ঢাকা টেস্টের সময় যত গড়াতে থাকল, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা ততই ছড়াল। সাকিব আল হাসানের কল্যাণে প্রাণের সঞ্চার পেয়েছিল হাত থেকে ফসকে যাওয়া ম্যাচ। তবে বাংলাদেশ দলের শেষ বিকেলে আক্ষেপই সঙ্গী হলো। শঙ্কা কাটিয়ে যখনই মনে হলো ইনিংস হার এড়ানোর সঙ্গে ম্যাচ ড্র করে মাঠ ছাড়বে স্বাগতিকরা, তখনই এলোমেলো সব। ইনিংস হারের খুব কাছে গিয়ে এড়ানো গেল না হার। নামের পাশে যোগ হলো আরো একটি পরাজয়।
মেহেদী হাসান মিরাকে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন সাকিব। চা বিরতির পর ৪ উইকেট হাতে থাকা টাইগারদের ম্যাচ বাঁচাতে খেলতে হতো ৩৮ ওভার। তবে শেষ ঘণ্টায় এলোমেলো সব। ৭০ বল খেলা মিরাজ ১৪ রান করে আউট হলে সাকিবও একই পথ ধরেন ব্যক্তিগত ৬৩ রানে। এতে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশ দলের। ২০৫ রানে অলআউট স্বাগতিকরা। এতে ইনিংস ও ৮ রানের ব্যবধানে হার বাংলাদেশ দলের। আর ৫ ওভার ব্যাট করতে পারলে গল্পটা ভিন্ন হতো।
কাগজে-কলমে ম্যাচের আর মাত্র ৫ ওভার বাকি থাকলেও দিনের আলো শেষ হয়ে আসায় হয়তো আর ১-২ ওভার খেলা হতো শেষদিনে। তবে শেষদিকে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলামকে সাজিদ খান লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আউট করলে দুই ম্যাচ সিরিজের দুটি জিতে সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাতে সফরকারী পাকিস্তান।
বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে পাকিস্তান নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৩০০ রানে। পরে নিজদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮৭ রানে গুটিয়ে ফলোঅনে পড়ে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ালেও অলআউট ২০৫ রানে। এতে ইনিংস ও ৮ রানে ম্যাচ হার বাংলাদেশ দলের।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি মুমিনুল বাহিনী। ৯ দলের টুর্নামেন্টে সবার শেষে অবস্থান ছিল বাংলাদেশের। একমাত্র দল হিসেবে কোন ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায়নি তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে টাইগাররা শুরু করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্র। টানা বৃষ্টির কারণে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র করে পয়েন্ট অর্জনের সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তবে বাজে হারে সে সুযোগ হারালেন মুমিনুলরা।
১৫ সেশনের ম্যাচে ৬ সেশনই গেছে বৃষ্টির পেটে। বাকি ৯ সেশনের দেড় সেশন হাতে থাকতেই পরাজয় বাংলাদেশ দলের। বুধবার ম্যাচের পঞ্চম ও শেষদিনে নির্ধারিত ৯৮ ওভার খেলা হলে সব মিলিয়ে খেলা হতো ২২২.৩ ওভার। মিরপুরে এত কম ওভারে টেস্টে ফলাফল হয়নি। প্রায় ২২ মাস পর আবার টেস্টে ইনিংস হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ দল। শেষবারও প্রতিপক্ষের নাম ছিল পাকিস্তান। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে, রাওয়ালপিণ্ডি টেস্ট।
প্রথম ইনিংসে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দল অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে। দ্রুত ৪ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। তাদের সঙ্গে সমান তালে লড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। তবে ইনিংস বড় করতে না পারার কারণে তৃতীয় সেশনে খেলা টেনে নিলেও হার এড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা।
৬ উইকেট হারানো স্বাগতিকরা দলীয় সংগ্রহ ১৪৭ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনের খেলা শুরু করে। পাকিস্তানের থেকে ৬৬ রানে পিছিয়ে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ২৪ রানে অপরাজিত থেকে ব্যাট করতে নামেন সাকিব। সাকিব-মিরাজের ব্যাটে লড়াই জমিয়ে তোলে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে ফেরে প্রাণের স্পন্দন।
এই দুই ব্যাটসম্যানেই পার্টনারশিপে যখন আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ দল, তখন বোলিংয়ে এসে বাজিমাত পাকিস্তানি অধিনায়কের। মিরাজকে ফিরিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা পান তিনি। বাবরকে ডিফেন্সিভ খেলতে থাকা মিরাজ এলবিডাব্লিউ হন। বাবরের আপিলে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় পাকিস্তান এবং তা কাজে লেগে যায়। ৭০ বলে ১৪ রান করে ফেরেন মিরাজ। ভাঙে ৫১ রানের পার্টনারশিপ।
মিরাজকে হারানোর পর শেষ ভরসা হয়ে থাকা সাকিব পারেননি দলকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে। তাকে বোল্ড করে ম্যাচে নিজের দশম শিকার করেন সাজিদ খান। এই লেগ স্পিনারের জোরের ওপর করা ডেলিভারি পিচ করে সোজা হয়ে যায় স্টাম্পের দিকে। সাকিব পেছনে পায়ে দাঁড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টায় লাইন মিস করেন পুরোপুরি। বল ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে। ৬৩ রান করে আউট হন সাকিব।
এর আগে অবশ্য অনবদ্য এক রেকর্ডে নাম তোলেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। টেস্টে ২১৫টি উইকেটও আছে সাকিবের। ৪ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ‘ডাবল’ তিনি পূর্ণ করলেন টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততায়। ৫৯ টেস্টে ধরা দিল তার এই অর্জন। ৬৯ টেস্টে এই ডাবল ছুঁয়ে আগের রেকর্ড ছিল ইংলিশ কিংবদন্তি ইয়ান বোথামের।
সাকিবের আউটের পর সাজিদ খানের অফ স্টাম্প ঘেঁষা ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে ব্যাট পেতে দিলেন তিনি, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল গেল কিপারের গ্লাভসে। শূন্য রানে আউট হন খালেদ আহমেদ। শেষদিকে এবাদত হোসেনকে নিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে শেষ বিকেলে হতাশা সঙ্গী হলো স্বাগতিকদের ম্যাচের যখন ২৪ মিনিট আর ৫ ওভার বাকি, তখন তাইজুল ইসলামকে এলবিডব্লিউ করে পাকিস্তানকে জয়ের আনন্দে ভাসালেন সাজিদ খান। ২০৫ রানে অলআউট স্বাগতিকরা। এতে ইনিংস ও ৮ রানের ব্যবধানে হার বাংলাদেশ দলের।