এশিয়া কাপ: শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে আবার চ্যাম্পিয়ন ভারত

সংগৃহীত ছবি

কলম্বোয় বেশ কয়েক দিন ধরে বেরসিক বৃষ্টিতে এশিয়া কাপের ফাইনাল মাঠে গড়ানো নিয়েই শঙ্কা ছিল। তবে বৃষ্টির শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে খেলা মাঠে গড়ালেও দিনটি ভুলেই যেতে চাইবেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। কারণ, ঘরের মাঠে খেলতে নেমে ভারতীয় পেসারদের সুইং আর পেসে রীতিমতো ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা। ফলে কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই অষ্টম বারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল রোহিত শর্মার দল।

আজ রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে লঙ্কানরা খেলতে পেরেছে কেবল ৯২ বল। এই সময়ে ভারতীয় পেসাররা সবকটি উইকেট তুলে নিলে স্কোরবোর্ডে ৫০ রান তুলতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা।

এশিয়া কাপের সপ্তম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে শুরুতেই বিপাকে পড়ে স্বাগতিকরা। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে মাত্র ১৫.২ ওভারে ৫০ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গুভমন গিল ও ইশান কিশানের ব্যাটে চড়ে ২৬৩ বল হাতে রেখে ১০ উইকেটের রেকর্ড জয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। এই জয়ে সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনন্য রেকর্ড গড়ল রোহিত শর্মার দল।

৫১ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার উড়ন্ত সূচনা করে। গুভমন গিল ও ইশান কিশানের উদ্বোধনী জুটিতে সপ্তম ওভারেই ১০ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টিম ইন্ডিয়া। এই জয়ে অষ্টমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলল ভারত।

এর আগে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪০ মিনিট পর আজ খেলা শুরু হয়। এবারের আসরের নিয়মিত দৃশ্য বৃষ্টি প্রেমাদাসায় টসের পড়েই দেখা যায়। ফলে ম্যাচ কিছুক্ষণ দেরীতে শুরু হয়। ভারতীয় পেসার জাস্প্রিত বুমরাহ ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরান লঙ্কান ওপেনার কুশল পেরেরাকে। এরপর একে একে সাজঘরের পথ ধরে বাকি টপ অর্ডাররাও।

মোহাম্মদ সিরাজের করা চতুর্থ ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন চার টপ অর্ডার। প্রথম ওভারে কুশল পেরেরা ফিরে গেলে আসা যাওয়ার মিছিল শুরু হয়। পাথুম নিসাঙ্কা সিরাজের করা দ্বিতীয় ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।

এরপর ক্রিজে দাঁড়াতেই পারেনি লঙ্কান ব্যাটাররা। সাদিরা থেকে শুরু করে চারিথ আসালঙ্কা কেউই রানের খাতা খুলতে পারেনি। হ্যাটট্রিক বলে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা চার হাঁকালে আর রেকর্ড গড়া হয়নি সিরাজের। তবে এরপর ঠিক পরের বলেই সিলভাকে সাজঘরে ফেরান ভারতীয় এই পেসার। সেই সঙ্গে এশিয়া কাপের যেকোন আসরের ফাইনালে দ্রুততম ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েন মোহাম্মদ সিরাজ।

দলীয় ১২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা লঙ্কানরা লজ্জার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছিল। কলম্বোতে অবশেষে তাই হলো। এশিয়া কাপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড গড়েছে শ্রীলঙ্কা। সিরাজের বোলিং তোপে কোন ব্যাটারই দাঁড়াতে পারেনি।

শেষ পর্যন্ত ১৬তম ওভারে মাত্র ৫০ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার নজির গড়ল স্বাগতিকরা। ৭ ওভারে ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন সিরাজ। ভারতের বিপক্ষে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডে এটিই সবার উপরে। তার নিচে রয়েছে বাংলাদেশ, ২০১৪ সালে ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল টাইগাররা।

সিরাজ ৬ উইকেট নিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের ইতিহাসে যুগ্মভাবে এক ম্যাচে সবচেয়ে উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। এর আগে ২০০৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে অজন্তা মেন্ডিস ১৩ রানে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন, যা ছিল এই টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং ফিগার।

১৫ বছর পর কলম্বোতে সেই রেকর্ডে ভাগ বসালেন সিরাজ। সেই সঙ্গে আরো একাধিক কীর্তি গড়েছেন তিনি। শুধু যে একটি রেকর্ডই গড়েছেন সিরাজ তা নয়। ভাগ বসিয়েছেন সেই ২০ বছর পুরনো রেকর্ডে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি এতোদিন ছিল শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি পেসার চামিন্দা ভাসের।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৬ বলে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ভাস। আজ দীর্ঘ ২০ বছর পর সেই রেকর্ডে নিজের নাম লিখেছেন মোহাম্মদ সিরাজ। তিনিও ১৬ বলে ৫ উইকেট নিয়ে ভাসের পাশে নিজের নাম লেখালেন।