হেডিংলির ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ক্রমশ মন্থর হয়ে ওঠায় সহজ লক্ষ্য তাড়ার বিপদে পড়েছিল পাকিস্তান। একটা সময় তো হারের শঙ্কায় ভর করেছিল দলটির উপর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক প্রান্ত আগলে থাকা ইমাদ ওয়াশিম তেমনটি হতে দেননি। দারুণ এক লড়াকু ইনিংস খেলে শেষ ওভারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের নাটকীয় জয় এনে দিলেন তিনি। আর তাতে সরফরাজ আহমেদের দলটির চলতি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন বেশ ভালোভাবেই টিকে থাকল।
লিডসের হেডিংলিতে শনিবার আফগানদের ৩ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। প্রতিপক্ষের দেওয়া ২২৮ রান টপকাতে এদিন পাকদের লেগেছে ৪৯.৪ ওভার। হারাতে হয়েছে ৭টি উইকেট। এ জয়ে দলটির নায়ক ইমাদ ওয়াশিম। এ বাঁহাতি ৫৪ বলে ৫ চারে ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। এরআগে বল হাতে ৪৮ রানে তিনি নিয়েছিলেন ২ উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই এ অলরাউন্ডার হয়েছেন ম্যাচ সেরাও।
সহজ লক্ষ্য ছুঁতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বিপদে পড়েছিল পাকিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফখর জামানকে হারায় দলটি। এদিকে দলীয় ২৭ রানে মোহাম্মদ নবীর বলে স্টাম্পিং হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হক (৩৬)। পরে বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ ধরেন পাকদের হাল। এক প্রান্ত আগলে রেখে বাবর তার মতই খেলছিলেন। ৫১ বলে ৫ চারে ৪৫ রানও তুলে নিয়েছিলেন এ ডানহাতি। অন্য দিকে হাফিজ ছিলেন কিছুটা ধীরে। ঠিক সময়ই বাবরকে বোল্ড করে পাক শিবিরে বড় ধাক্কা দেন সেই নবী। এর কিছুক্ষণ পরই মজিব-উর-রহমানের শিকার হন হাফিজ।
হারিস সোহেল চেষ্টা করেছিলেন দলের বিপদে বুক চিতিয়ে লড়তে। কিন্তু দলীয় ১৪২ রানের মাথায় রশিদ খানের বলে ব্যক্তিগত ৫৭ বলে ২ চারে ২৭ রান করে এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই ইমাদ ওয়াশিমের সঙ্গে ভুলে দুই রান নিতে গিয়ে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ কাটা পড়েন রান আউটের ফাঁদে পড়ে। সে সময় পাকিস্তানের জয় অনেক দূরে। ঠিক তখনই সাদাব খানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ইমাদ। এক প্রান্ত আগলে এ বাঁহাতি স্টাইক রোটেড করে পাকদের এগিয়ে নেন। ৭ম উইকেটে তারা যোগ করেন ৫০ রান। ৪৬.৪ ওভারে দলীয় রানও ২০৬ রানও পার করান। সে সময় পাকিস্তানের জয়টা সময়ের ব্যাপারই মনে হয়েছিল অনেকের। কিন্তু সাদাব খানের রান আউটই আবার ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মঞ্চ তৈরি করেছিল। শেষ পর্যন্ত তেমনটি হতে দেননি ইমাদ। অষ্টম উইকেটে জয়ের বাকি কাজটুকু তিনি সারেন ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে। শেষ দিকে ৯ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ওয়াহাব ১৫ রানের কার্যকরী ঝড়ো ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে ইমাদও ৫৪ বলে ৫ চারে ৪৯ রান করে ম্যাচ জিতিয়েই ফেরেন। তাতে পাকিস্তানি সমর্থকরা পায় শান্তি।
মোহাম্মদ নবী ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৩ রানে নেন ২টি উইকেট। মজিব-উর-রহমান ৩৪ রানে নেন ২টি উইকেট। এদিকে রশিদ খান ১০ ওভারে ৫০ রানে পকেটে পুরেন ১টি উইকেট।
এরআগে টস হেরে আগে বল হাতে নিয়ে প্রতিপক্ষের ৯ উইকেট তুলে নিয়ে ২২৭ রানে আটকে দেয় পাকিস্তান। আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন নজিবুল্লাহ জাদরান ও আজগর আফগান। ৩৫ রান আসে রহমত শাহর ব্যাট থেকে। পাকিস্তানের সফল বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি। এ পেসার ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে নেন ৪৭ রানে ৪টি উইকেট। এদিকে ইমাদ ওয়াশিম পকেটে পুরেন ৪৮ রানে ২টি উইকেট। ওয়াহাব রিয়াজ ৮ ওভারে ২৯ রানে নেন ২টি উইকেট। শাদাব খান ৪৪ রানে নেন ১টি উইকেট।
হেডিংলির উইকেট ব্যাটিং সহায়ক। এ ভাবনা থেকেই আফগানিস্তান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব নেন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু নিজেই শুরুতেই নিজেকে সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করেন। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় পঞ্চম ওভারেই বিদায় নেন নাইব (১২ বলে ১৫)। শাহিন আফ্রিদির পরের বলেই আবার সাজঘরে ফেরেন হাশমতউল্লাহ শহীদি (০)। ২৭ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানরা তৃতীয় উইকেট হারায় ৫৭ রানে। দলের রান তোলার পুরো দায়িত্ব কাঁধে নেয়া রহমত (৪৩ বলে ৩৫ রান) ফিরেন ইমাদ ওয়াসিমের স্পিন বুঝতে না পেরে।
দ্রুত উইকেট হারালেও এক প্রান্ত আগলে ছিলেন ইকরাম আলীখিল। আরেক প্রান্তে অবশ্য তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আফগান আজগর। ৬৪ রানের জুটিতে ৪২ রানই ছিল তাঁর। সেটাও এসেছে মাত্র ৩৫ বলে। শাদাব খানকে এগিয়ে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বোল্ড হন আফগান (১২১/৪)। এর কিছুক্ষণ পরই বিদায় নেন আলীখিল। তার আগেই একটা কীর্তি হয়েছে এই উইকেটরক্ষকের। এ বিশ্বকাপে পঞ্চাশোর্ধ্ব বল খেলে তার চেয়ে কম স্ট্রাইক রেট (৩৬.৩৬) নেই আর কারও! ৬৬ বলে ২৪ রান করেন আলীখিল।
অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়া আফগানদের ষষ্ঠ উইকেটে হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ নবী। খেলছিলেনও দেখে-শুনে। অন্য প্রান্তে নজিবুল্লাহ জাদরানও খেলেন দারুণ। কিন্তু এ জুটিকে ৪২ রানের বেশি করতে দেননি ওয়াহাব রিয়াজ। ৩৭তম ওভারের চতুর্থ বলটি অনেকটা ছিল শর্ট। লোভ সামলে পারেননি নবী। বড় শর্ট খেলতে গিয়ে এ ডানহাতি ধরা পড়েন ফাইন লেগে মোহাম্মদ আমিরের ক্যাচে। ফেরার আগে আফগান এ অলরাউন্ডার করেন ৩৩ বলে ১৬ রান।
নবী ফিরলেও আফগানদের পথ দেখান নজিবুল্লাহ জাদরান। সপ্তম উইকেটে সামিউল্লাহ শিনওয়ারিকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ৩৫ রানের জুটি। যেখানে ২২ রানই ছিল নজিবুল্লাহর। ব্যক্তিগত রানও তার হয়েছিল ৪২। ঠিক সে সময় বিপজ্জনক এ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে ফেরান শাহিন আফ্রিদি। এর কিছুক্ষণ পরই এ পেসার মোহাম্মদ হাফিজের ক্যাচে ফিরিয়ে দেন রশিদ খানকে। শেষ দিকে অবশ্য শিনওয়ারির (১৯*) ব্যাটে ভর করে আফগানরা পৌঁছে যায় ২২৭ রানে। মাঝারি মানের এ পুঁজি নিয়েও শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে আফগানরা। দলটির ফিল্ডিং যদি এদিন আরেকটু ভাল হতো তবে চলতি বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ পেত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেননি ইমাদ ওয়াশিম। বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও তিনি বনে যান পাকিস্তানের নাকটীয় জয়ের নায়ক।
আফগানদের হারিয়ে ৮ ম্যাচে ৪ জয় ও ১টি পরিত্যাক্ত ম্যাচের সুবাদে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে অবস্থান করছে পাকিস্তান। এদিকে আফগানরা ৮ ম্যাচের সবকটিতে হেরে আগেই মতই সবার শেষে অবস্থান করছে।
লেটেস্টবিডিনিউজ/কেএস