ম্যাচের প্রথম ইনিংসের পরই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছিল জয়ী দলের নাম। আগে ব্যাট করে ৩৮৬ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে জয়ের বন্দরে এক পা দিয়েই রেখেছিল ইংল্যান্ড। দেখার বিষয় ছিলো এ বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কেমন জবাব দেয় বাংলাদেশ।
এ বিশাল সংগ্রহের পেছনে ছুটে ইনিংসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভালোই লড়েছিল টাইগাররা। চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু বাকিদের কাছ থেকে সে অর্থে সমর্থন না পাওয়ায় ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধানটা বেশ বড়, ১০৬ রানের।
ইংল্যান্ডের করা ৩৮৬ রানের জবাবে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করে ১২০ রানের ইনিংস খেলেন। তবু নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৭ বল বাকি থাকতেই ২৮০ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ১০৬ রানের বড় ব্যবধানের জয়ে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে স্বাগতিকরা।
৩৮৭ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে প্রয়োজন ছিলো ঝড়ো উদ্বোধনী জুটি। কিন্তু দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল ব্যর্থ হন সেটি এনে দিতে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দলীয় ৮ রানের মাথায় মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য।
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তামিম ইকবালও। দেশসেরা এ ওপেনারের ব্যাট থেকে ২৯ বলে আসে মাত্র ১৯ রান। তবে তৃতীয় উইকেটে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দেন মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান।
দুজন মিলে টানা পঞ্চম ম্যাচে গড়েন পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি। সেটিকে পরিণত করেন ১০৬ রানের জুটিতে। ব্যক্তিগত ফিফটির খুব কাছে গিয়ে ক্যাচ আউট হন মুশফিক। আউট হওয়ার আগে ২ চারের মারে ৫০ বল খেলে ৪৪ রান করেন তিনি।
মুশফিক ফিফটি করতে ব্যর্থ হলেও সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব আল হাসান। চাপের মুখে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন তিনি। তার আগে বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি ছিলো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি করেন রিয়াদ। তার আগে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি ছিলো না বিশ্বকাপে। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৬ বলে সেঞ্চুরি করেন সাকিব। ৯ চার ও ১ ছয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেন সাকিব।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি সাকিবের অষ্টম সেঞ্চুরি। ৫৩ বলে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পর ৫০ থেকে ১০০\’তে পৌঁছতে সাকিব খরচ করেছেন মাত্র ৪৩ বল। ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে পেছনে ফেলে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও এখন তিনি।
২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এই কার্ডিফেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব আল হাসান। দুই বছরের ব্যবধানে এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফের মাঠে তিন অঙ্কের দেখা পেয়ে যান সাকিব।
তবে নিজের ইনিংসটি বেশি বড় করতে পারেননি বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। ব্যক্তিগত ১২১ রানের মাথায় তিনি আউট হন সরাসরি বোল্ড হয়ে। এরপর আর তেমন কিছু করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৪০ বলে ২৮), মোসাদ্দেক সৈকত (১৬ বলে ২৬), মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (৮ বলে ৫) ও মেহেদী মিরাজরা (৮ বলে ১২)।
ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৭ বল বাকি থাকতেই ২৮০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন জোফ্রা আর্চার ও বেন স্টোকস। এছাড়া মার্ক উড নেন ২টি উইকেট।
কার্ডিফে আজ (শনিবার) টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করে টাইগাররা। সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে শুরুতে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় ছিল ইংলিশরা।
প্রথম ৫ ওভারে ইংল্যান্ড তুলতে পেরেছিল মাত্র ১৫ রান। কিন্তু পরে সুদে আসলে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন দুই ওপেনার জেসন রয় আর জনি বেয়ারস্টো। তেড়েফুড়ে ব্যাটিং করছিলেন তারা।
কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২০তম ওভারে এসে ১১৫ বলে গড়া ১২৮ রানের বিধ্বংসী এই জুটিটি ভাঙেন মাশরাফি। উইকেট না পড়ায় এই ওভারে রাউন্ড দ্য উইকেটে এসেছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। প্রথম বলেই তাকে খেলতে গিয়ে শর্ট কভারে বল উঠে যায় বেয়ারস্টোর, বাজপাখির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫০ বলে ৫১ করে আউট হন বেয়ারস্টো।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে জো রুটকে নিয়ে ৭৭ রানের আরেকটি জুটি গড়েন রয়। ৩২তম ওভারে এসে রুটকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোর্ড করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ২৯ বলে রুট করেন ২১ রান।
সেঞ্চুরির পর জেসন রয় ভয়ংকর থেকে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজকে তো এক ওভারে টানা তিন ছক্কাও হাঁকিয়ে দিলেন। ইনিংসের ৩৫তম ওভারে মিরাজের উপর এই তাণ্ডব চালান রয়। তবে তাতে দমে যাননি টাইগার অফস্পিনার। চতুর্থ বলে ঠিকই রয়কে আউট করে দিয়েছেন। মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্যাচ হয়ে ইংলিশ ওপেনার ফিরেছেন ১২১ বলে ১৫৩ রান করে, বিধ্বংসী এ ইনিংসে ১৪ বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল ৫টি ছক্কার মার।
চতুর্থ উইকেটে আরেকটি বড় জুটি ইংল্যান্ডের। জস বাটলার আর ইয়ন মরগান এই জুটিতে যোগ করেন ৯৫ রান। শেষ পর্যন্ত মারকুটে বাটলারকে (৪৪ বলে ২ চার আর ৪ ছক্কায় ৬৪) বাউন্ডারিতে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান সাইফউদ্দিন।
৪৭ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মিরাজ। চতুর্থ বলে বাউন্ডারিতে মরগান ক্যাচের মতো তুলে দিয়েছিলেন, দৌড়ে গিয়ে তামিম কোনোমতে হাত ছোঁয়ালেও ক্যাচটি তালুবন্দী করতে পারেননি। পরের বলে আবারও তুলে মারেন মরগান। এবার বাউন্ডারিতে একইভাবে দৌড়ে এসে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন সৌম্য। ৩৩ বলে ৩৫ করে ফেরেন মরগান।
পরের ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে আকাশে ক্যাচ তুলে দেন ৬ রান করা বেন স্টোকস। পয়েন্টে মাশরাফি ক্যাচটা মিসই করে ফেলেছিলেন, তিনবারের চেষ্টায় শেষপর্যন্ত শুয়ে বল তালুবন্দী করেন টাইগার দলপতি।
তবে ৩৪১ রানে ৬ উইকেট ফেললেও ইংল্যান্ডের রানের বান আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। ক্রিস ওকস ৮ বলে ১৮ আর লিয়াম প্লাংকেট ৯ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। মাশরাফি বিন মর্তুজা আর মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।
লেটেস্টবিডিনিউজ/ এসবিএন