ক্লাব বার্সায় তাদের সর্ম্পকটা বেশ জটিল ছিল। দু’জনের হাত ধরে অসখ্য ম্যাচের সাফল্য পেয়েছে কাতালান ক্লাবটি। জাতীয় দল হিসেবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও লিওনেল মেসি ও নেইমার ডি সিলভা জুনিয়র একে অপরের ভক্ত, দারুণ বন্ধুও বটে। এমনকি বার্সা ছেড়ে পিএসজি চলে যাওয়ার পরও নেইমার বার্সেলোনা শহরে গিয়ে মেসিদের সঙ্গে পার্টিও করে এসেছেন। নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন দুজন।
অথচ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ বিশ্বকাপে নেইমারের দল টিকিট নিশ্চিত করলেও পিছিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। এমনকি তাদের বিশ্বকাপে অংশগ্রহন নিয়ে চলছিল অনিশ্চিয়তা। কারণ ইকুয়েডরের চ্যালেঞ্জিং মাঠে মেসিদের জয় লাভ করা ছাড়াও তাকিয়ে থাকতে হতো নেইমারদের দিকে। আমরা জানি যে, ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটোর মাঠটি সমূদ্রপৃষ্ঠ হতে ৯ হাজার ফুটেরও উঁচুতে। যেখানে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হতে হতো মেসিদের। উচ্চতা সমস্যা না আবার মেসিদের বিপদে ফেলে দেয়, সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে সবাই।
তবে বুধবারের ম্যাচে কঠিন পরিসংখ্যানের সহজ সমাধান দিলেন দুই বন্ধু মেসি-নেইমার। আর্জেন্টিনাকে জেতাতে হ্যাটট্রিক করেন মেসি। অন্যদিকে ব্রাজিলকে জয় লাভে সাহায্য করেন নেইমার।
আজকের ম্যাচের আগে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে, এমন পরিস্থিতিতে ব্রাজিল যদি চিলিকে হারিয়ে দেয়, তাহলে বিষয়টা আর্জেন্টিনার জন্য কিছুটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও প্লে-অফ খেলার সুযোগ পেতে পারে মেসির দল। সেটা মাথায় রেখেই ব্রাজিল তারকা প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘লিওনেল মেসি এবং তার দল আর্জেন্টিনাকে নিয়েই আগামী বিশ্বকাপ খেলতে যেতে চাই।’
স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড স্প্যানিশ পত্রিকা স্পোর্টের বরাতে নেইমারের বক্তব্য দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, ‘নেইমার বুঝতে পারছেন, চিলিকে অবশ্যই হারাতে হবে। নিজেদের সমর্থকদের সামনে ইমেজ ধরে রাখার বিষয়ই নয় শুধু, বন্ধু লিওনেল মেসিকেও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান তিনি।’
তবে শেষ পর্যন্ত বন্ধু মেসির হয়ে কথা বলা নেইমার কথা রাখলেন। তাকে নিয়েই বিশ্বকাপর পথে ব্রাজিল। জয় হোক বন্ধুত্বের। জয় হোক ফুটবলের।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম দল ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বের ১৫ ম্যাচের মাথায় নিশ্চিত হয় তাদের বিশ্বকাপ টিকিট। পরের তিন ম্যাচই ছিল নিয়ম রক্ষার। তবে তার প্রভাব পড়েছে পয়েন্ট টেবিলের পরের ৫ দলের উপর। প্রভাব পড়েছে আর্জেন্টিনার উপরও। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে চিলিগে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুচ চ্যাম্পিয়ন নেইমাররা।
ম্যাচের প্রথমর্ধ গোল শূন্য থেকেই শেষ হয়। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ১০ মিনেটে (৫৫) ব্রাজিল শিবিরে প্রথম গোলের দেখা পায় মিডফিল্ডার পলিনহো। ঠিক এক মিনিটের মাথায় আবারও লিড দিগুণ করে স্বাগতিকরা। এবার ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসাস গোলে (৫৭ মিনিটে) ২-০ এগিয়ে যায় ব্রাজিল। এতে দুই মিনিটে দুই গোলের দেখা পায় তিতের শিষ্যরা। আর দুইটি গোলই করিয়েছেন নেইমার।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-০তে এগিয়ে থাকে ব্রাজিল। ম্যাচ পরিচালক বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত ৩ মিনিট। আর তা কাজে লাগিয়ে ৯২ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসাস। তার জোড়া গোল গ্রুপ চ্যাম্পিয়নদের গোলের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয়।
ম্যাচে ৬১ শতাংশ বল নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রেখেছে স্বাগতিক ব্রাজিল। অপরদিকে পিছিয়ে থাকা চিলির দখলে ছিল ৩৯ শতাংশ।
এবার দেখা হবে বিশ্বকাপ মঞ্চে। দেখা হবে শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে। দেখা হবে ব্রাজিলের ছয়বারের বিশ্বকাপ ঘরের তোলার মঞ্চে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, ১১ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ