নিজেদের সম্মানই যেন ফিরিয়ে আনলো ভারত। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে কখনও হারের রেকর্ড ছিলো না ভারতের। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে সেই ধারার ছেদ করে পাকিস্তান। এবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে যেন সেই হারের প্রতিশোধই নিলো ভারত। সঙ্গে বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে আবারও জয়ের ধারায় ফিরলো ভারত।
টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ১৬০ রানের টার্গেট ব্যাট করতে নেমে। শান মাসুদ ও ইফতিখারের অর্ধশতকে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
১৬০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ওভারের ৫ম বলে দলীয় ৭ রানে লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় ভারত। পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ্ এর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান রাহুল। ৮ বলে ৪ রান করে আউট হন তিনি। এরপর ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দলীয় ১০ রানে আবারও উইকেট হারায় ভারত। ৪ বলে ৭ রান করে আউট হন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। হারিস রউফের বলে রোহিতের ব্যাটের কোনায় লেগে বলে চলে যায় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতিখার আহমেদের হাতে। দুর্দান্ত ক্যাচে রোহিতকে বিদায় করেন ইফতিখার।
এরপর বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব মিলে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলীয় ২৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত। ১০ বলে ১৫ রান করে হারিস রউফের দ্বিতীয় শিকার হন সূর্যকুমার যাদব। রউফের করা বলে উইকেটের পেছেনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সূর্যকুমার। শেষ পর্যন্ত ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩১ রান সংগ্রহ করে ভারত।
ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হন ক্রিজে আসা অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল। ৩ বলে ২ রান করে ফিরে যান প্যাটেল। এরপর কোহলি ও পান্ডিয়া মিলে দেখে শুনে খেলতে থাকেন। ১০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান সংগ্রহ করে ভারত।
ইনিংসের ১২ তম ওভারের হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন কোহলি ও পান্ডিয়া। মোহাম্মদ নেওয়াজ বলে হার্দিক পান্ডিয়া ২ টি ও কোহলি ১টি ছক্কা মেরে ২০ রান তোলেন এই দুই ব্যাটার।
শুরুর দিকের পাকিস্তানের বোলারদের তোপ সামলে কোহলি-পান্ডিয়া মিলে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে নিতে থাকেন ভারতকে। এই দুই ব্যাটারের জুটিতে ১৫ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ১০০ রান তোলে ভারত।
শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ইনিংসের ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ৪২ বলে নিজের ফিফটি তুলে নেন কোহলি। ওই ওভারের তৃতীয় বলে শাহিনকে আরো একটি বাউন্ডারি মারেন কোহলি। ওভারের শেষ শাহিনের বলকে একেবারে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান হার্দিক পান্ডিয়া। এই ওভার থেকে ১৭ রান নিয়ে জয়ের দিকেই এগিয়ে যায় ভারত।
শেষ দুই ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ৩১ রান। ইনিংসের ১৯তম ওভারে বল করতে আসেন পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফ। সেই ওভারে কোহলি দুই ছক্কায় নেন ১৫ রান। শেষ ওভারের ভারতের প্রয়োজন হয় ১৬ রান। শেষ ওভারে স্পিনার মোহাম্মদ নেওয়াজের হাতে বল তুলে দেন বাবর আজম। ওভারের প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়াকে আউট করে পাকিস্তানি ভক্তদের জয়ের স্বপ্ন দেখান নেওয়াজ।
এরপর ক্রিজে এসে দ্বিতীয় বলে ১ রান নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইক দেন দিনেশ কার্তিক। তৃতীয় বলে ২ রান নেন কোহলি। এরপর পরের বলে ছক্কা মেরে দেন কোহলি। পরে আম্পায়ার নো বলের ইশারা দেন। ফলে ৩ বলে ৬ রান প্রয়োজন হয়।
পরের বল ওয়াইড করলে ৩ বলে ৫ রান প্রয়োজন হয় ভারতের। চতুর্থ বলে বোল্ড হন কোহলি। কিন্তু ফ্রি হিট থাকায় বেচে যান কোহলি। উল্টো বল চলে যায় থার্ডম্যান অঞ্চলে। সেখান থেকে দৌড়ে ৩ রান নেন কোহলি ও কার্তিক। আর তাই ২ বলে ২ রান প্রয়োজন হয় ভারতের। পরের বলে ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন কার্তিক।
এরপর ক্রিজে আসেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ১ বলে ২ রান প্রয়োজন হলে শেষ বল করতে গিয়ে ফের ওয়াইড বল করেন নেওয়াজ। শেষ বলে ১ রান প্রয়োজন হলে চার মেরে নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচ নিজেদের করে নেন অশ্বিন। আর সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারত। শেষ পর্যন্ত হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।
সংবাদ সূত্রঃ ক্রিকইন্ফো