বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহের দিনে সিরিজ জয়ের আনন্দ কেড়ে নিল বেরসিক বৃষ্টি। বৃষ্টি না থামায় আয়ারল্যান্ড-বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২০ মার্চ) দুপুর ২টায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগার বাহিনী নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান সংগ্রহ করে।
এরপরে ইনিংস বিরতির মধ্যেই শুরু হয় বৃষ্টি। কাট-অফের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয় রাত ৯টা ৩৩ পর্যন্ত। তবে সাড়ে আটটার মধ্যে বৃষ্টি না থামায় আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
এদিন বাংলাদেশের ইনিংসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একের পর এক চমক এসেছে। শেষ বলেও হয়েছে অনন্য রেকর্ড। একেতো মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি, তার ওপরে ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তবে এতকিছুর পরেও আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজ জেতা হলো না তামিম ইকবালদের।
আজকের ম্যাচের আগ পর্যন্ত ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৩৮। আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচেই সেই রেকর্ড গড়েছিল টাইগাররা। দুই দিনের ব্যবধানে ৩৪৯ রান করে সেটা ভেঙেও ফেলল তামিম ইকবালের দল। প্রায় আড়াই দশকের ওয়ানডে পথযাত্রায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান এখন এটিই।
এদিকে প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে বিধ্বংসী ক্রিকেট খেলেন মুশফিক। ছয় নম্বরে নেমে তার দুর্দান্ত ফিনিশিংয়েই বড় সংগ্রহ পায় টাইগাররা। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৩ বলে অর্ধশতক করেন মুশফিক। ফিফটির পরেও থামেনি তার ব্যাট। ২৭ বলে তুলে নেন পরের ৫০ রান। সবমিলিয়ে ৬০ বল থেকে অপরাজিত ১০০ রান করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। যার মধ্যে ছিল দুটি ছক্কা ও ১৪টি চারের মার।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে আইরিশ পেসারদের বিপক্ষে রান খরায় পড়েন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ৪ রান তুলতে পারেন তারা। অবশ্য এরপর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তামিম-লিটন। ১০ ওভারে স্কোর দাঁড় করান ৪২ রানে ।
তামিম ৩১ বলে ২৩ রান করে রান আউট হলেও ক্রিজে স্থায়ী হন লিটন। সাত ইনিংস পর তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি। কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে লিটন ৭১ বলে সমান তিন চার ও ছক্কার মারে খেলেন ৭০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
দলীয় ১৪৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভাঙে শান্ত-লিটনের ১০১ রানের অনবদ্য জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে আইরিশদের বিপক্ষে যা টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের জুটি। লিটনের পর শান্তর সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়ে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব আল হাসান। ১৯ বলে ১৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
অপরদিকে শান্ত তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি। ৭৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কার মারে ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রান করে গ্রাহাম হিউমের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।
তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিক ও হৃদয় সে চাপ সামলে উল্টো চড়াও হন আইরিশ বোলারদের ওপর। দুজনের জুটিতে আসে ১২৮ রান। দলীয় ৩১৮ রানে আউট হন হৃদয়। ৩৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কার মারে ৪৯ রান করে অ্যাডায়েরের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। এর আগে এ ব্যাটার নিজের অভিষেক ম্যাচে ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেন।
হৃদয় আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়লেও অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মাত্র ৬০ বলে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। যা বাংলাদেশের হয়ে ৫০ ওভারের ম্যাচে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। মুশফিকের আগে টাইগারদের হয়ে ২০০৯ সালে ৬৩ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব।
আইরিশদের বোলারদের পক্ষে ৫৮ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তুলে নেন গ্রাহাম হিউম। এছাড়া একটি করে উইকেট নিজেদের পকেটে পুরেন মার্ক অ্যাডায়ার ও কার্টিস ক্যাম্ফার।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৮৩ রানের বড় জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ মাঠেই আগামী ২৩ মার্চ হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৪৯/৬ (তামিম ২৩, লিটন ৭০, শান্ত ৭৩, সাকিব ১৭, হৃদয় ৪৯, ইয়াসির ৭, মুশফিক ১০০*, তাসকিন ১*; মার্ক অ্যাডায়ার ১০-১-৬০-১, গ্রাহাম হিউম ১০-২-৫৮-৩, কার্টিস ক্যাম্ফার ১০-০-৭৩-১, ম্যাথু হামফ্রেয়েস ৭-০-৫৯-০, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ৯-০-৬৮-০ ও হ্যারি টেক্টর ৪-০-২৮-০)।
ফল: বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত।