মাসকাটে আল আমিরাত স্টেডিয়ামে গতকাল টি২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে রান নিতে গিয়ে জায়গা বদল করছেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান -ওয়েব সাইট
স্কটল্যান্ডকে হারানোই গেল না। হারানো গেল না, না বলে বরং বলা যায় স্কটিশদের বিপক্ষে পেরে উঠতেই পারল না বাংলাদেশ। ২০১২ সালে দুই দলের প্রথম দেখার দিনও এই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাজেভাবে হেরেছিল টাইগাররা। সেই হারের শোধ নেয়া তো দূরে থাক, লড়াইও করতেই পারেনি। স্কটল্যান্ডের কাছে টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড বা বাছাইপর্বের প্রথম খেলায় ব্যাটিং ব্যর্থতায় আত্মসমর্পণ করল টাইগাররা। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও সমীকরণ মেলাতে পারল না মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের দল।
ম্যাচের আগের দিনই বাংলাদেশকে হারানোর হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন স্কটল্যান্ড কোচ শেন বার্গার। তার কথা রেখেছে শিষ্যরা। দলীয় নৈপুণ্যে টাইগারদের একরকম বলেকয়ে হারিয়েছে স্কটিশরা। প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৪০ রান সংগ্রহ করেছিল স্কটল্যান্ড। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি মাহমুদউল্ল্যাহ রিয়াদের দল। বাংলাদেশের হার ৬ রানে। টুর্নামেন্টে নিজেদের পরের ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার স্বাগতিক ওমানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
ওমানের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপে রোববার নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ ওভারেই দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার (৫) আর লিটন কুমার দাসের (৫) উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান (২০) আর মুশফিকুর রহিম মিলে সেটাকে দূর করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ১৩ বলের ব্যবধানে তাদেরও হারিয়ে বাংলাদেশ পড়ে যায় ঘোর বিপদে। সাকিবের বিদায়ের পর মুশফিকও থিতু হননি। লেগ স্পিনার গ্রেভসের ঘূর্ণীতেই তিনি ফেরেন ৩৮ রানে! স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক।
দাপুটে বোলিংয়ে স্কটিশদের কোণঠাসা করে ফেলে টাইগাররা। প্রথম আঘাতটা হেনেছেন সাইফউদ্দিন। চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটটা শিকার করে ফেলেন তিনিই। প্রথম দুই ওভারে পাঁচ রান দিয়ে স্কটিশদের ওপর চাপটা তৈরি করে দিয়েছিলেন তাসকিন-মুস্তাফিজ। সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছে মেহেদী। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে রেকর্ড করেন সাকিব আল হাসান। খাতা কলমে গ্ৰুপের সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্ল্যাহ রিয়াদ।
স্কটল্যান্ডের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন জর্জ মুন্সে ও কাইল কোয়েতজার। শুরু থেকেই ব্যাট হাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দুই ওপেনার। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৫ রান নিতে সক্ষম হন তারা। তবে তৃতীয় ওভারে আর উইকেট পতন ঠেকাতে পারেনি স্কটিশরা। সাইফউদ্দিনের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ইয়োর্কারে বোল্ড হন স্কটল্যান্ড অধিনায়ক কাইল কোয়েতজার। ৭ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। এরপর ম্যাথু ক্রসকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন মুন্সে। একইওভারে দু\’জনকে ফেরান মেহেদী হাসান। সাজঘরে ফেরার আগে দু\’জনে করেন যথাক্রমে ১১ ও ২৯ রান।
দশম ওভারে সাকিব তার তৃতীয় ওভার করতে এসে শিকার করেন জোড়া উইকেট। ৩ বলের ব্যবধানে তিনি ফেরান রিচি বেরিংটন ও মাইকেল লিস্ককে। এর মাধ্যমে অনন্য এক মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এককভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন তিনি। ৮৪ ম্যাচে ১০৭টি উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এতদিন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গা। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নামার আগে সাকিবের শিকার ছিল ৮৮ ম্যাচে ১০৬টি। ৮৯ ম্যাচে সাকিবের টি২০ উইকেট ১০৮টি। টি২০ বিশ্বকাপের মঞ্চে অনন্য আরও এক রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সাকিব। কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসরে আর ৮ উইকেট নিতে পারলে বিশ্বকাপে শীর্ষ উইকেট শিকারি হয়ে যাবেন বাঁহাতি এ স্পিনার। শেখ মেহেদী চতুর্থ ওভার করতে এসে আবারও নেন উইকেট। এবার ফেরান ৫ রান করা কালাম ম্যাকলিওডকে। বলা যায় টাইগার বোলারদের তোপের মুখে স্কটিশ ব্যাটাররা ব্যর্থ হয়েছেন ইনিংস লম্বা করতে। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে তাসকিন নিজের তৃতীয় ওভারে তুলে নেন দ্রুত রান তুলতে থাকা মার্ক ওয়াটকে (২২)। তবে ক্রিস গ্রেভস ছিলেন বাকিদের থেকে ভিন্ন। চাপের মুখে বিপাকে পড়া দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন কখনও সিঙ্গেল রান আবার কখনও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। গ্রেভস শেষ পর্যন্ত ৪৫ (২৮) রান করে বিদায় নেন মুস্তাফিজের বলে সাকিবের কাছে ক্যাচ দিয়ে। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ওয়াটকে সৌম্যের তালুবন্দি করে টাইগারদের বোলিং ও ফিল্ডিং ব্যর্থতায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ১৭ বলে ২২ রান করে ফেরেন মার্ক। স্কটিশরা সংগ্রহ করেছে ৯ উইকেটে ১৪০ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী, ১৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। সাইফউদ্দিন ও তাসকিন নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। শেষ ওভারে মুস্তাফিজ তুলে নেন ২ উইকেট।