এমন নীরবতায় কবে আর খেলেছিল বার্সা। অন্তত গত এক যুগে তেমন কোনও দৃশ্য চোখে পড়েনি। কাতালুনিয়ায় গণভোটের কারণে লাস পালমাসের বিপক্ষে ম্যাচটি স্থগিত করতে লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল বার্সেলোনা। টুর্নামেন্ট কমিটি তাতে কর্ণপাত না করায় বার্সাকে মনের বিরুদ্ধে নামতেই হলো মাঠে। শেষ পর্যন্ত মেসির জোড়া গোলে পালমাসের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জয়ও পেল বার্সা। কিন্তু সেই জয়ে উৎসব নেই, নেই উল্লাস উদযাপন আনন্দ।
তবে কাতালান ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা জীবনে প্রথমবারের মতো নতুন কোনও অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো। সাক্ষী থাকলো লাস পালমাসও। যেখানে গোটা গ্যালারিজুড়ে ছিল না একজন দর্শকও। দর্শকদের আনন্দ দিতেই তো খেলোয়াড়েরা তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। কিন্তু মাঠের গ্যালারি যদি থাকে ফাঁকা তবে একজন খেলোয়াড়ের মনকে তা কতটা ব্যথিত করতে পারে বার্সার সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের চেয়ে এ মুহূর্তে তা আর কে ভালো বলতে পারবেন।
ম্যাচ শেষে রুদ্ধদ্বার এই ম্যাচটিকে দুঃস্বপ্নের মতো উল্লেখ করে পিকে বলেন, ‘আমি কাতালানবাসীদের নিয়ে গর্বিত। এটা আমার সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা। দর্শকশূন্য মাঠে খেলা যে কতটা কষ্টের ও কঠিন সে আমি বুঝেছি। জীবনে সবচেয়ে খারাপ দিনটি কাটিয়েছি।’
লা লিগার নতুন মৌসুমে টানা সপ্তম জয়ে টুর্নামেন্টে শীর্ষত্ব ধরে রাখা বার্সার শঙ্কাও আছে পিকেকে নিয়ে। কারণ, স্বাধীন কাতালুনিয়া অঞ্চলের পক্ষে কথা বলে তোপের মুখে পড়েছেন পিকে। সার্জিও রামোসসহ অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এই বার্সা ডিফেন্ডারকে।
লাস পালমাসের বিপক্ষে জয়ের পর বিতর্কের জবাবে অশ্রুসিক্ত পিকে বলেন, ‘যদি স্প্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন মনে করে আমি জাতীয় দলের জন্য সমস্যা বা বিরক্তিকর, তবে আমি সরে দাঁড়াতে রাজি আছি।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য পিকে। কিছুদিন আগে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের পর অবসরে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
গত জুনে কাতালোনিয়া কর্তৃপক্ষ ১ অক্টোবর গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেয়। স্পেন সরকার এ ধরনের গণভোটকে বেআইনি বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। যদিও ওই গণভোটে কাতালানদের স্বাধীনতার পক্ষে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
স্পেনের বিত্তশালী অঞ্চল কাতালোনিয়া। জনসংখ্যা ৭৫ লাখ। এর রাজধানী বার্সেলোনা। অঞ্চলটির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরেই স্বাধীনতা চাইছে তারা। ২০১৫ সালে কাতালোনিয়ার প্রাদেশিক পার্লামেন্ট নির্বাচনে স্বাধীনতাকামীদের নিরঙ্কুশ বিজয়ে স্বাধীনতার পথে ধাপে ধাপে এগোনো শুরু করে কাতালানরা।
তবে ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর স্পেন সরকার কাতালানদের স্বাধীন সরকার গঠনে কতটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিংবা কি কৌশল নেয় সেটির দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, ০৪ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ