক্স। চার মিনিট পর নেরেসের চিপ শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। খানিক পর তাদিচের শট রুখে দেন কোর্তোয়া।
চোট পেয়ে ২৯তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন ভাসকেস, ছয় মিনিট পর তাকে অনুসরণ করেন ভিনিসিউস জুনিয়র। বদলি নামেন গ্যারেথ বেল ও মার্কো আসেনসিও।
৪৩তম মিনিটে আবারও পোস্টে লেগে ব্যর্থ হয় রিয়ালের চেষ্টা। ক্রুসের পাস থেকে বেলের শট পোস্টে বাধা পায়। দ্বিতীয়ার্ধে আবার সুযোগ আসে ওয়েলসের এই ফরোয়ার্ডের সামনে। বিপজ্জনক জায়গা থেকে তার দুর্বল শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন অতিথি গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধে বেশ গোছানো শুরু করা রিয়াল ৫০তম মিনিটে গোল পেতে পারতো। কিন্তু দানি কারভাহালের বাড়ানো বল ধরে বেনজেমার শট ক্রসবার ঘেঁষে চলে যায়। দুই মিনিট পর তাদিচের শট ঠেকিয়ে রিয়ালকে ম্যাচে রাখেন কোর্তোয়া।
তবে তাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেননি বেলজিয়ামের এই গোলরক্ষক। সতীর্থের পাস ডি-বক্সের মুখে পেয়ে ভিতরে ঢুকেই বাঁ পায়ের উঁচু জোরালো শটে বল ঠিকানায় পাঠান তাদিচ। গোলটির আক্রমণের শুরুতে বল বাইলাইন পেরিয়ে গিয়েছিল কি-না সন্দেহে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি।
৭০তম মিনিটে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার সের্হিও রেগিলনের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন আসেনসিও। বল পোস্টের ভিতরের কানায় লেগে জালে জড়ায়। বের্নাবেউয়ে গ্যালারি যেন জেগে উঠে এই গোলে।
তবে তাদের আশা নিরাশায় রূপ নিতে দুই মিনিটও লাগেনি। বাঁ দিক থেকে অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে ক্রসবার ঘেঁষে দূরের পোস্ট দিয়ে বল লক্ষ্যে পাঠান ডেনমার্কের মিডফিল্ডার লেসে শুন। ঝাঁপিয়ে পড়েও গোলের নাগাল পাননি কোর্তোয়া।
৮৪তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বেল। কিন্তু তার বাঁ পায়ের শট ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত খেলা আয়াক্স গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানাকে পরাস্ত করতে পারেনি। দুই মিনিট পর তাদিচের আরেকটি প্রচেষ্টা ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে গেলে ব্যবধান আর বাড়েনি।
ঘটনাবহুল ম্যাচের যোগ করা সময়ে রিয়াল নেমে আসে ১০ জনের দলে। ডাচ মিডফিল্ডার রন দে ভিককে পেছন থেকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন সের্হিও রামোসের জায়াগায় সুযোগ পাওয়া স্প্যানিশ ডিফেন্ডার নাচো ফের্নান্দেস।
বিব্রতকর এই হার দিয়ে যেন শেষ হলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের অসাধারণ সব সাফল্যে ভরা এক দশকের। ক্লাব ফুটবলে ইউরোপের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় টানা তিনবারসহ গত পাঁচ আসরে চারবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি নয় মৌসুম পর শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়ল।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ঘরের মাঠে টানা চার ম্যাচ হারলো মাদ্রিদের ক্লাবটি। এর মধ্যে শেষ সাত দিনেই তিনবার! আর এই তিন পরাজয়ে চলতি মৌসুমে তাদের শিরোপা জয়ের আশা যেন শেষ হয়ে গেল।
গত বুধবার সেমি-ফাইনালের ফিরতি পর্বে বার্সেলোনার কাছে ৩-০ গোলে হেরে কোপা দেল রে থেকে বিদায় নেয় তারা। তিন দিন পর লা লিগায় চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছেই ১-০ গোলে হেরে শীর্ষে থাকা দলটির থেকে ১২ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়ে তারা। লিগের বাকি ১২ রাউন্ডে অতি নাটকীয় কিছু না হলে সোলারির দলের লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা নেই বললেই চলে। আর এবার সমর্থকদের সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে হলো রেকর্ড ১৩বারের চ্যাম্পিয়নদের।
অন্য দিকে, প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ২-১ গোলে হারের পরও পরের রাউন্ডে ওঠার কীর্তি গড়লো আয়াক্স।
কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠতে প্রথম লেগে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে হতো বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে। পারেনি তারা। উল্টো হেরে বসেছে আবারও। হ্যারি কেইনের একমাত্র গোলে বুন্ডেসলিগার শীর্ষস্থানধারীদের হারিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে পরের পর্বে উঠেছে টটেনহ্যাম হটস্পার।