
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৮২ রানের জবাবে মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ২৩৬ রানের লিড থাকলেও আফগানিস্তানকে ফলো অন করায়নি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ২৩ ওভারেই ১ উইকেট হারিয়েই তুলে ফেলেছে ১৩৪ রান। তাতে আফগানদের সামনে লিড দাঁড়িয়েছে ৩৭০ রানের।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যে আগ্রাসন দেখাবে তার ইঙ্গিত ছিল শুরুতেই। প্রথম ওভারে ৫ রান আসলেও দ্বিতীয় ওভারেই ৩টি চার মারেন মাহমুদুল হাসান জয়। যদিও ওই ওভারের শেষ বলে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। হালকা ব্যথা পাওয়া নিজাত মাসুদের ওভারের শেষ বলটি করতে এসেছিলেন স্পিনার আমির হামজা। তার করা বল জয়ের ব্যাট স্পর্শ করে কিপারের কাছে যায়। তিনি তালুবন্দী না করতে পারলেও কোনো ভুল করেননি স্লিপে দাঁড়ানো ইব্রাহিম জাদরান। যদিও যাওয়ার আগে মাত্র ১৩ বলেই ৪টি চারে ১৭ রান করে ফেলেছিলেন জয়।
এরপর আর কোনো ভুল করেননি জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত শুরুর দিকে তেমন আগ্রাসন না দেখালেও শুরু থেকেই ব্যাটে বাউন্ডারির ফুলঝুড়ি ছোটাতে থাকেন জয়। তবে ১৮তম ওভারে ইয়ামিন আহমাদজাইর এক ওভারে ৪টি চার মেরে রান উৎসবে যোগ দেন শান্তও। ২১তম ওভারের শেষ ডেলিভারিতে ৫৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জাকির। পরের ওভারের প্রথম বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান শান্তও। দিনশেষে শান্ত ও জাকির সমান ৫৪ রানে অপরাজিত আছেন। দুজনে খেলেছেনও সমান ৬৪ বল।
প্রথম ইনিংসে করা বাংলাদেশের ৩৮২ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। দলীয় ১৮ রানে প্রথম আঘাত করেন শরীফুল ইসলাম। দলটির ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে ব্যক্তিগত ৬ রানে উইকেরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচে ফেরান। এরপর আরেক ওপেনার আব্দুল মালিককে ১৭ রানে মাঠ ছাড়া করান এবাদত। এই পেসার পরে রহমত শাহকেও (৯) তাসকিন আহমেদের ক্যাচে আউট করেন। ৩ উইকেটে ৩৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় আফগানরা।
এরপর মধ্যাহ্ন বিরতির পর দ্রুতই আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে ফেরান শরীফুল। ব্যক্তিগত ৯ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচে তাকে মাঠ ছাড়া করেন এই পেসার।
স্পিনারদের মধ্যে প্রথম আঘাত হানেন মিরাজ। মেহেদী হাসান মিরাজের বলটি আগবাড়িয়ে ডিফেন্ড করতে গিয়ে লাইন মিস করে গিয়েছিলেন নাসির জামাল। আম্পায়ার ক্রিস ব্রাউনের এলবিডাব্লুর সিদ্ধান্ত রিভিউও করেছিলেন। তবে লাভ হয়নি। উইকেটে দেখিয়েছে আম্পায়ার্স কল। রিভিউ অক্ষত আছে, তবে নাসিরকে (৩৫) ফিরে যেতে হয়েছে। মিরাজ ভাঙলেন আফসারের সঙ্গে নাসিরের ৭৩ বলে ৬৫ রানের জুটি।
একই রানে ফেরেন থিতু হওয়া আরেক ব্যাটসম্যান আফসার জাজাইও। ইবাদত হোসেনের খাটো লেন্থের বলে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে শরীফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন ৪০ বলে ৩৬ রান করা আফসার। ৪ বলের মধ্যে, কোনো রান যোগ না করতেই দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে আবারও চাপে আফগানিস্তান। ১১৬ রানে ৪ উইকেট থেকে তারা পরিণত হলো ১১৬ রানে ৬ উইকেট।
১২৮ রানের মাথায় এবাদত হোসেনের বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন আমির হামজা। শর্ট লেগে থাকা মুমিনুল ডাইভ দেন বাঁদিকে। ইবাদত পেলেন চতুর্থ উইকেট। এরপর ইয়ামিন আহমেদজাইকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। আফগানিস্তান হারায় অষ্টম উইকেট। শেষের দুই ব্যাটসম্যান নিজাত মাসুদ ও করিম জানাতকে তাইজুল ও মিরাজ। তাতে ১৪৬ রানে থামে আফগানরা।
এর আগে দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে ধসে পড়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দল আগের দিনের ৭৯ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৬২ রান নিয়ে আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল। তবে অবিশ্বাস্য ধসে চোখের পলকে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ৮৬ ওভারে ৩৮২ রানে। এদিন মাত্র ২০ রান যোগ করতে বাকি ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। আরও সংক্ষেপে বললে ইনিংসের শেষ ৯ রানে ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা। টিকেছে মাত্র ৭ ওভার।
বাংলাদেশের এই নাটকীয় ধসের পেছনে ছিলেন আফগান পেসার নিজাত মাসুদ। আগেরদিনের ১ উইকেটের সঙ্গে এদিন আরও ৪ উইকেট যোগ করে অভিষেকেই ৫ উইকেট শিকার করলেন।