মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক। তিনি পেস বোলার কিন্তু অধিনায়ক, এমন সমাহার বিশ্ব ক্রিকেটে খুব বেশি দেখা যায় না। তালিকাটাও খুব বড় না। কারণ শুধু পেস বোলার হিসেবে টিকে থাকাই কঠিন কাজ। তার ওপর আবার অধিনায়কত্ব। ক্রিকেট ইতিহাসে খুব কম ক্রিকেটারই এই দুই দায়িত্বে সমান সফল ছিলেন। এই দ্বৈত ভূমিকায় যারা সফল হয়েছেন ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর তাঁদের ছোট একটি তালিকা করেছে। যেখানে জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মুর্তজা।
মাশরাফি ছাড়াও আছেন কোর্টনি ওয়ালশ, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, বব উইলিস, হিথ স্ট্রিক, লাসিথ মালিঙ্গা ও স্টুয়ার্ট ব্রড। এই তালিকায় বিশেষজ্ঞ পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের জায়গা হয়নি। যাদের ব্যাটিং গড় ৩০ এর ওপরে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। এ কারণে শন পোলক, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটন, ইমরান খান ও ইয়ান বোথামরা নেই মাশরাফিদের পাশে।
কোর্টনি ওয়ালশ
পেস বোলিং অধিনায়ক হিসেবে বেশ সফল ছিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশ। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করেছেন। এই সময় ২২ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অধিনায়কের দায়িত্ব ওয়ালশের বোলিংয়ে কোনো প্রভাব ফেলেনি। সেই ২২ টেস্টে প্রায় ২৫.৭১ গড়ে নিয়েছেন ৮৫ উইকেট। দল টেস্ট জিতেছে ৬টি, হেরেছে ৭টি, ড্র করেছে ৯টি। ওয়ানডেতেও খারাপ নয় অধিনায়ক ওয়ালশের রেকর্ড। অধিনায়ক হিসেবে ৪৩ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৪৮ উইকেট। দল জিতেছে ২২ ম্যাচ, হেরেছে ২০টি।
ওয়াসিম আকরাম
ওয়াসিম আকরামের অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ছিল দুর্দান্ত দল। রেকর্ডেও সেই ছাপ স্পষ্ট। ২৫ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে। মাত্র ২৩.৩৫ গড়ে নিয়েছেন ১০৭ টেস্ট উইকেট। টেস্ট জিতেছেন ১২টি, হেরেছেন ৮টি, ড্র করেছেন ৫টিতে। ওয়ানডেতে ১০৯ ম্যাচে পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন ওয়াসিম। মাত্র ২২.৬৩ গড়ে নিয়েছেন ১৫৮ উইকেট। ১০৯ ম্যাচের ৬৬টিতে জিতেছে পাকিস্তান, হেরেছে ৪১ ম্যাচে, বাকি দুটি টাই। ওয়াসিমের নেতৃত্বে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে পাকিস্তান। ১৯৯৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজ জিতেছেন অধিনায়ক ওয়াসিম। ১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে পাকিস্তান। একই বছর ভারতে টেস্ট সিরিজ ড্র করে ওয়াসিমরা।
ওয়াকার ইউনুস
১৭ টেস্টে পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন আরেক পাকিস্তানি কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনুস। ২৩.৪৭ গড়ে ৬৭ উইকেট নিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে। ১০টি টেস্ট জিতেছেন, ৭টি হেরেছেন। ওয়ানডেতেও রেকর্ড ভালো। ৬২ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৯৭ উইকেট নিয়েছেন নিজের অধিনায়কত্বে। দল এই সময় জিতেছে ৩৭ ম্যাচে, হেরেছে ২৩ ম্যাচে। তবে ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ওয়াকারের সময় ভালো যাচ্ছিল না। ২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ভরাডুবির পর ওয়াকারকে ক্যারিয়ার ও অধিনায়কত্ব দুটোই হারাতে হয়।
মাশরাফি বিন মুর্তজা
চোটের কারণে টেস্ট অধিনায়কত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথম ম্যাচেই। কিন্তু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন তাঁর সময়ে বিশ্বসেরাদের একজন। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মাশরাফি। বাংলাদেশ সেই ম্যাচ জিতেছিল। ওয়ানডেতে মাশরাফির রেকর্ড তাঁকে বিশ্বসেরাদের কাতারে পৌঁছে দেয়। মাশরাফি ৮৮টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়ানডেতে ১০২ উইকেট নিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। ম্যাচ জিতেছেন ৫০টি, হেরেছেন ৩৬টি। ২৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন। ২০ উইকেট নিয়েছেন। জিতেছেন ১০ ম্যাচে, হেরেছেন ১৭ ম্যাচে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাশরাফির অধিনায়কত্বের প্রভাব সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দল ছিল হারের বৃত্তে। সেখান থেকে এক বছরের মাথায় বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ৯-১০ নম্বর দলটি দুই বছরের মাথায় উঠে আসে ৭ নম্বরে।
বব উইলিস
ইংল্যান্ডকে ১৮ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিংবদন্তি পেসার বব উইলিস। ১৮ টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে নিয়েছেন ৭৭ উইকেট (গড় ২১.৫৯)। তাঁর নেতৃত্বে ১৪ টেস্ট জিতেছে ইংল্যান্ড, ৯টি হার ও ১১টি ড্র করেছে। ২৯ ওয়ানডে খেলে ৩৬ উইকেট তাঁর। অধিনায়ক হিসেবে ১৬ ওয়ানডে জিতেছেন, হেরেছেন ১৩টি।
হিথ স্ট্রিক
হিথ স্ট্রিক অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েছেন বোলার হিসেবে সেরা সময় পেছনে ফেলে। তবু জিম্বাবুয়ে দলের হয়ে লড়ে গেছেন দীর্ঘদিন। ২১ টেস্টে অধিনায়কত্ব করে ৩৪.৮০ গড়ে নিয়েছেন ৫৬ উইকেট। জিতেছেন ৪টি টেস্ট, ড্র করেছেন ৬টি, হেরেছেন ১১ ম্যাচে। ওয়ানডে রেকর্ডটা আরেকটু উজ্জ্বল। ৬৮ ম্যাচে নিয়েছেন ৮৯ উইকেট। ১৮ ম্যাচে জিতেছেন অধিনায়ক হিসেবে। হেরেছেন ৪৭ ম্যাচে।