এস.কে. শাওন: গত ২ জুন টিভি স্ক্রিনে আপনারা যারা পুরো খেলা দেখেছেন,তাঁরা নিশ্চয়ই ২০১১বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশের মাত্র ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের দৃশ্যটি দেখেছেন। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বিচার-বিশ্লেষণও করে ফেলেছেন ২০১১ বিশ্বকাপের সেই বাংলাদেশ ও ২০১৯ বিশ্বকাপের এই বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে।
ওভালের রানপ্রসবা উইকেটে ৩৩০ রানের পর্বতসম স্কোর গড়েই হয়তো ম্যাচ জয়ের চিত্রটা এঁকে ফেলেছিল টাইগাররা। নইলে ম্যাচ জয়ের পর উৎসবটা এমন সাদামাটা হবে কেন!বিশ্বকাপ তো বটেই,ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৩০ রান বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের পাতায় এতো রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই। তাই জিততে হলে রেকর্ড গড়েই জিততে হবে প্রোটিয়াদের।টাইগারদের জন্য স্বস্তির ব্যাপার ছিল ইনজুরির জন্য একাদশের বাহিরে ছিলেন আমলা ও স্টেইন।পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুটা টাইগারদের চেয়ে একটু ধীর গতিতেই হয়েছে প্রোটিয়াদের।প্রথম ১০ ওভারে তাঁদের সংগ্রহ ছিল ৫১,এর মধ্যে মার্করাম -ডি ককের ভুল বুঝাবুঝিতে রানআউট ডি কক। তবে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং লাইন আপও যে কম লম্বা নয়!বাংলাদেশের বোলারদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারতেন মার্করাম,ডু প্লেসি, মিলার,ফন ডার ডুসেন,ডুমিনির যে কেউই।তাঁদের প্রত্যেকেই সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন।কিন্ত সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
অসাধারণ স্পিন ঘূর্ণিতে ৪৫ রান করা মার্করামকে বোল্ড করে ওডিয়াইতে ২৫০তম উইকেট তুলে নেন সাকিব।এই ফরম্যাটে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ৫ হাজার রান ও ২৫০ উইকেটের মালিক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। তরুণ তুর্কি স্পিন ভেল্কি মেহেদী মিরাজের স্পিন জাঁদুতে কাবু হন প্রোটিয়া দলপতি ডু প্লেসি।সম্ভবত এই উইকেটটিই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ প্রোটিয়াদের রানের চাকা সচল ছিল ডু প্লেসির ব্যাটিং শৈলীতে। ৫ চার ও এক ছক্কায় ৫৩ বলে ডু প্লেসির সংগ্রহ ৬২। \’কিলার\’খ্যাত ডেবিড মিলার ব্যক্তিগত ১৬ ও ৩১ রানে দুবার জীবন পান।তবে দুবার জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি।৪৩ বলে ৩৮ রান করে মোস্তাফিজে কাঁটা পড়েন তিনি। পরবর্তীতে ডুসেন (৪১) ও ডুমিনি(৪৫) চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন তাঁরা। এই ম্যাচের সেরা বোলার মোস্তাফিজ ৩ টি,সাইফউদ্দিন ২ টি,মিরাজ ও সাকিব ১ টি করে উইকেন নেন। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ ছিল টাইগারদের।প্রথম ১০ ওভারে তাদের সংগ্রহ ৬৫।এর মধ্যে নবম ওভারে ফিকোয়াওয়ে কাঁটা পড়েন ১৬ রান করা তামিম। প্রথম ১০ ওভারে আসা ১১ বাউন্ডারির মধ্যে ৮টিরই মালিক ৩০ বলে ৪২ রান করা সৌম্য।মাত্র ১৫ রানের ব্যবধানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর জুটি বাঁধেন সাকিব- মুশফিক। সাকিবের জার্সি নাম্নার ৭৫।কাকতালীয়ভাবে এই ম্যাচে তাঁর সংগ্রহও ৭৫!তাহিরের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৮৪ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় এ রান সংগ্রহ করেন সাকিব।এর পাশাপাশি ১ উইকেটের সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেন বাংলার ক্রিকেটের এই পোস্টার বয়।মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকের ৮ চারে ৮০ বলে সংগ্রহ ৭৮।সাকিব- মুশফিক গড়েছেন বিশ্বকাপ দলের পক্ষে যেকোন জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এই রেকর্ড পার্টনারশিপই বাংলাদেশের ৩০০ পেরোনো ইনিংসের টোটকা হিসেবে কাজ করেছে।তবে সাকিব -মুশফিকের বিদায়ের পর বাংলাদেশ ২৮০ রান করতে পারবে কিনা! তা নিয়ে শঙ্কার মেঘ জমেছিল দর্শকদের মনে।
অবশ্য সেই শঙ্কা দূর হয় মাহমুদউল্লাহ- মোসাদ্দেক জুটির ওপর ভর করে।\’সাইলেন্ট কিলার\’ মাহমুদউল্লাহ একবার জীবন পেয়ে ৩ চার ও ১ ওভার বাউন্ডারিতে ৩৩ বলে ৪৬ রান করেন।আর ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জয়ের কারিগর আত্মবিশ্বাসী মোসাদ্দেকের সংগ্রহ ২০ বলে ২৬ রান।৩৩০ রানের স্কোরে কোন সেঞ্চুরী নেই।তাতে কী! দলীয় পারফরম্যান্সটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।আর ব্যাটিং -বোলিংয়ের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ভর করেই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারালো বাংলাদেশ। রেকর্ডময় এ ম্যাচে দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে বিশ্বকাপের শুরুটা রঙিন করে রেখেছিল টাইগাররা।বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অন্যান্য দলগুলোকে যে বার্তা দিয়েছিল বাংলাদেশ,তাঁতে তাঁদের বুকে কাঁপন ধরাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।রেকর্ডের এই ম্যাচটি হয়তো শখের ডাকটিকিটের মতো স্মৃতির ক্যানভাসে জমিয়ে রাখতে চাইবেন টাইগাররা!