রংপুর রাইডার্সের জয়ে কোয়ালিফায়ারের চার দল চূড়ান্ত হয়ে গেল। একই সঙ্গে বিদায় নিল ঢাকা ডমিনেটর্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
ছোট লক্ষ্যে দারুণ ফিফটি করলেন নুরুল হাসান সোহান। তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন রনি তালুকদার। রংপুর রাইডার্সকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়ে আউট হলেন দুজন। সেখান থেকে শেষ চেষ্টা করলেন ঢাকা ডমিনেটর্সের অধিনায়ক নাসির হোসেন। তার স্পিনে উত্তেজনা ছড়াল ম্যাচে। তবে বদলায়নি ঢাকার ভাগ্য। শেষের নাটকীয়তা ছাপিয়ে ম্যাচ জিতে সেরা চারে নাম লেখাল রংপুর।
স্রেফ ১৩০ রানের লক্ষ্যে ২ উইকেটেই ১০২ রান করে ফেলেছিল রংপুর। সেখান থেকে ২২ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় তারা। সবার শেষে বোলিংয়ে এসে ৪ উইকেট নেন নাসির।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ রান। মুক্তার আলি পারেননি তেমন কিছু করতে। তিন বলেই ম্যাচ জিতে নেয় রংপুর।
মুক্তারের প্রথম বলে ১ রান নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। পরের বলে ক্যাচের মতো উঠলেও খালি জায়গায় পড়ায় বেঁচে যান হারিস রউফ, দৌড়ে নেন ২ রান। তৃতীয় বলে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ শেষ করেন পাকিস্তানি তারকা।
এই জয়ে ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করেছে রংপুর। তাদের জয়ে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। ১১ ম্যাচে ঢাকার ঝুলিতে আছে ৬ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম ৯ ম্যাচে পেয়েছে স্রেফ ৪ পয়েন্ট।
ঢাকার বিপক্ষে নাটকীয় জয়ে অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন সোহান। চার নম্বরে উঠে এসে ৩৩ বলে খেলেন ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস। ৮৩ ম্যাচের বিপিএল ক্যারিয়ারে এটি তার প্রথম ফিফটি।
রংপুরের পাকিস্তানি তারকা শোয়েব মালিকের ক্যারিয়ারের ৫০০তম টি-টোয়েন্টি ছিল এই ম্যাচটি। তবে রাঙাতে পারেননি তিনি। ৫ বলে ৭ রান করে আউট হন মালিক।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় রংপুরের শুরুটা প্রত্যাশামাফিক হয়নি। শরিফুলের দ্বিতীয় বলে কট বিহাইন্ড হন মোহাম্মদ নাইম শেখ। পরের ওভারের প্রথম বলে শেখ মেহেদি হাসানকে এলবিডব্লিউ করেন শরিফুল।
ইনিংস শুরুর ১৩ বলেই ২ উইকেট হারিয়ে খানিক ব্যাকফুটে চলে যায় রংপুর। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে চার নম্বরে উঠে আসেন অধিনায়ক সোহান। রনি তালুকদারকে নিয়ে গড়েন প্রতিরোধ।
দুজনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৫ বলে আসে ৯৩ রান। শুরু থেকেই সোহান ছিলেন আগ্রাসী। অন্য প্রান্তে রয়ে সয়ে খেলে অধিনায়ককে সঙ্গ দেন রনি।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আমির হামজা হোটাককে জোড়া চার মারেন সোহান। মুক্তার আলির বলে মারেন ইনিংসের প্রথম ছক্কা। ওই ওভারে আরও দুই চারে ১৬ রান তোলেন রংপুর অধিনায়ক।
সৌম্যর করা ১২তম ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা মারেন কিপার-ব্যাটসম্যান। প্রথম ছক্কায় পৌঁছে যান পঞ্চাশে। ৫৭ ইনিংস পর টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ফিফটি করতে খেলেন ৩১ বল।
পঞ্চাশের পর বেশি দূর যাওয়া হয়নি রংপুর অধিনায়কের। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম বলেই তাকে ফেরান শরিফুল। কয়েকবারের চেষ্টায় সোহানের ক্যাচ নেন সৌম্য।
সোহান ফেরার আগের ওভারে নাসির হোসেনের বলে আউট হন রনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৯ বলে ৩৪ রান।
দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ধস নামে রংপুরের ইনিংসে। ১২ ওভারে ২ উইকেটে ৯৮ থেকে পরের ৭ ওভারে স্রেফ ২৬ রানে ৬ উইকেট হারায় তারা।
নাসিরকে ছক্কা মেরে পরের বলেই আউট হন শোয়েব মালিক। মোহাম্মদ নাওয়াজ (৯ বলে ১), শামীম হোসেন (১১ বলে ৮) ও রকিবুল হাসান (১ বলে ০) ফিরে যান অল্পেই।
হঠাৎ রোমাঞ্চ জাগা ম্যাচে শেষ ওভারে বাকি থাকা ৫ রানের সমীকরণ তিন বলেই মিলিয়ে নেন ওমরজাই ও হারিস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই চার মারেন ঢাকার ওপেনার মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু এটিকে উড়ন্ত সূচনায় রুপ দিতে পারেননি তারা। ওই ওভারেই শামীমের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রানআউট হন মিঠুন।
নিজেকে প্রমোশন দিয়ে তিন নম্বরে নেমে নাসিরও পাননি রানের দেখা। ওমরজাইয়ের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন ঢাকার অধিনায়ক। ৩ বলে করেন ২ রান।
বাঁহাতি ওপেনার সৌম্যকেও ফেরান ওমরজাই। উইকেটে অস্বস্তিময় সময়ের অবসান ঘটিয়ে কট বিহাইন্ড হন ১২ বলে ৩ রান করা সৌম্য। স্রেফ ১১ রানে টপ-অর্ডারের তিনজনকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ঢাকা।
সেখান থেকে ইনিংসকে ভদ্রস্থ করেন পরের তিন ব্যাটসম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন, অ্যালেক্স ব্লেক ও আরিফুল হক। ১টি করে চার-ছয়ে ২৩ রান করেন মামুন। তবে ২৭ বল খেলে ফেলেন বাঁহাতি তরূণ।
ব্লেক ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও ১১ বলে ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি। আরিফুল ২ চার ও ১ ছয়ে খেলেন ২৬ বলে ২৯ রানের ইনিংস।
শেষ দিকে শরিফুল ১১ ও হামজার ১৫ রানের সৌজন্যে ৮ উইকেটে ১৩০ রানে পৌঁছায় ঢাকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ডমিনেটর্স: ২০ ওভারে ১৩০/৮ (মিঠুন ৫, সৌম্য ৩, নাসির ২, মামুন ২৩, ব্লেক ১৮, আরিফুল ২৯, মুক্তার ৭, শরিফুল ১১, হামজা ১৫*, আরাফাত ৩*; মেহেদি ৪-০-৩০-১, ওমরজাই ৪-০-২২-২, হারিস ৪-০-১৯-১, হাসান ৪-০-২৮-১, রাকিবুল ৩-০-২৭-০, নাওয়াজ ১-০-১-১)
রংপুর রাইডার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৩৩/৮ (নাইম ০, রনি ৩৪, মেহেদি ৪, সোহান ৬১, মালিক ৭, নাওয়াজ ১, ওমরজাই ৭*, শামিম ৮, রকিবুল ০, হারিস ৭*; শরিফুল ৪-১-১৮-৩, আরাফাত ৪-০-২০-০, মোহর ১-০-৯-০, হামজা ৪-০-২৫-০, মুক্তার ১.৩-০-২৩-০, সৌম্য ১-০-১৮-০, নাসির ৪-০-২০-৪)
ফল: রংপুর রাইডার্স ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নুরুল হাসান সোহান
তথ্য সূত্রঃ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট