ব্যাট হাতে লিটন-আর বল হাতে সাকিবের অনবদ্য পারফরম্যান্সে বিশাল জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১৫৫ রানের এ জয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগার বাহিনী। ওপেনিংয়ে নেমে দলের উইকেট ক্ষরাতেও নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন। এতে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৭৬ রান। আর বোলিংয়ে নিজের আগুন ঝরা স্পিনে ৫ উইকেট তুলে নেন সাকিব।
২৭৭ রানের লক্ষ্যে নেমে টাইগার পেস আক্রমণে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৪ রানে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ফিরে যান মারুমানাই (০)। ১৩ রানে ওয়েসলি মাধভেরেকে (৯) ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান তাসকিন আহমেদ। অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর আর অভিষিক্ত ডিওন মেয়ার্স হাল ধরার চেষ্টা করেন। তবে ১৮ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে ৩৬ রানেই জুটির অবসান ঘটান শরীফুল। তিন পেসারের শিকারের পর মঞ্চে আবির্ভাব সাকিব আল হাসানের।
নিজের স্পেলে সাকিব জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরকে (২৪) তাসকিনের তালুবন্দি করেন। এছাড়া রায়ান বার্লকেও (৬) আফিফের তালুবন্দি করেছেন সাকিব। বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়া লুক জঙ্গুই (০) রান-আউট হয়ে যান। এরপর মুজরাবানিকে (২) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় শিকার ধরেন সাকিব।
উইকেটের যাওয়া আসার মাঝেও ৪৭ বলে ঝড়ো ফিফটি তুলে নেন চাকাভা। সেই চাকাভাকে ৫৪ রানে ফিরিয়ে চার নম্বর শিকার ধরেন সাকিব। তার পঞ্চম শিকার রিচার্ড এনগ্রাভা (০)। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়েছিলেন টিমিসেন মারুমা। তাঁর পক্ষে ব্যাট করা সম্ভব হয়নি। তাই ২৮.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
এর আগে আজ শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান তোলে বাংলাদেশ। শুরুতে একের পর এক উইকেট হারালেও মাঝের দিকে দলকে আলোর পথ দেখান লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০২ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস।
ব্যাটিং ইনিংসে মাত্র ৫৭ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে এসে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তামিম ইকবাল। পেসার মুজারাবানির লাফিয়ে উঠা বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা হয়। তিনে এসে আশা জাগান সাকিব আল হাসান। কিন্তু থিতু হওয়ার আগেই মুজারাবানিকে উইকেট উপহার দেন তিনি। বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে রায়ান বার্লে তালুবন্দি হন সাকিব। ২৫ বলে তিন চারে ১৯ রান করে ফেরেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
তৃতীয় উইকেটের জুটি আশা দেখান মোহাম্মদ মিঠুন। তবে তাকেও থিতু হওয়ার আগেই সাজঘরে ফেরান স্বাগতিক পেসার টেন্ডাই চাতারা। ১৯ বলে ১৯ রান করে তামিমের মতোই উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে বন্দি হন তিনি। দলীয় ৭৪ রানের মাথায় পেসার এনগারাভার বল নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা হয়। মাত্র ৫ রান করে ফেরেন সৈকত।
চার উইকেট হারি খাদে পড়া দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ওপেনার লিটন দাস। দু’জনের জুটিতে দলীয় শতক তুলে নেয় বাংলাদেশ। ২৯তম ওভারের ষষ্ঠ বলে চার মেরে ফিফটি করেন তিনি। দুই জনের গড়া ৯৩ রানের জুটি ভাঙেন লুক জংউই। ৫২ বলের লড়াকু ৩৩ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন রিয়াদ। এরপর অবশ্য আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। খানিক পরই এনগারাভার শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ১১৪ বলে আট চারে ১০২ রান করেন তিনি।
শেষের দিকে নতুন ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে দ্রুত রান তোলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুইজনের গড়ায় ৫৮ রানের জুটি ভাঙেন জংউই। শুরুতে মিরাজ এবং পরের বলে আফিফকেও ফেরান এই পেসার। মিরাজ ২৬ ও আফিফ ৪৫ রান যোগ করেন। শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের অপরাজিত ৮ রানে ভর করে ২৭৬ রান তোলে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের হয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন লুক জংউই।