হারমানপ্রীতের কঠিন শাস্তি দাবি ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের

হারমানপ্রীতের কঠিন শাস্তি দাবি ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের
সংগৃহীত ছবি

ভারতের নারী দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠ ও মাঠের বাইরে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এজন্য তিনি ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ জরিমানা পেতে যাচ্ছেন। জরিমানা ছাড়াও ৪ ডি মেরিট পয়েন্টও পাবেন হারমানপ্রীত। এর মধ্যে মাঠের আচরণের জন্য ৩ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ম্যাচ শেষে প্রেজেন্টেশনে তার কথার জন্য ১ ডিমেরিট পয়েন্ট পাবেন।

হারমানপ্রীতের এমন আচরণের সমালোচনা চলছে সবদিকে। সমালোচনা করেছেন তারই দেশের সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা। এদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার মদন লাল। তিনি তো হারমানপ্রীতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। নারী দলের সাবেক অধিনায়ক আনজুম চোপড়াও তার আচরণ মেনে নিতে পারেননি।

এর আগে গত শনিবার বাংলাদেশ-ভারত তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচের ৩৪তম ওভারের সময় নাহিদা আক্তারের বলে আউট হয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙেন হারমানপ্রীত। এ সময় অনফিল্ড আম্পায়ার তানভীর আহমেদকে উদ্দেশ্য করেও কিছু বলতে দেখা যায় তাকে। ম্যাচটি টাই হলে সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ভাগাভাগি করে নেয় বাংলাদেশ-ভারত। তবে ম্যাচ শেষেও প্রেজেন্টেশনের সময় আম্পায়ারদের নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি।

ম্যাচ শেষে হারমানপ্রীত বলেছিলেন, ‘ম্যাচ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে বলে মনে করি। এমনকি খেলার বাইরেও, যে ধরনের আম্পায়ারিং এখানে হয়েছে তাতে আমরা খুবই বিস্মিত ছিলাম। পরবর্তীতে আমরা যখন বাংলাদেশে আসব, আমরা প্রস্তুত হয়েই আসব এখানে এই ধরনের আম্পায়ারিংয়ের শিকার আমাদের হতে হবে।’

এরপর ভারত ও বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ট্রফি হাতে ছবি তোলার জন্য দাঁড়ালে হারমানপ্রীত বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানার উদ্দেশে বলেন, ‘শুধু তোমরা কেন, আম্পায়ার তোমাদের ম্যাচ টাই করিয়েছে। আম্পায়ারকেও ডাকো। একসঙ্গে ছবি তুলি।’ এ সময় ভারত অধিনায়কের শরীরী ভাষাতেও ছিল তাচ্ছিল্যের ভাব। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠায় নিগার তাঁর দলকে নিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে যান।

এদিকে হারমানপ্রীতের আচরণকে ‘পীড়াদায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মদন লাল। এক টুইটবার্তায় তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে হারমানপ্রীতের কঠোর শাস্তিও দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ মেয়েদের বিপক্ষে হারমানপ্রীতের আচরণ ছিল পীড়াদায়ক। সে খেলার চেয়ে বড় নয়। ভারতের ক্রিকেটের জন্য সে দুর্নাম বয়ে এনেছে। ওর বিরুদ্ধে বিসিসিআইয়ের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

হারমানপ্রীতকে নিজের এই আচরণের জন্য সতর্ক করলেন আনজুম চোপড়া। যিনি ভারতের হয়ে ১৫৭টি ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে ১২টি টেস্ট, ১২৭টি ওডিআই এবং ১৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ৪১টি ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ভারতের সাবেক অধিনায়ক চোপড়া হারমানপ্রীতকে আচরণ বদলানোর পরামর্শ দেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সেই মুহূর্তে ও আগ্রাসন দেখিয়ে ফেলেছে। আমার ধারণা আগ্রাসন চলে গেলে এবং সে শান্ত হয়ে গেলে আমি নিশ্চিত সে পিছনে ফিরে তাকাবে এবং সম্মত হবে যে তার মতানৈক্য দেখানোর ক্ষেত্রে তাকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অসন্তুষ্টি প্রকাশে কোনো ক্ষতি নেই, তবে সে কীভাবে এবং কখন এটি করবে তা ওর শব্দ চয়নের ক্ষেত্রেও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সিরিজে কোনো স্নিকোমিটার বা বল-ট্র্যাকিং ছিল না, ফলে এই সিদ্ধান্ত নেও একটু কঠিন। কিন্তু যদি ভারতীয় দল অনুভব করে যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে যায়নি, তাহলে সেইগুলি কি আরও ভালভাবে পরিচালনা করা যেত? কেন ভারতীয় অধিনায়ক ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনায় গিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেন? পরিস্থিতি কীভাবে এই পর্যন্ত গড়াল? ভারতীয় দল শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারায় তাদের হতাশার কারণ হতে পারে। তবে সেটা ড্রেসিংরুমের মধ্যেই রাখা যেতে পারত। এইভাবে জনসমক্ষে নিজের রাগ বের করা সঠিক ছিল না। বিরক্তি প্রকাশে কোনো ক্ষতি নেই, কিন্তু কীভাবে এবং কখন এটি করতে হবে। পাশাপাশি শব্দ চয়নের ক্ষেত্রেও ওর আরও নির্বাচনী হওয়া উচিত ছিল।’বের করা সঠিক ছিল না। বিরক্তি প্রকাশে কোনও ক্ষতি নেই, কিন্তু কীভাবে এবং কখন এটি করতে হবে। পাশাপাশি শব্দ চয়নের ক্ষেত্রেও ওর আরও নির্বাচনী হওয়া উচিত ছিল।’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়কের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির কাছে। তবে হারমানপ্রীতের আচরণ নিয়ে কথা বলতে চাননি জ্যোতি। তবুও বলেন, ‘আমিতো ম্যাচ খেলছি। আমরা আম্পায়ারিং নিয়ে চিন্তা করিনি, উইকেট নিয়েও চিন্তা করিনি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল মাঠে শতভাগ দেওয়ার। ও যেটা করেছে সেটা তার ব্যাপার। তবে খেলোয়াড় হিসেবে তার আরও ভালোভাবে কথা বলতে পারতো। সেটা একান্তই তার ব্যাপার। তারা আউট না হলে আম্পায়ার আউট দিতেন না। সেরা আম্পায়ারই দেওয়া হয়েছে। তারা ছেলেদের ক্রিকেটের আম্পায়ারিং করেছে। আমরা তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেছি। আম্পায়ারিং খুবই ভালো হয়েছে। খেলোয়াড় হিসেবে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত আমাদের মানা উচিত।’

ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করার সময়ও দেখা যায় উত্তেজনা। ট্রফি সামনে রেখে দুই দল যখন ফটোসেশন করছে, হঠাৎই সতীর্থদের নিয়ে জায়গা ত্যাগ করেন জ্যোতি। সে সময় ভারত অধিনায়ক ‘ফ্রড’ বলেছে কি না এমন প্রশ্নে জ্যোতির উত্তর, ‘সবসময় তো সবকিছু বলা যায় না। যা হয়েছে তাতে মনে হয়নি, আমার দল নিয়ে আমার ওখানে থাকা উচিত। এমন কিছু কথা সেখানে হয়েছে। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। কিন্তু সেখানে থাকার পরিবেশ ছিল না।’