লড়াইটা যখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার তখন ছোট ছোট বিষয়ে মেজাজ হারানো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। যেমনটা হয়েছিল সদা ঠাণ্ডা মাথার ক্রিকেটার আশিষ নেহরার সঙ্গে। উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে গালি দিয়ে বসেছিলেন উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। যা নিয়ে ১৫ বছর পরে অনুতপ্ত বাঁহাতি এ পেসার। এত দিন পর বুঝতে পেরেছেন, কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি।
ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ আর দশটা ম্যাচের মতো নয়। ওই দুই দেশের সমর্থকেরা তো বটেই, গোটা ক্রিকেট দুনিয়াতেই একটা উত্তেজনা কাজ করে এই ম্যাচ হলে। সে উত্তাপ ছুঁয়ে যায় দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও। অন্য যেকোনো ম্যাচের চেয়ে এই ম্যাচে ভালো পারফর্ম করার একটা তাড়াও থাকে তাঁদের মধ্যে।
ভালো করতে চাওয়ার এই অদম্য স্পৃহার কারণে দুই-একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনাও যে ঘটে না, তা কিন্তু নয়। আশিস নেহরার কথাই ধরুন। ধীরস্থির মেজাজের সাবেক ভারতীয় এ পেসার যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে খেলতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে এক কাণ্ড করেছিলেন। গালি দিয়ে বসেছিলেন নিজ দলের মহেন্দ্র সিং ধোনিকেই। ব্যাপারটা নিয়ে অবশ্য আজও আক্ষেপ আর অনুশোচনায় ভোগেন এই পেসার।
ঘটনা ২০০৫ সালের। সিরিজ খেলতে ভারতে পা রেখেছে ইনজামাম-আফ্রিদিদের পাকিস্তান। আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে ভারতের দেওয়া ৩১৬ রানের লক্ষ্যে শুরু থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার সালমান বাট ও শহীদ আফ্রিদি।
ভারতের দেওয়া ৩১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করেন পাকিস্তানের ওপেনার সলমন বাট ও শহীদ আফ্রিদি। চতুর্থ ওভারে পাঁচ বলে ১২ রান দিয়ে ফেলেছিলেন ভারতীয় পেসার আশস নেহরা। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকানোর পর ওভারের ষষ্ঠ বলও চালিয়ে খেলতে যান পাক ওপেনার আফ্রিদি। বল তাঁর ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষক ধোনি ও প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুল দ্রাবিড়ের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ধোনি ও দ্রাবিড়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন আশিস। সেই ঘটনা ক্যামেরাতেও ধরা পড়ে।
হিসেব অনুযায়ী নেহরার ‘গালি’ দুজনেরই খাওয়ার কথা। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড় তত দিনে দলের অন্যতম মহিরুহ, ওদিকে ধোনি মাত্রই ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। ফলে নেহরার কাছে সহজ লক্ষ্যবস্তু ছিলেন ধোনিই। নেহরার অশ্রাব্য গালিটা তাই ধোনিকেই সহ্য করতে হয়।
জীবন পেয়ে ২৩ বলে ৪০ রান করেন আফ্রিদি। আফ্রিদির দেখানো পথ ধরে গোটা ম্যাচেই রানের চাকা সচল রাখেন ইনজামাম, রাজ্জাক, শোয়েব মালিকরা। ম্যাচটা জিতেই মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। ওদিকে নয় ওভার বল করে ৭৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন সেদিন নেহরা।
কিন্তু এত দিন পর হঠাৎ এই প্রসঙ্গ আসার কারণ? আর কিছুই না, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অনলাইনের এই যুগে কখন যে কী ভাইরাল হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। সেদিন যেমন, ধোনিকে গালি দেওয়ার সে ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে গেল। ফলে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে সেই ম্যাচ ও নেহরার ‘কীর্তি’।
জানিয়েছেন, অমন কাজ করে মোটেও গর্বিত নন তিনি, ‘ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে শহীদ আফ্রিদির ব্যাটের কানায় লাগা বল ধোনি আর দ্রাবিড়ের মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, গালাগালি দেওয়া শুরু করি। এটি ছিল আহমেদাবাদের চতুর্থ ওয়ানডে। ঠিক আগের বলেই আফ্রিদি আমাকে ছক্কা মেরেছিল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বাড়তি চাপও ছিল। তখনই আমি সুযোগ তৈরি করেছিলাম, যেটা হাতছাড়া হয়ে যায় এবং আমিও মেজাজ ধরে রাখতে পারিনি। যাই হোক, আমি স্বীকার করছি, নিজের ব্যবহারের জন্য একদমই গর্বিত নই। ম্যাচের পর ধোনি এবং দ্রাবিড় দুজনের কেউই আমার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেনি। যদিও এর মাধ্যমে আমি আমার ওই কাণ্ডের পক্ষে কোনো যুক্তি দেখাচ্ছি না।’
তবে নেহরা বেশ ভালোই জানেন, তাঁর জন্য নয়, বরং ভিডিওতে ধোনি ছিলেন দেখেই ভাইরাল হয়েছে সেটা, ‘ভিডিওটা দেখে মানুষ এখনো মজা পায় কারণ এটাতে ধোনি আছে। আমার একটা পুরোনো ছবিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে দেখা যাচ্ছিল আমি কিশোর বিরাট কোহলির হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছি। সে ছবিটাও আমার কারণে নয়, বিখ্যাত হয়েছে কোহলির কারণেই। এ ভিডিওটাও তাই। আমি জানি একদিন আমার বাচ্চারা ভিডিওটা দেখবে। তখন তাদেরও আমার বোঝানো লাগবে কেন আমি অমন করেছিলাম।’