টাইমিং ঠিকঠাক হলেও বল বাউন্ডারিতে যাচ্ছিল ধীরগতিতে। একে তো ভারী আউটফিল্ড, তার ওপর অনেক জায়গায় ঘাস নেই। উইকেটও মন্থর, বাউন্সও নিচু। নাহ্, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের কথা বলা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের ভেন্যু হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সের এমন কন্ডিশনে ‘ঘর’ খুঁজে পাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। এমন কন্ডিশনে কোন ধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে হয়, তা বাংলাদেশের মুখস্থ থাকার কথা। কিন্তু এমন কন্ডিশনেই হেরে বসল বাংলাদেশ!
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ধুঁকতে ধুঁকতে ৬ উইকেটে করা বাংলাদেশের ১৫৩ রান ৫ উইকেট ও ৩ বল হাতে রেখেই টপকে গেল যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমে দলটি গড়ে ফেলল ইতিহাস। টেস্টখেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে এটি তাদের মাত্র দ্বিতীয় জয়। এর আগে একমাত্র জয়টি এসেছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
প্রতিপক্ষের যখন ওভারপ্রতি দরকার মাত্র ৭.৭ রান, তখন ম্যাচ জেতার পূর্বশর্ত পাওয়ারপ্লেতে উইকেট নেওয়া। বাংলাদেশ সেটি পেয়েছে ভাগ্যক্রমে। শরীফুল ইসলামের করা চতুর্থ ওভারে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হন যুক্তরাষ্ট্রের ওপেনার ও অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। যুক্তরাষ্ট্রের রান তখন ২৭।
বাংলাদেশকে পরের উইকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় নবম ওভার পর্যন্ত। রিশাদ হোসেনের বলে সুইপ করতে গিয়ে আউট হন তিনে নামা আন্দ্রিস গুস। ১৮ বলে ২৩ রান করে আউট হন তিনি। রিশাদের ব্রেকথ্রুর পর অবশ্য রান আটকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। সেটি কাজেও দেয়। ১২তম ওভারে মোস্তাফিজ এসে ২৯ বলে ২৮ রান করা ওপেনার স্টিভেন টেলর ও অ্যারন জোন্সকে (১২ বলে ৪ রান) আউট করেন। আরেক বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামের করা ১৫তম ওভারে ১০ বলে ১০ রান করে আউট হন নিতিশ কুমার।
তবে সেটিই হয়ে থেকেছে বাংলাদেশ বোলারদের সর্বশেষ সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর তখনো ৫ উইকেটে ৯৪। অভিজ্ঞ কোরি অ্যান্ডারসন ও হারমিত সিংয়ের জুটির শুরু তখন থেকে। দুই বাঁহাতি ক্রিজে থাকায় নাজমুল হোসেন তাঁর সেরা বোলার সাকিব আল হাসানকে শেষ পাঁচ ওভারে বোলিংয়ে আনেননি, ১৬তম ও ২০তম ওভার করেছেন মাহমুদউল্লাহ। মাঝের ৩ ওভার ভাগাভাগি করেছেন শরীফুল ও মোস্তাফিজ। দুই পেসারের করা সেই ৩ ওভারে ৪৬ রান নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের জয় প্রায় নিশ্চিত করেন অ্যান্ডারসন ও হারমিতের জুটি।
অ্যান্ডারসন ২৫ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন, হারমিনের ৩৩ রান এসেছে মাত্র ১৩ বলে। দুজনের জুটি অবিচ্ছিন্ন থাকে ২৮ বলে ৬২ রানে। এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে নতুন কিছু দেখা যায়নি। যাঁরা ছন্দে নেই, তাঁরা আজও রানের দেখা পাননি। যাঁরা রানের দেখা পাচ্ছিলেন, তাঁরাই রান করেছেন। তাতেই বাংলাদেশের স্কোরটা কোনোরকমে ১৫০ পেরোয়।
টপ অর্ডারে ফর্মে থাকা একমাত্র ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসানকে বাদ দিয়ে লিটন দাসকে ফেরায়। কিন্তু দুই দফা জীবন পাওয়ার পরও ১৫ বলে ১৪ রান করে জেসি সিংয়ের বলে এলবিডব্লু হওয়াতে থামে তাঁর দৃষ্টিকটু ইনিংস। ২ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে প্রথমবার বেঁচেছিলেন লিটন, এরপর ৮ রানে তাঁকে রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করে যুক্তরাষ্ট্র।
লিটন যখন ধুঁকছেন, তখন সৌম্য সরকার খেলছিলেন স্বচ্ছন্দে। ড্রাইভে দুটি ও কাট শটে একটি বাউন্ডারি মেরে প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেটে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতে আউট হওয়ার সেই পুরনো প্রবণতা সৌম্যর থেকেই গেছে। স্টিভেন টেলরের অফ স্পিন লেগ সাইডের দিকে টেনে খেলে সৌম্য (১৩ বলে ২০ রান) খুঁজে নেন বাউন্ডারি সীমানায় থাকা একমাত্র ফিল্ডারকে। দুই ওপেনারকে হারিয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে করে মাত্র ৩৭ রান। তিনে নামা অধিনায়ক নাজমুলও রানটা বাড়াতে পারেননি। টেলরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে আউট হন ১১ বলে মাত্র ৩ রান করে।
চারে তাওহিদ হৃদয় নামায় তবু একটু রক্ষা। ক্রিজে এসেই দ্রুত তিনটি বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের ইনিংসে একটু গতি সঞ্চার করেন তিনি। কিন্তু অন্যপ্রান্তে মন্থর ব্যাটিং ও উইকেট পড়ায় হৃদয় সহজাত ব্যাটিংটা ঠিক করতে পারেননি। জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই ফর্মের খোঁজে থাকা সাকিব আজও বিশেষ কিছু করতে পারেননি। রান আউট হওয়ার আগে ১২ বল খেলে ৬ রান করেন তিনি।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে হৃদয়ের ৬৫ রানের জুটিটি এরপর বাংলাদেশকে ১৫০ পেরোনোর সুযোগ করে দেয়। মাহমুদউল্লাহ ২২ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩১ রান করে আউট হন ১৯তম ওভারে। হৃদয় শেষ বলে আউট হন, তার আগে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক পূর্ণ করেন ৪০ বলে। শেষ পর্যন্ত করেন ৪৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৮ রান। ৩ ওভারে মাত্র ৯ রানে ২ উইকেট নেওয়া টেলর ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বোলার।