ভারতের বিপক্ষে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছিল বায়ুদূষণ নিয়ে। ম্যাচ চলার সময় এই দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে বাংলাদেশের দুই খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে বমি করেছিলেন সেদিন। সাধারণত কোনো ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনা কী নিয়ে হয়?
পিচ কেমন হতে পারে, প্রতিপক্ষের কোন খেলোয়াড় ভালো ফর্মে আছে, এসব নিয়েই মূলত। শীত থাকলে শিশিরের প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে সব আলো কেড়ে নিয়েছিল দিল্লির বায়ুদূষণ। ম্যাচের আগে পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে দুই দেশের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফরাও বলেছিলেন, দিল্লির এই আবহাওয়ায় খেলা সম্ভব নয়। কিন্তু সব আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে ম্যাচ তো মাঠে গড়িয়েছেই, প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে খেলে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম জয়ও তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। জয়টা অর্জন করার জন্য কম কষ্ট করতে হয়নি ক্রিকেটারদের। ম্যাচের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে বমি করেছিলেন বলে জানা গেছে।
দিল্লির দূষণ নিয়ে বছরের এ সময়টায় প্রতিবারই কথা হয়। দিল্লিতে কুয়াশা ও ধোঁয়া মিলেমিশে জীবনযাত্রা হুমকির মুখে। দীপাবলি উৎসবে লাগামহীন পটকা-আতশবাজি ফোটানোর কারণে দিল্লির বাতাস দুর্যোগের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) গড়ে সাড়ে চার শর ওপরে দেখাচ্ছে বাতাসের মান। তবে স্থান বিশেষে সেটা এক হাজারও পেরিয়ে গেছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি দূষিত বাতাস দিল্লিতে। একিউআইসিএন অর্গ নামের এক ওয়েবসাইট জানিয়েছে, ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যা সাতটায় দিল্লির শ্রীনিবাসপুরীর একিউআই ছিল ৬৬১। আর কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্টের একিউআই ছিল ৭৪৫ আর নজফগড় জেলায় ৯৮৮!
এটা কত ভয়াবহ সেটা বোঝাতে কিছু তথ্য দেওয়া যাক। একিউআই ০-৫০ মানে ‘ভালো’, ৫১-১০০ ‘সন্তোষজনক’, ১০১-২০০ ‘মাঝামাঝি’, ২০১-৩০০ ‘খারাপ’, ৩০১-৪০০ ‘বেশি খারাপ’, ৪০১-৫০০ ‘ভয়াবহ’, আর ৫০০-এর বেশি মানে ‘ভয়াবহ, পাশাপাশি জরুরি অবস্থা।’ দূষণের এ তালিকার দুইয়ে আছে পাকিস্তানের লাহোর। ম্যাচের আগের দিন লাহোরের একিউআই ছিল ১৮৭।
কিউআইয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী, দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছে যে শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে পারেন খেলোয়াড়েরা। সমস্যাটা শুধু খেলোয়াড়দেরই নয়, খেলা দেখতে আসা সমর্থকদেরও। সেটাই যেন প্রমাণিত হলো। জানা গেছে, তীব্র বায়ুদূষণের মধ্যে ম্যাচ খেলতে খেলতে সেদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দুজন বাংলাদেশি তারকা। এমনকি ম্যাচের মধ্যে বমিও করেছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে একজন সৌম্য সরকার, আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি।
তবে সেদিন অসুস্থ হয়ে গেলেও দলের জয়ে বেশ বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সৌম্য। রান তাড়া করতে গিয়ে এক চার ও দুই ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৯ রানের এক ইনিংস খেলেছেন। যে ইনিংসটা বাংলাদেশকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পরে মুশফিকুর রহিম দুর্দান্ত এক হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামীকাল। সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে আগামীকাল রাজকোটে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। ওদিকে ভারতের লক্ষ্য থাকবে সিরিজে সমতায় ফেরার।