টপঅর্ডার ব্যর্থ, মিডলঅর্ডারের কেউই পারেননি নিজেদের ইনিংস বড় করতে, পঞ্চাশ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে শঙ্কা জেগেছিল একশোর আগেই অলআউট হয়ে যাওয়ার; সেখান থেকে বাংলাদেশ ইনিংসকে ভদ্রস্থ করেছেন পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন এবং নয় নম্বরে নামা মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীন।
দুজন মিলে অষ্টম উইকেট জুটিতে যোগ করেছেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৪ রান। নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন মিঠুন, খেলেছেন ৬২ রানের ইনিংস। আশা জাগিয়েও ফিফটি করতে পারেননি সাঈফ। তিনি আউট হয়েছেন ৪১ রান করে।
মিঠুন-সাঈফের দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্যাটিংয়ে ৪৮.৫ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৩২ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজে এগিয়ে যেতে নিউজিল্যান্ডের করতে হবে ২৩৩ রান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই ৪ মেরে শুভসূচনা করেন তামিম ইকবাল। কিন্তু সেটি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ট্রেন্ট বোল্টের করা দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিলিয়ে আসেন নিজের উইকেট। প্রথম বলের বাউন্ডারিসহ মোটে ৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
অপর ওপেনার লিটন দাসের অবস্থা আরও করুণ। তিনি সাজঘরে ফেরেন পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে। ম্যাট হেনরির বলে সরাসরি বোল্ড হওয়ার আগে ৮ বল খেলে তিনি করেন ১ রান।
তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে খানিক প্রতিরোধ গড়েন মুশফিকুর রহীম এবং সৌম্য সরকার। তবে এটিকে প্রতিরোধের চেয়ে বরং পাল্টা আক্রমণ বলাই শ্রেয়। নিজের যুতসই ফাস্ট উইকেট পেয়ে তেঁতে ওঠেন সৌম্য। বোল্টের এক ওভারে মারেন জোড়া বাউন্ডারি। হেনরির ওভার থেকে হাঁকান একটি করে ছয় ও চার।
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে প্রথম দশ ওভার যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেটিই প্রমাণ হয় পরের দিকে। ইনিংসের ৮ম ওভারে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক, এক চারের মারে করেন ৬ রান। পরের ওভারেই পুল করতে গিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে পরিণত হন ফিরতি ক্যাচে। তবে ৫ চারের সঙ্গে ১ ছয়ের মারে মাত্র ২২ বলে ৩০ রান করেন তিনি।
নবম ওভারেই মাত্র ৪২ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ইনিংসকে পুনরায় গড়ায় দায়িত্ব নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মোহাম্মদ মিঠুন। নয় ওভারের জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ২৯ রান।
ইনিংসের ১৮তম ওভারে লকি ফার্গুসনের করা ১৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টার ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে দেরিতে ব্যাট চালান মাহমুদউল্লাহ। এতেই হয় সর্বনাশ। ধরা পড়েন প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো রস টেলরের হাতে। আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে করেন ১৩ রান।
একপ্রান্তে থেকে যান মোহাম্মদ মিঠুন। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে উইকেটে আসেন সাব্বির রহমান। দারুণ দুটি ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেন তিনি। কিন্তু অভাগাই বলতে হয় তাকে।
ইনিংসের ২৪তম ওভারে মিচেল স্যান্টনারকে সুইপ করতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সাব্বির। সে সুযোগ নিয়ে তাকে স্টাম্পিং করতে একটুও সময় নষ্ট করেননি উইকেটরক্ষক টম লাথাম। মাহমুদউল্লাহর মতোই সাব্বিরের ব্যাট থেকেও আসে ঠিক ১৩ রান।
একশ রানের আগেই ছয় উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে তখন আট নম্বরে নেমে ইতিবাচক ব্যাটিং শুরু করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সঙ্গে পেয়ে যান দায়িত্বশীল মোহাম্মদ মিঠুনকে। নিজের মুখোমুখি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে মিরাজ বুঝিয়ে দেন বোলারদের ভয় পেয়ে ব্যাটিং করলে ঠিক লাভ হবে না নেপিয়ারের উইকেটে।
মিচেল স্যান্টনারকে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে অপর প্রান্তে থাকা মিঠুনকে যেনো নির্ভার করেন মিরাজ। কিন্তু বেশিক্ষণ উইকেটে থাকা হয়নি তার। ইনিংসের ২৯তম ওভারের শেষ বলে অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল লেগসাইডে টেনে খেলতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন তিনি।
শর্ট ফাইন লেগে বেশ খানিকটা দৌড়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন জিমি নিশাম। বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় মিরাজের ২৭ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ের মারে খেলা ২৬ রানের ইনিংসের। তখনো অন্যপ্রান্তে অবিচল পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। যিনি জুটি বাঁধেন নয় নম্বরে নামা মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীনের সঙ্গেও।
ইনিংসের নবম ওভারে উইকেটে আসেন মিঠুন। তিনি কোনো বল খেলার আগেই সে ওভারের দ্বিতীয় বলে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তখনো পর্যন্ত দুর্দান্ত ব্যাট করা সৌম্য। এরপর থেকেই শুরু মিঠুনের প্রতিরোধ।
অন্য প্রান্তে মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির কিংবা মিরাজ যখন বেছে নিয়েছিলেন পাল্টা আক্রমণের পথ, তখন মিঠুন ধরেন দেখেশুনে খেলার পরিকল্পনা। তাই তো তার পরে নেমে মাহমুদউল্লাহ ১৩, সাব্বির ১৩ এবং মিরাজ ২৬ রান করে আউট হওয়ার সময়েও মিঠুনের রান মাত্র ২৬।
পাল্টা আক্রমণ করে ফায়দা হচ্ছে না দেখে সপ্তম উইকেটে সাঈফকে সঙ্গে নিয়ে বরং দেখেশুনে খেলার পথটাই বেছে নেন মিঠুন। লকি ফার্গুসনের গতি আর জিমি নিশামের নিখুঁত লাইনলেন্থের বিপক্ষে রান তোলার চেয়ে উইকেটে টিকে থাকাই উত্তম পন্থা মেনে খেলতে থাকেন এ দুজন।
ধীরেসুস্থে খেলে ইনিংসের ৪০তম ওভারে নিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পূরণ করেন তিনি। ৭৩ বলে ৪টি চারের মারে ৫০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। মিঠুনের দৃঢ় ব্যাটিংকে যথাযথ সঙ্গ দেন সাইফউদ্দীনও।
পাঁচ নম্বরে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ২৯, সাব্বির রহমানের সঙ্গে ২৩, মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে ৩৭ এবং মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীনের সঙ্গে ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৪ রানের জুটি গড়েন মোহাম্মদ মিঠুন। তার মতো ফিফটির আশা জাগিয়েছিলেন সাঈফও।
তবে তিনি পারেননি অযথাই সুইপ খেলতে গিয়ে। ইনিংসের ৪৫তম ওভারে তিনি ফেরেন ৫৮ বল থেকে ৩ চারের মারে ৪১ রান করে। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে ফেরেন মিঠুনও। শেষ দিকে মাশরাফি বিন মর্তুজা অপরাজিত থাকেন ৮ রান করে।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে ৩টি করে উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট এবং মিচেল স্যান্টনার। ম্যাট হেনরি ও লকি ফার্গুসন নেন ২টি করে উইকেট।
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএস