স্টেডিয়াম নাইন সেভেন ফোর বিশ্বসেরা আক্রমণভাগের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে ভাসল গোল বন্যায়। পর্তুগালকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয়া দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় মাতল ব্রাজিল। সন ইয়ং-মিনদের বিপক্ষে ৪-১ গোলের দুর্দান্ত জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল নেইমার-রিচার্লিসনরা।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতে ৯০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলেও ব্রাজিলের শেষ আট নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মূলত প্রথমার্ধের ৩৫ মিনিটেই। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা নেইমারকে পেয়েই যেন চেনা ছন্দের ব্রাজিলকে দেখল ফুটবল বিশ্ব।
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই ভিনিসিউস-রাফিনিয়া-রিচার্লিসনরা মেতে উঠলেন ভয়ঙ্কর সুন্দর ফুটবলে। গোলও মিলতে থাকল একের পর এক। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে সবশেষ দেখায় গুণে গুণে পাঁচ গোল দিয়েছিল ব্রাজিল। সেই দলটির বিপক্ষে বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি হতেই গেল জুনের ম্যাচটা যেখানে শেষ করেছিল ব্রাজিল, আজ যেন শুরু করল সেখান থেকেই।
বিশ্বকাপে এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে চার গোল করল ব্রাজিল। ১৯৫৪ আসরে মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম এমন কিছু করেছিল তারা। যদিও প্রথমার্ধের চার গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান আর বাড়াতে পারেনি ব্রাজিল। ইনজুরির শঙ্কা থাকায় দ্বিতীয়ার্ধে ঝুঁকি নিতে চাননি ব্রাজিল কোচও। সেরা তারকাদের উঠিয়ে নিয়েছিলেন একে একে।
অন্যদিকে গোল শোধে মরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া প্রথমার্ধে ছন্নছাড়া থাকলে দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি আক্রমণ শানিয়েছে। বিশ্বসেরা গোলকিপার অ্যালিসন বেকারের দুর্ভেদ্য দেয়ালও একবার ভাঙতে পেরেছে তারা। তবে সেটিও ভাগ্য ফেরাতে যথেষ্ট ছিল না।
সোমবার (৫ নভেম্বর) স্টেডিয়াম নাইন সেভেন ফোরে ম্যাচের সপ্তম মিনিটে রাফিনিয়ার দুর্দান্ত পাস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে সহজেই বল জালে জড়ান ভিনিসিউস। প্রায় সাত মাস পর আন্তর্জাতিক গোলের দেখা পান রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড।
শুরু থেকেই এলোমেলো ফুটবল খেলা সন হিয়ং-মিনদের বিপক্ষে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে বেশি সময় লাগল না ব্রাজিলের। ১১ মিনিটে নিজেদের বিপদসীমায় রিচার্লিসনকে ফাউল করে কোরিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়। পেনাল্টি যায় ব্রাজিলের পক্ষে।
নেইমারের ঠাণ্ডা মাথায় নেয়া পেনাল্টিটা ঠেকানোর সাধ্যই ছিল না কোরিয়ান গোলরক্ষক কিম সিয়াং-গুইয়ের। ব্রাজিল এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেই গোল পেলেন নেইমার।
গ্রুপপর্বে প্রথম ম্যাচে রিচার্লিসনের দুই গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। শেষ ষোলোর ম্যাচে আবারও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন। কোরিয়ার রক্ষণদুর্গ ভেঙে তার দারুণ এক গোলে ২৯ মিনিটে ব্রাজিল ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়।
এক হালি পূর্ণ করতে ব্রাজিলের সময় লাগল মাত্র ৩৫ মিনিট। কোরিয়ার জালে চতুর্থ গোল করলেন লুকাস পাকেতা। কাউন্টার অ্যাটাকে দারুণ ফুটবলে কোরিয়ার জালে চতুর্থ গোল করতে একটুও বেগ পেতে হয়নি। ভিনিসিউসের ক্রস থেকে ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ডান পায়ে জোড়ালে শটে রক্ষণ ভাঙেন পাকেতা।
শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোল ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। আরেকটি রূপকথা হলো না দক্ষিণ কোরিয়ার। এদিকে, একই রাতে এশিয়ার দুটি দেশ বিদায় নিল বিশ্বকাপ থেকে। রাতের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে স্বপ্নভঙ্গ হয় জাপানের। এবার ব্রাজিলের সামনে দাঁড়াতেই পারল না সন ইয়ং-মিনের কোরিয়া।