কাতার বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিয়ে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলেছে। গ্রুপ \’জি\’তে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যাসেমিরোর একমাত্র গোলে জয় পায় শিরোপাপ্রত্যাশী দলটি। বিশ্বকাপে সুইসদের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় ব্রাজিলের। দলের সেরা তারকা নেইমার ইনজুরির কারণে খেলতে না পারায় এ ম্যাচে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতে।
গতকাল সোমবার (২৮ নভেম্বর) স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়লাভ করে ব্রাজিল। সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে সাম্বার দেশ। তবে এদিন তিতে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলান দলকে। রক্ষণভাগে রাইটব্যাক দানিলোর ইনজুরির কারণে এদিন শুরু করেন এডার মিলিতাও। মধ্যমাঠে ব্রাজিল খেলিয়েছে তিন সেন্টার মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো, ফ্রেড ও লুকাস পাকুয়েতাকে। এর মধ্যে ক্যাসেমিরোর দায়িত্ব ছিল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে রক্ষণভাগের সামনে অতিরিক্ত শিল্ড হিসেবে কাজ করা।
বাকি দুই মিডফিল্ডার ফ্রেড ও পাকুয়েতার কাজ ছিল সুইসদের অনবরত প্রেস করে সুইজারল্যান্ডের অর্ধে ফাঁকা জায়গা বের করে সামনে রিচার্লিসনকে বল দেওয়া। সেই সঙ্গে দুই উইঙ্গার রাফিনিয়া ও ভিনিসিউসের কাজও ছিল বক্সে ক্রস ফেলা। তবে ভিনিসিউস সুযোগ পেলেই ড্রিবলিং করে বক্সে ঢুকে রিচার্লিসনের সঙ্গে সাপোর্ট স্ট্রাইকারের দায়িত্বও পালন করছিলেন।
অন্যদিকে সুইসরা চেষ্টা করেছে মাঝমাঠে খেলা বানিয়ে আক্রমণে উঠতে। সে সঙ্গে ব্রাজিলের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত কাউন্টার অ্যাটকে উঠতে। কিন্তু সুইসদের ধীরগতির খেলার কারণে দ্রুত কাউন্টারে ওঠা সম্ভব হয়নি।
প্রথমার্ধে ব্রাজিল বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। সার্বিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করা রিচার্লিসন এদিন কড়া মার্কিংয়ে থাকায় খুব বেশি প্রভাব রাখতে পারেননি খেলায়। সেই সঙ্গে মিস করেছেন সহজ সুযোগ। ভিনিসিউস জুনিয়রও মিস করেছেন সুযোগ।
সুইজারল্যান্ড ব্রাজিলের ঘন ঘন বল হারানো বা ভুল পাসের ফলে পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। নেইমারের অবর্তমানে কিছুটা আক্রমণাত্মক ভূমিকা পাওয়া লুকাস পাকুয়েতা বারবার হারিয়েছেন বল, যা বিপদের কারণ হতে পারত।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কোচ তিতে তার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন। পাকুয়েতার জায়গায় নামেন রদ্রিগো। এই বদলই বলে দেয় যে, দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল জয়ের জন্য আরও বেশি আক্রমণাত্মক খেলবে। বিবর্ণ ফ্রেড ও রিচার্লিসনের জায়গায় তিতে ব্রুনো গুইমিরেস ও গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে নামান। রাইট উইঙে গতি আনতে রাফিনিয়াকে তুলে নামান অ্যান্টনিকে। এই পরিবর্তনগুলোর পর বদলে যায় ব্রাজিলের খেলা। আগের চেয়ে বাড়ে গতি। সেই সঙ্গে মধ্যমাঠে নিয়ন্ত্রণও পুরোপুরি চলে আসে ব্রাজিলের দখলে।
দ্বিতীয়ার্ধে কাউন্টার অ্যাটাকেও সাফল্য পায় ব্রাজিল। সুযোগ পেলেই মাঝমাঠ থেকে পাওয়া পাস নিয়ে দ্রুত উইং ধরে উঠেছেন ভিনিসিউস আর অ্যান্টনি। এভাবে পেয়ে গিয়েছিল গোলের দেখাও। ক্যাসেমিরো সুইজারল্যান্ডের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে পাস দেন ভিনিসিউসকে। গতিময় দৌড়ে বল নিয়ে দ্রুত সুইজারল্যান্ডের বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন।
একমাত্র মার্কার ওয়াইডেমার তাকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একাকী গোলরক্ষককে পেয়ে দারুণ এক গোল করেন ভিনি। তবে গোলটি বাতিল হয় অফসাইডের জন্য। ভিএআরে দেখা যায়, গোলটির জন্য যখন দৌড় শুরু করেন তখন অফসাইড পজিশনে ছিলেন রিচার্লিসন। বলে তার কোনো স্পর্শ না থাকলেও আক্রমণের অংশ হওয়ায় গোলটি বাতিল হয়।
অবশেষে ৮৩ মিনিটে গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। সেলেকাওদের দুর্দান্ত আক্রমনভাগকে মার্ক করতে গিয়ে সুযোগসন্ধানী ক্যাসেমিরোকে অরক্ষিত রেখেছিল তারা। ডিবক্সে জায়গা পেয়ে হাফ ভলি শটে জয়সূচক গোলটি করেন তিনি।
কঠিন ম্যাচে নেইমারের অভাব বেশ ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে। সৃষ্টিশীল আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের অভাব পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন লুকাস পাকুয়েতা। তবে রদ্রিগো-অ্যান্টনিদের গতি ও ড্রিবলিং-দুর্দান্ত স্কিল সুযোগ করে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত।