গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সাইম আইয়ুবের দিকে চোখ রাখতে বলেছিলেন অজি কিংবদন্তি রিকি পন্টিং। তবে টুর্নামেন্টে আলো ছড়াতে পারেননি এই তরুণ পাকিস্তানি ওপেনার। পন্টিং হয়তো সে জন্য কিছুটা লজ্জাই পেয়েছিলেন। তবে পাকা জহুরির চোখ যে রত্ন চিনতে ভুল করতে পারে না তার প্রমাণ পেতে বেশি বিলম্ব হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই নিজের জাত চিনিয়ে দিলেন ২২ বছর বয়সী সাইম আইয়ুব। সিরিজে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। সেই সঙ্গে প্রোটিয়াদের ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশের লজ্জাও উপহার দিল মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) ওয়ান্ডারার্স পার্কে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে স্বাগতক দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৬ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। আগে ব্যাট করা পাকিস্তান ওপেনার সাইম আইয়ুবের সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ৪৭ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩০৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ৪২ ওভারে ২৭১ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এই জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই আব্দুল্লাহ শফিকের উইকেট হারায় পাকিস্তান। কাগিসো রাবাদার ওভারের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আউট হয়ে যান এই ওপেনার। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বাবর আজমের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন আইয়ুব। ১৩৩ বলে ১১৪ রানের জুটি গড়েন তারা।
বাবর আজমকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন মাপাখা। আউট হওয়ার আগে ৭১ বলে ৭ চারে ৫২ রান করেন বাবর।
চার নম্বরে নামা অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গেও জুটি জমিয়ে তোলেন আইয়ুব। ৯৩ রানের জুটি গড়ার পথে এই সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো শতকের দেখা পান আইয়ুব। ৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি।
তবে শতক পূর্ণ করে আর টিকতে পারেননি আইয়ুব। ৯৪ বলে ১৩ চার ও ২ ছয়ে ১০১ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলে করবিন বশ্চের বলে আউট হন তিনি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন আইয়ুব। পার্লে সেদিন ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
পরের ওভারের প্রথম বলেই বোর্হা ফরচুনের শিকারে পরিণত হন কামরান গুলাম। গোল্ডেন ডাক মারেন আগের ম্যাচেই ৬৩ রানের ইনিংস খেলা গুলাম।
৩৮তম ওভারে অধিনায়ক রিজওয়ান বিদায় নেন। ফরচুনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫২ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৫৩ রান করেন তিনি।
সালমান আগা ও তৈয়ব তাহিরের ৭৪ রানের জুটি পাকিস্তানকে তিনশর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। ৩৩ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে ৪৮ রান করেন সালমান। তৈয়ব ২৪ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৮ রান করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে রাবাদা ৫৬ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। মার্কো ইয়ানসেন ও বোর্হা ফরচুন ২টি করে উইকেট শিকার করেন। মাপাখা ও করবিন ১টি করে উইকেট ঝুলিতে ভরেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১২৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ম্যাচ থেকে এক প্রকার ছিটকে যায় প্রোটিয়ারা। যা একটু আশা দেখাচ্ছিলেন হেনরিখ ক্লাসেন। কিন্তু ১৯৪ রানের মাথায় ক্লাসেনও বিদায় নেন। শাহিনের বলে আউট হওয়ার আগে মাত্র ৪৩ বলে ১২ চার ও ২ ছয়ে ৮১ রান করেন ক্লাসেন।
শেষ দিকে মার্কো ইয়ানসেন ২২ বলে ২৬ ও করবিন বশ্চ ৪৪ বলে ৪০ রানের ইনিংসে ব্যবধান কমান। এছাড়া টনি ডি জর্জি ২৬, রাসি ফন ডার ডুসেন ৩৫ ও এইডেন মার্করাম ১৯ রান করেন।
পাকিস্তানের পক্ষে ৫২ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন সুফিয়ান মুকিম। শাহিন আফ্রিদি ও নাসিম শাহ ২টি করে উইকেট শিকার করেন। বাকি উইকেট দুটি মোহাম্মদ হাসনাইন ও সাইম আইয়ুব ভাগাভাগি করেন।
১০১ রান ও ৩৪ রানে ১ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাইম আইয়ুব। ২৩৫ রান ও ২ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরাও তিনিই হয়েছেন।