তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষটিতে আর্নেস ভ্যাল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান করে বাংলাদেশ। ১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ১০৯ রানে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস। আর তাতেই ৮০ রানের জয় নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল টাইগাররা।
গত দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের শুরুটা ভালো ছিল না। বাজে শুরুর পর সংগ্রহটাও বড় হয়নি টাইগারদের। তবে আজ উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আসে। চোটের কারণে ছিটকে যাওয়া সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে আসেন পারভেজ হোসেন ইমন। এই ওপেনারই বাংলাদেশকে শক্ত ভিত গড়ে দেন। যেখানে দাঁড়িয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন জাকের আলি। তার ফিফটিতে বড় সংগ্রহ গড়েছে টাইগাররা।
সাদা বলে রান খরায় ভোগা লিটন দাস এই ম্যাচে শুরুটা বেশ ভালো করেন। কিন্তু ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। রোমারিও শেফার্ডের বলে এক্সট্রা কাভারে দাঁড়ানো ব্রেন্ডন কিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে দেন। ১৩ বলে ১৪ রান করে আউট হন তিনি।
পাওয়ার প্লের ভেতরই আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনও আউট হন। ২১ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান করে আলজারি জোসেফের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৯ বলে ৯ রান করে আউট হন তানজিদ হাসান তামিমও।
এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ জুটি গড়েন জাকের আলি অনিকের সঙ্গে। তাদের ৩৭ রানের জুটিটি ভাঙে দলের রান একশ পেরিয়ে যাওয়ার পর। ২৩ বলে ২৯ রান করে রস্টন চেজের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো গ্রেভসকে ক্যাচ দেন তিনি।
তখনও দেখেশুনেই খেলছিলেন জাকের আলি। মাঝে শামীম ও মাহেদী হাসান রান আউট হয়ে গেলে একটু চাপ বাড়ে। তানজিম হাসান সাকিব এসে সঙ্গ দেন তাকে। ৫০ রানের জুটিতে ১২ বলে ১ চার ও ছক্কায় ১৭ রান করে আউট হন।
জাকেরের ঝড় তুঙ্গে উঠে শেষ ওভারে গিয়ে। এর আগেও রান তোলার গতি ঠিকঠাকই ছিল তার। কিন্তু শেষ ওভারে গিয়ে তিন ছক্কায় তিনি তোলেন ২৫ রান। ওই তিনটি ছক্কাও মারেন টানা, এর মধ্যে স্টেডিয়ামও পার করেন বল। ৪২ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের। ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৯ রান।
১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় বলেই ব্রান্ডন কিংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই তাসকিনের শিকার হয়েছেন কিং।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ০.৫ ওভারে খেলার পরই হানা দেয় বৃষ্টি। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মিনিট বিশেক পরই আবার খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। নতুন বলে আরো একবার দুর্দান্ত শুরু করেন শেখ মেহেদি। নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেটের দেখা পান। এই ডানহাতি অফ স্পিনারকে লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন জাস্টিন গ্রিভস। তাতে ৭ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
এরপর নিকোলাস পুরাণ ও জনসন চার্লস জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়ে ফেরেন পুরাণ। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে বোকা বানিয়েছেন মেহেদি। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন পুরাণ। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৫ রান।
পাঁচে নেমে ডাক খেয়েছেন রোস্টন চেইস। চার বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই হাসান মাহমুদের বলে মেহেদির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এক প্রান্ত আগলে রাখা চার্লস ফিরেছেন রান আউটের শিকার হয়ে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ২৩ রান। তাতে দলীয় ফিফটির আগেই ৫ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। লোয়ার মিডল অর্ডারে রভম্যান পাওয়েল-গুড়াকেশ মোতিরাও ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। খানিকটা ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল রোমারিও শেফার্ড। তবে তার ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস কেবলই জয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।
বাংলাদেশের হয়ে ২১ রানে ৩ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার রিশাদ হোসেন। তাছাড়া তাসকিন ও মেহেদি দুটি করে উইকেট পেয়েছেন। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব ও হাসান মাহমুদ।