মরক্কোকে বিদায় করে ফাইনালে ফ্রান্স

দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময় চেষ্টা করেও যা করতে পারেনি মরক্কো, বদলি হিসেবে মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে সেটিই করে ফেললেন ফ্রান্সের রান্দাল কোলো মুয়ানি। উসমান দেম্বেলের বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই গোল পেয়ে গেলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।

আগের পাঁচ ম্যাচে একটা মাত্র গোল হজম করেছিল মরক্কো। কানাডার বিপক্ষে ম্যাচে সেই গোলটাও ছিল আত্মঘাতী। দলকে বিপদ মুক্ত করতে গিয়ে মরক্কোরই ডিফেন্ডার আগুয়ের্ড বল ঢুকিয়ে দেন নিজেদের জালে। মানে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, স্পেন ও পর্তুগাল—এই পাঁচ দলের কোনো ফুটবলারই মরক্কোর জাল খুঁজে পাননি। কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর কতটা শক্তিশালী এবং জমাট, সেটি এই তথ্যই স্পষ্ট। তাই সেমিফাইনালের আগে এমনটাই বলাবলি হচ্ছিল, লড়াইটা হবে মরক্কোর রক্ষণের সঙ্গে ফ্রান্সের আক্রমণভাগের। হয়েছেও তাই। আর তাতে জয় হয়েছে ফ্রান্সের আক্রমণ ভাগেরই। মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফরাসিরা উঠেছেন ফাইনালে।

 

মজার ব্যাপার হলো, আগের পাঁচ ম্যাচে তাদের রক্ষণে মুহূর্তের জন্যও চিড় ধরেনি, ফরাসি ৫ মিনিটেই মরক্কোর সেই রক্ষণে তৈরি করেন বড় এক দরজা। যে দরজা দিয়ে আদায় করে নেয় গোল। যদিও মরক্কোর বিপক্ষে ফ্রান্সের হয়ে প্রথম গোলটা করেন একজন ডিফেন্ডার-থিও হার্নান্দেজ। তবে গোলটির উত্স ছিলেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরাই।

আরো একটু স্পষ্ট করে বললে আঁতোইন গ্রিজমান ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। গ্রিজমান এমবাপ্পেকে লক্ষ্য করে পাস বাড়ান। রাফায়েল ভারানের পা ছুঁয়ে পাসটি ঠিকই এমবাপ্পের কাছে যায়। ফরাসি তারকা বল ধরে মরক্কোর দুজনকে কাটিয়ে শট নেন। কিন্তু তার শট মরক্কোর এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে আবার তার কাছেই ফিরে আসে। এমবাপ্পে আবারও শট নেন। এবারও তার শট মরক্কোর এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে চলে যায় পোস্টের ডান দিকে। যেখানে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরাসি ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজ। তবে বল বাউন্স করে অনেকটাই ওপরে উঠে গিয়েছিল। কোনাকুনি অবস্থান থেকে উঁচু সেই বল জালে পাঠিয়ে দেওয়াটা ছিল কঠিন। হার্নান্দেজ কঠিন কাজটা করেছেন সহজেই, পা উঁচিয়ে অসাদারণ শটে।

এরপর ৭৯ মিনিটে আবারও মরক্কোর জমাট রক্ষণে গোলের দরজা তৈরি করেন ফরাসিরা। এবারও মূল কাজটা করেন এমবাপ্পে। মার্কাস থুরামের সঙ্গে পাস খেলে খেলে তিনি বল নিয়ে ঢুকে পড়েন মরক্কোর বক্সে। বক্সের ভেতরেও মরক্কোর দুই-তিন জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন। কিন্তু তার শট মরক্কোর আরেক ডিফেন্ডারের পা লেগে খানিকটা দিক বদল করে চলে যাচ্ছিল। তাতে আলতো করে পা লাগিয়ে বল মরক্কোর জালে জড়িয়ে দিয়ে রান্ডাল কোলো মুয়ানি ঢুকে যান ইতিহাসের পাতায়।

উসমানে দেম্বেলের পরিবর্তে তার মাঠে নামার বয়স এক মিনিটও হয়নি। বলেও পা লাগাতে পারেনি। মাঠের মাঝরেখা দিয়ে মাঠে নেমে দৌড়ে মরক্কোর রক্ষণে পৌঁছেই ঘটিয়ে ফেলেন কাণ্ডটা। মাঠে নামার মাত্র ৪৪ সেকেন্ডের মাথায় নিজের প্রথম টাচেই করেন গোল! এই বিশ্বকাপে বদলি হিসেবে সবচেয়ে দ্রুত গোলের রেকর্ড এটাই। সব মিলে বদলি হিসেবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম গোল এটি! বদলি নেমে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম গোলের রেকর্ডটি ডেনমার্কের সাবেক তারাক অ্যাবে সান্ডের দখলে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার ২৬ সেকেন্ডের মাথায় গোলটি করেছিলেন তিনি।