২২ গজে কত গল্প, কত রোমাঞ্চ, নখ কামড়ানো লড়াই। সফলতা-ব্যর্থতা, দিগন্ত জোড়া জয়ের হাসি, পরাজয়ের হতাশায় ম্লান মুখশ্রী দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। প্রকৃতির বৈরিতা, বিড়ম্বিত ভাগ্য, আবার সৌভাগ্যের পরশে স্নান করার দৃশ্যও দেখা গেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মঞ্চে। ইংল্যান্ডের মাটিতে গত দেড় মাসে আনন্দ-বেদনার এসব প্রহর পেরিয়ে বিশ্বকাপ চলে এসেছে সেই কাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণের দুয়ারে।
সোনালি ট্রফিটার জন্যই সর্বস্ব নিংড়ে দিয়ে লড়েছিল ১০টি দল। মঞ্চ থেকে ছিটকে পড়েছে আটটি দল। ট্রফি জয়ের মঞ্চে এখন শুধুই দুটি দল। ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসের বেলকনিতে আজ ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরার অসামান্য গৌরব অর্জনের নেশায় বুঁদ ইয়ন মরগান ও কেন উইলিয়ামসনরা। শুধু দলের অধিনায়ক, খেলোয়াড়রাই নন, স্বপ্নাতুর চোখে ট্রফির পানে চেয়ে আছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের আপামর জনতা।
এটুকু সত্য যে দলই ফাইনাল জিতুক, তাদের জন্য এটি হবে ইতিহাস। প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের অতুলনীয়, অমূল্য মুহূর্ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে ব্রিটিশ ও কিউইদের। নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট দুনিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মোহকে অন্তরে ধারণ করে বহু বছর ২২ গজে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এ দুটি দল।
ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ড তিনবার ট্রফির দুয়ার থেকে ফিরে গেছে শূন্য হাতে। ২৭ বছর পর ফাইনালে এসেছে ইংলিশরা। ব্রিটিশদের আভিজাত্যকে এবার ট্রফির আবেশে ভাসাতে এবং পূর্ণতার তৃপ্তি এনে দিতে মুখিয়ে থাকবেন মরগান-জ্যাসন রয়রা। সর্বশেষ আসরে ফাইনালে উঠলেও ট্রফির নাগাল পায়নি নিউজিল্যান্ড। টানা দ্বিতীয়বার বিস্বাদের ফাইনাল নিশ্চিতভাবেই চাইবেন না উইলিয়ামসন-বোল্টরা।
দুই দলেই আছে ফাইনাল জয়ের পরিপূর্ণ রসদ। দুর্দান্ত সব ক্রিকেটারে ঠাসা ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। কিন্তু লর্ডসে আজ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ফাইনালে নায়ক হবেন কারা? প্রতিটি ম্যাচেই যে কোনো দলের জয়ের নায়ক বা নায়করা থাকেন যারা বলে-ব্যাটে ব্যবধান গড়ে দেন।
ব্যাটিংয়ে ওপেনার জ্যাসন রয়, বোলিংয়ে জোফরা আর্চার স্বাগতিকদের তুরুপের তাস। জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, জো রুট, মরগান, ক্রিস ওকসরাও প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ের কারণ হবেন। তবে বিশ্বকাপের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বলছে নিউজিল্যান্ডের জন্য বড়ো হুমকি আসলে জ্যাসন রয় ও আর্চার।
সন্দেহাতীতভাবে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের প্রাণ ভোমরা কেন উইলিয়ামসন। বোলিংয়ে ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরিরা নতুন বলে ঝড় তুললেও দুরন্ত গতির লকি ফার্গুসনই কিউইদের মূল অস্ত্র। রস টেইলর, জিমি নিশামরা দলের প্রয়োজনে অবদান রাখছেন। তবে নিউজিল্যান্ড মুখিয়ে থাকবে টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাট হাতে ‘ঘুমন্ত’ ওপেনার মার্টিন গাপটিলের জেগে উঠার দৃশ্য দেখতে।
ইংল্যান্ডের পক্ষে ১০ ম্যাচ খেলে রুট দুটি সেঞ্চুরিতে ৫৪৯, বেয়ারস্টো দুটি সেঞ্চুরিতে ৪৯৬ রান করেছেন। জ্যাসন রয় ৭ ম্যাচ খেলে একটি সেঞ্চুরি, চারটি হাফ সেঞ্চুরিতে ৪২৬ রান করেছেন। রুট-বেয়ারস্টোর চেয়ে ভয়ঙ্কর জ্যাসন রয়। ইনিংসের শুরুতে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সিদ্ধহস্ত তিনি। টুর্নামেন্টে তার স্ট্রাইক রেট ১১৭.০৩। প্রতিপক্ষের বোলিংকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দাপুটে শুরুর জন্য ডানহাতি এ ওপেনারের ব্যাটের পানেই চেয়ে থাকবে ইংল্যান্ড।
বড়ো চমক হয়ে বিশ্বকাপ দলে আসা জোফরা আর্চার গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ ধারাবাহিক। গতির সঙ্গে ব্যাটসম্যানকে ভড়কে দেওয়া বাউন্সারে মূর্ত এ ফাস্ট বোলার। ১৯ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা উইকেটশিকারী তিনি। মার্ক উড, ক্রিস ওকসরা থাকলেও শুরুর ধাক্কার জন্য আর্চারের বোলিংই ইংল্যান্ডের বড়ো ভরসা।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড মূলত উইলিয়ামসন। দুই সেঞ্চুরিতে ৫৪৮ রান করেছেন তিনি। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩৫ রান করেছেন রস টেইলর। এখানেই স্পষ্ট দলটির উইলিয়ামসন নির্ভরতা। আজ ফাইনালেও তার ব্যাটেই আশ্রয় খুঁজবে কিউইরা। বোল্ট-হেনরিরা গতি, সুইংয়ের প্রদর্শনী করে সফল হয়েছেন। শুরুতে তাদের ঝড়টা কাটিয়ে দিলেও ফার্গুসনের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে সব দলকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে। গতিময় এ ফাস্ট বোলার মাঝের ওভারগুলোতে রান আটকে ধরার সঙ্গে উইকেট এনে দেন। আট ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের চতুর্থ সেরা বোলার ফার্গুসন। আজ ইংল্যান্ডকে কঠিন সময় উপহার দিতে পারেন এ কিউই বোলার।