মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম সাক্ষী হলো দারুণ এক জয়ের। সাকিব-এবাদত যে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন তার ওপরে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ-মুস্তাফিজুর রহমানের বীরত্বে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয়।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ রোববার (৪ ডিসেম্বর) প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে ১ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে সাকিব আল হাসান ও এবাদত হোসেনের তাণ্ডবে মাত্র ১৮৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ৫ উইকেট শিকার করেন সাকিব। এবাদত নেন ৪ উইকেট।
জবাব দিতে নেমে লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ হঠাৎ পথ হারায়। তবে শেষ উইকেটে মিরাজ-মুস্তাফিজ জুটি অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয় টাইগারদের। দুজনের । ৫৪ রানের জুটিতে বধ হয় ভারত। জয়ের বন্দরে এসে তরী ডুবানো বাংলাদেশের এ যেন উল্টোযাত্রা দেখা গেল আজ।
১৮৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংস ওপেন করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন দীপক চাহার। ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে রানের খাতা খুলতে দেননি তিনি। প্রথম বলেই স্লিপে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত।
দলীয় ২৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। সিরাজের বলে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ধরা দেন বিজয়। আগের ওভারে দীপক চাহারের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন, রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান এনামুল। বল যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে। পরের ওভারে আর বাঁচলেন না। মোহাম্মদ সিরাজকে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ২৯ বলে ১৪ রান সংগ্রহ করেন বিজয়। মারেন ২টি চার।
দ্রুত দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে। ক্রিজে স্বাচ্ছন্দে ব্যাট করছিলেন দুজনে। যতক্ষণ ছিলেন মনে হচ্ছিল, সহজ জয়ই পাবে টাইগাররা। কিন্তু, দলীয় ৭৪ রানে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন লিটন। তার ৬৩ বলে খেলা ৪১ রানের ইনিংসে আছে ৩টি চার ও ১টি ছয়ের মার।
লিটনের বিদায়ের পর ভালোই খেলছিলেন সাকিব। ম্যাচ রেখেছিলেন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই। দলীয় ৯৫ রানে বিদায় নেন সাকিবও। ৩৮ বলে ২৯ রান করে বিদায় নেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারি।
এরপর উইকেটে এসে শুরু থেকেই নড়বড়ে রিয়াদ-মুশফিক। টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে চাপ বাড়াচ্ছিলেন দলের ওপর। ২৩ তম ওভার থেকে ৩৩তম ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি তারা। টানা দুই ওভারে বিদায় নেন দুজনই। শার্দুল ঠাকুরের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হন টেস্ট মেজাজে ব্যাট করা রিয়াদ। ৩৫ বল খেলে ১৪ রান করেছেন সাইলেন্ট কিলার রিয়াদ। মারতে পারেননি কোনো বাউন্ডারি।
এর ঠিক পরের ওভারে মুশফিকুর রহিমের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন মোহাম্মদ সিরাজ। ৪৫ বল খেলে ১৮ রান করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তার ইনিংসেও ছিল না কোনো চার বা ছয়ের মার।
এরপর মড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে। কুলদীপ সেন ফেরান আফিফ-এবাদতকে। হাসান মাহমুদকে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ। শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন মিরাজ। মুস্তাফিজকে নিয়ে লড়াই করতে থাকেন। দুজনের ৫১ রানের জুটিতে অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ ৯ ওভার বোলিং করে ৪৩ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট আর ব্যাট হাতে অপরাজিত ৩৮ রান করে ম্যাচ জেতান। ম্যাচসেরা হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগে মিরপুরে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা হয় সাবধানী। মুস্তাফিজের করা প্রথম ওভারে আসে ১ রান। চতুর্থ ওভারেই মিরাজকে আক্রমণে আনেন লিটন দাস। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান এই স্পিনার দেন পরের ওভারেই। স্পিন ভেল্কিতে বোকা বনে গিয়ে বোল্ড হন শিখর ধাওয়ান। পাওয়ার প্লেতে টিম ইন্ডিয়া করে ৪৮ রান। এরপরই দৃশ্যপটে সুপার সাকিব। এক বলের ব্যবধানে ফেরান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ভারতীয় কাপ্তান রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলিকে। সেখানেই থামেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ভারতের বিপক্ষে ১০ ওভার বোলিং করে ৩৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব।
শুধু সাকিবই নন, বোলিংয়ে আগুন ঝরিয়েছেন এবাদত হোসেনও। ভারতের চার ব্যাটারকে তুলে নিয়েছেন তিনি। ৮.২ ওভার বোলিং করে ৪৭ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
ভারতের হয়ে কেএল রাহুল বাদে কেউই দাঁড়াতে পারেননি। রাহুলের ৭০ বলে ৭৩ রান ভারতকে ১৮৬ রানের পুঁজি গড়তে সহায়তা করে। রাহুল ছাড়াও রোহিত শর্মা করেছেন ২৯ রান এবং আইয়ার করেছেন ২৪ রান।