করোনাভাইরাসে আক্রান্তকে জড়িয়ে ধরেও ম্যারাডোনা \’নেগেটিভ\’

কোনো না কোনো সমালোচনায় জড়িয়ে থাকতে পছন্দ করেন ফুটবল সুপারস্টার ম্যারাডোনা। মাঠের মাঝে তিনি যেমন সুপারস্টার ছিলেন, তেমনি মাঠের বাইরে নানা কাণ্ডকীর্তির জন্য আজীবন তিনি বিতর্কিত। তারপরেও তিনি ডিয়াগো ম্যারাডোনা; ফুটবল ঈশ্বর। সম্প্রতি তাকে ঘিরে করোনা শংকা তৈরি হয়েছিল। কারণ ম্যারাডোনা একজন করোনা আক্রান্ত খেলোয়াড়কে জড়িয়ে ধরেছিলেন। দ্রুত টেস্ট করার পর জানা যায়, আর্জেন্টাইন ফুটবল-কিংবদন্তিকে শেষ পর্যন্ত করোনায় ধরেনি।

আর্জেন্টিনাকে ছিয়াশির বিশ্বকাপ জেতানো এই মহাতারকা বর্তমানে আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগের নিচু সারির দল হিমনাসিয়ার কোচের দায়িত্বে আছেন। গত শুক্রবার এক ম্যাচে আবেগে তিনি নিজ দলের এক খেলোয়াড়কে জড়িয়ে ধরেছিলেন। পরে পরীক্ষায় দেখা যায় ফুকান্দো কনতিন নামের সেই খেলোয়াড় করোনায় আক্রান্ত। সাথে সাথেই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে নিয়ে টেনশন শুরু হয়। ৫৯ বছর বয়সী ম্যারাডোনা তো শিকার হিসেবে করোনাভাইরাসের \’প্রথম পছন্দ\’ হওয়ার কথা।

এরপর সাথে সাথেই ম্যারাডোনার করোনা পরীক্ষা করা হয়। প্রাপ্ত রিপোর্টে জানা গেছে, ম্যারাডোনাকে করোনায় ধরেনি। তার ব্যক্তিগত আইনজীবী মাতিয়াস মোরলা টুইটারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আর্জেন্টিনা এ মুহূর্তে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ করোনা আক্রান্ত দেশ। বিশ্বে আক্রান্তের হারে ৮ নম্বরে থাকা লাতিন আমেরিকার এ দেশটিতে ৮ লাখ ৯ হাজার ৭২৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু ঘটেছে ২১ হাজার ৪৬৮ জনের। করোনা পরীক্ষা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে দেশটি আনেক পিছিয়ে।

মারাদোনাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুইবার স্থানান্তর ফি এর ক্ষেত্র বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। প্রথমবার বার্সেলোনায় স্থানান্তরের সময় ৫ মিলিয়ন ইউরো এবং দ্বিতীয়বার নাপোলিতে স্থানান্তরের সময় ৬.৯ মিলিয়ন ইউরো। নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে মারাদোনা আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। ক্লাব পর্যায়ে তিনি তার নাপোলিতে কাটানো সময়ের জন্য বিখ্যাত, যেখানে তিনি অসংখ্য সম্মাননা জিতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪ গোল করেন।

তিনি চারটি ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং দলকে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেন। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণগোলক জিতেন তিনি। প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২–১ গোলে জয় লাভ করে। আর্জেন্টিনার পক্ষে উভয় গোলই করেন মারাদোনা। দুইটি গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে দুইটি ভিন্ন কারণে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল যা “হ্যান্ড অফ গড” নামে খ্যাত। দ্বিতীয় গোলটি মারাদোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে করেন। ২০০২ সালে ফিফাডটকম এর ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে।

মারাদোনাকে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং সংবাদ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের অন্যতম মনে করা হয়। ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তিনি তার কোকেইন নেশা ত্যাগ করেন।

তার কড়া রীতি মাঝেমাঝে সাংবাদিক এবং ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের সাথে তার মতভেদের সৃষ্টি করে। ম্যানেজার হিসেবে খুব কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ২০০৮ সালের নভেম্বরে তাকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১০ বিশ্বকাপের পর চুক্তি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আঠারো মাস এই দায়িত্বে ছিলেন।

Scroll to Top