ভারতের সঙ্গে অঘটনে জয়ের হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে চায় বাংলাদেশ

সেমিফাইনালে আশা বাঁচিয়ে রাখতে শক্তিশালী ভারতকে হারানোর লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মাঠে নামছে। টাইগাররা নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত। সেই সঙ্গে ভারতকে হারিয়ে টাইগাররা নিতে চায় টি-টোয়েন্টিতে জয়ের হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ।

দিবা-রাত্রির ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার দুপুর ২টায় অ্যাডিলেড ওভালে শুরু হবে এবং সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস চ্যানেল।

এ ম্যাচে হেরে গেলে গাণিতিকভাবে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে বাদ পড়বে বাংলাদেশ। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রাথমিকভাবে দুই ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য পূরণের পর এবার টাইগারদের চোখ সেমিফাইনালে।

২০০৭ সালের পর টুর্নামেন্টের মূল পর্বে চলতি আসরের আগে কখনোও কোন ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে এবারের বিশ্বকাপে দুটি জয় অবশ্যই টাইগারদের জন্য বড় পাওয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই নেদারল্যান্ডসকে ৯ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে জয়ের খড়া কাটে বাংলাদেশের।

এরপরের ম্যাচে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে মুদ্রার অন্য দিকটি দেখে ফেলে টাইগাররা। রান বিবেচনায় যা ছিল নিজেদের টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বড় হার। পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ বল পর্যন্ত খেলে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারায় সাকিবের দল।

শেষ বলে জিতলেও রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের পর দুর্দান্ত জয়ে মানসিকভাবে চাঙ্গা বাংলাদেশ শিবির। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই ভেন্যুতেই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল টাইগাররা।

বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কোন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয় পাওয়াটা সবসময়ই আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে। আমরা স্বস্তি বোধ করছি। যদিও ভারত বড় দল। দল হিসেবে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে জয় অসম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান স্কোয়াডের মধ্যে কেবল আমি ও তাসকিন এই ভেন্যুতে ২০১৫ বিশ্বকাপের সদস্য ছিলাম। এখানে ইংল্যান্ডকে হারানোর মত ভালো স্মৃতি আছে আমাদের। এটি একটি ভাল স্মৃতি। স্বাভাবিকভাবে এটি আমাদের সাহায্য করবে।’

টি-টোয়েন্টিতে ১১বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এরমধ্যে ১০ বার জিতেছে ভারত। একবার জয় আছে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় সবগুলোই জিতেছে ভারত।

২০১৬ বিশ্বকাপে দুই দলের মধ্যকার শেষ ম্যাচটি ছিল ঘটনাবহুল। ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে মাত্র ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। শেষ মুর্হূতে সিনিয়র দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বড় শট খেলায় বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটি ফসকে যায়।

এরপর ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু তার আগে বেশিরভাগ সময়ই ভারতের বিপক্ষে কোন ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি টাইগাররা।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে তাই বাস্তবসম্মত কথাই বলেছেন সাকিব। তার মতে ভারতের বিপক্ষে জিতলে সেটি অঘটন হবে। সাকিব বলেন, ‘ভারত ফেভারিট দল, এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে তারা। আমরা ফেভারিট নই, আমরা এখানে বিশ্বকাপ জিততে আসিনি।’

বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আরও বলেন, ‘আমরা খুব ভালো করেই জানি, ভারতের বিপক্ষে এ ম্যাচ জিতলে এটিকে অঘটন বলা হবে। আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করবো এবং অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করবো।’

অন্যদিকে বাংলাদেশকে সমীহ করেই ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় জানিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি খেলায় ফেভারিট বলে কিছু নেই। ক্রিকেটের অন্যতম কিংবদন্তি দ্রাবিড় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা ভালো দল। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে কেউই ফেভারিট নয়। ম্যাচের দিন যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাই দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে বা বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ম্যাচ জিততে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে।’

সব মিলিয়ে ১৪২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে ৪৯টি ম্যাচে জিতেছে, ৯০টিতে হেরেছে টাইগাররা। বাকি তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এবার ভারতের বিপক্ষে জিতে টি-টোয়েন্টিতে জয়ের হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে চায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দল: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী চৌধুরি, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ ও এবাদত হোসেন।

ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল (সহ-অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, সুর্যকুমার যাদব, দীপক হুদা, ঋশভ পান্থ (উইকেটরক্ষক), দিনেশ কার্তিক (উইকেটরক্ষক), হার্দিক পান্ডিয়া, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, মোহাম্মদ সামি, যুজবেন্দ্রা চাহাল, অক্ষর প্যাটেল, ভুবেনশ্বর কুমার, হার্শাল প্যাটেল ও আর্শদিপ সিং।