দাপুটে জয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথমবার সিরিজ জিতলো টাইগাররা

সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে সারা দেশের আবহাওয়া ছিল কিছুটা সেঁতসেতেঁ। তবে ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলেছিল মিরপুরে। রৌদ্রজ্জল আকাশের নিচে ইতিহাস গড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তামিম ইকবালরা। লঙ্কানদের সঙ্গে এর আগে আটটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেও জয় পায়নি যে টাইগাররা, এবার সেই লঙ্কানদের সঙ্গে নিজেদের দেশের মাটিতি সিরিজ জিতে আক্ষেপ গুছালো তামিম-সাকিবরা।

পুরো ম্যাচে তিনবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির বাধা আসলেও ইতিহাসের সেই মাহেদ্রক্ষণ ধরা দিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বড় ব্যবধানে সফরকারীদের হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ মঙ্গলবার টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুতে হোঁচট খেলেও মাঝের প্রতিরোধে নির্ধারিত ওভারের ১১ বল বাকি থাকতে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে টাইগাররা। জবাবে ব্যাট করতে এসে সুবিধা করতে পারেনি লঙ্কানরা। তার ওপর বৃষ্টি আইনে খেলা ৪০ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। টার্গেট ২৪৫ হলেও নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান করে সফরকারীরা। ১০৩ রানের বিশাল জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের।

লক্ষ্য তাড়া করতে এসে ভালোই এগোচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। তবে উদ্বোধনী জুটিতে বেশিদূর এগোতে দেননি অভিষিক্ত পেসার শরিফুল ইসলাম। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরাকে তামিমের তালুবন্দি করেন তিনি। ১৫ বলে ১৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন পেরেরা।

উইকেট হারিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ওপেনার গুনাথিকালাকা ও নতুন ব্যাটসম্যান নিশাঙ্কা। তবে গুনাথিকালাকাকে ফিরিয়ে তাদের ২৯ রানের জুটি ভেঙে টাইগার শিবিরে স্বস্তি এনে দেন মুস্তাফিজ। ২ চারে ৪৬ বলে ২৪ রান করে সাকিবের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। এরপর আবারও চিন্তা বাড়াতে শুরু করেন নিশাঙ্কা। তবে তাকেও বেশিদূর যেতে দেননি সাকিব। ৩৬ বলে ২০ রান করা নিশাঙ্কাকে তামিমের তালুবন্দি করে প্যাভিলিয়নে ফেরান তিনি।

২১তম ওভারের তৃতীয় বলে কুশল মেন্ডিসকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। আগের ম্যাচে চার উইকেট পাওয়া মিরাজের এটি প্রথম শিকার। খানিক পরই ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান সাকিব। ১০৪ রানের মাথায় দাশুন সানাঙ্কাকে মাহমুদউল্লার তালুবন্দী করে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। এরপর আগের ম্যাচে ৭৪ রান করা ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকেও সাজঘরে ফেরান মিরাজ।

একের পর এক উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়া লঙ্কানদের রক্ষা করতে পারেননি আশেন বানদারা। তাকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১২২ রানের মাথায় সান্দাকানকেও তামিমের তালুবন্দি করে ফেরান মুস্তাফিজ। তামিমের তৃতীয় ক্যাচে মুস্তাফিজের তৃতীয় শিকার হন তিনি। খানিক পরই বৃষ্টি আসায় জয়ের উল্লাসে মেতে উঠতে একটু বেগ পেতে হয় টাইগারদের। তবে বৃষ্টি থামার কিছু সময় পরই খেলা গড়ায় ৪০ ওভারে, টার্গেট দাঁড়ায় ২৪৫ এ, লঙ্কানদের প্রয়োজন ছিল ২ ওভারে ১১৯ রান। অসম্ভব এই রান মোকাবেলা তো দূরে থাক নির্ধারিত ওভারে ১৪১ রানের থামে লঙ্কানদের ইনিংসের গতি।

টাইগারদের হয়ে খুব কৃপণতার সঙ্গে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া সাকিব আল হাসান দুটি ও অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট শিকার করেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে এসে চরম ব্যাটিং বিপর্যয় পড়ে বাংলাদেশ। তবে মিডল অর্ডারে এসে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। মুশফিকের অনবধ্য ১২৫ রানের ইনিংসে ভর করে ১১ বল বাকি থাকতে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে বাংলাদেশ। লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট শিকার করেন দুশমন্থ চামিরা ও লাকশান সান্দাকান।

Scroll to Top