হলিউডের রুপালি পর্দায় সিনেমার নাম ‘মিশন ইম্পসিবল-৮’ হলেও নায়ক বাস্তবে দেখিয়েছেন কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। সিনেমার গল্পে পর্দায় নায়ক যেভাবে ছুটে যান, তা দেখে শিহরিত হয় দর্শক। এবার সবকিছুকে নতুন করে দেখিয়েছেন হলিউডের নায়ক টম ক্রুজ। প্যারিস অলিম্পিক গেমসের সবচেয়ে বড় চমক ছিল তার নাটকীয় আগমন।
স্তাদে দ্য ফ্রান্সের স্টেডিয়ামে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্টেডিয়ামে ছাদের ওপর থেকে নেমে এসেছেন নিচে। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে স্পট লাইট স্টেডিয়ামের ছাদে ছড়িয়ে পড়লে ৭৫ হাজার দর্শকের চোখ সেখানে আটকে যায়। ছাদের শেষ প্রান্তে, বিপজ্জনক স্থানে দাঁড়ান টম ক্রুজ। সেখান থেকে লাফিয়ে নেমে আসেন তিনি। রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখে শিহরিত হয় দর্শক। চিৎকার করে ওঠে তারা। নিচে নেমে অলিম্পিকের ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতে মঞ্চে ওঠেন টম ক্রুজ।
যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্ট সিমন বাইলসের হাত থেকে অলিম্পিকের পতাকা গ্রহণ করে মঞ্চ থেকে নেমে এবার কালো রঙের মোটরবাইকে বসেন। দর্শকের মধ্য দিয়ে অলিম্পিকের পতাকা পেছনে টাঙিয়ে ছুটে চলেন প্যারিস শহর হয়ে বিমানবন্দরে। বিদায় নেওয়া পর্যন্ত শেষ। আগেই রেকর্ড করা ছবি পর্দায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সবার চোখ তখন স্টেডিয়ামের বড় পর্দায়। বিশেষ বিমানে চড়েন টম ক্রুজ। প্রায় ৩০ হাজার ফুট উঁচুতে বিমান থেকে লাফিয়ে অলিম্পিক পতাকা নিয়ে পৌঁছান চলচ্চিত্রের শহর হলিউডে। মাউন্ট লি-তে নামেন। সেখানে পাহাড়ের ওপর লেখা হলিউড। মাউন্ড লি সেই পাহাড়। পর্যটকরা গেলে একটা হলিউড লেখা পাহাড়টি দেখতে যান এবং ছবি তুলতে ভুল করেন না।
টম ক্রুজ অলিম্পিকের পতাকা পৌঁছে দেন অন্যদের হাতে। সেখান থেকে পতাকা যায় লস অ্যাঞ্জেলসের শহরে। চার বছর পর অলিম্পিক গেমসের ৩৪তম আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্রে। মিশন ইম্পসিবল নায়কের হাতে অলিম্পিক পতাকা টম ক্রুজ পুরো অলিম্পিক ঘুরে খেলা দেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াবিদরা যেখানেই খেলেছেন, সেখানেই ছিলেন তিনি-হোক সেটি জিমন্যাস্টিকস কিংবা সুইমিং। নারী ফুটবলের দিন ফাইনালে ছিলেন তিনি। তার দেশ যুক্তরাষ্ট্র সেদিন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তিনি যে অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন, সেটি গোপনই রাখা হয়েছিল।
প্যারিস অলিম্পিক গেমস সমাপনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান থামস বাখ অলিম্পিকের পতাকা তুলে দেন লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়রের হাতে। হাতবদল হয়ে টম ক্রুজের হাতে যায় পতাকা। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে। পর্দায় দেখানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের নামিদামি সংগীতশিল্পীদের পারফরম্যান্স। সমাপনী অনুষ্ঠানে মহাদেশ আকারে মঞ্চ তৈরি করা হয়। মঞ্চের ওপর শিল্পীরা পারফর্ম করেন। গড়ে তোলেন পাঁচটি মহাদেশ নিয়ে অলিম্পিকের রিং। পৃথকভাবে রিংগুলো শূন্যে ভেসে উঠে মিলে যায় এক মোহনায়।
একদিকে চলছে আলোর ঝরনাধারা, অন্যদিকে সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে দিয়েছে ফ্রান্সের ব্যান্ড ফিনিক্স। শিল্পী কাভিনস্কির কণ্ঠের সঙ্গে দর্শক যেন এক সুরে কণ্ঠ মিলিয়ে যাচ্ছে; চলছে ইলেকট্রিক গিটার, ভায়োলিন, গাইল রক ব্যান্ড রেডহট চিলি পিপার্স। এবার নিয়ে তিন বার অলিম্পিক গেমস আয়োজন করল ফ্রান্স। আর ১০০ বছর পর প্যারিস শহরে অলিম্পিক হয়ে গেল।
গত ২৬ জুলাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল প্যারিসের বুক চিরে বয়ে যাওয়া সেইন নদীতে। ইতিহাসে এটি প্রথম কোনো ঘটনা। প্যারিস অলিম্পিকে হামলা হতে পারে, সেটি জেনেও খোলা আকাশের নিচে চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপহার দিয়ে পুরো পৃথিবীকে চমকে দিয়েছে ফ্রান্স। আর সমাপনী অনুষ্ঠান যেভাবে হয়ে আসছে, সেটি না হলেও মনে রাখার মতো অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছে ফরাসিরা। থমাস বাখ অলিম্পিকের সমাপনী ঘোষণা করেন।