ওসহানে থমাস, জেমন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেল ও শেলডন কর্টেলের পেসের সামনে শুক্রবার ট্রেন্ট ব্রিজের ২২ গজে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। রীতিমত খাবি খেয়ে একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দেন ফখর জামান-বাবর আজমরা। তাইতো একশ পেরিয়েই গুটিয়ে যায় মিকি আর্থারের শিষ্যরা। কিন্তু সেখানেই ঝড় তুলেন ক্রিস গেইল। মাত্র ৩৩ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। শেষ পর্যন্ত তার ব্যাটে ভর করে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে শুক্রবার টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২১.৪ ওভারে ১০৫ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। দলটির সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ২২ করেন ফখর জামান ও বাবর আজম। ওয়াহাব রিয়াজ ১৮ ও মোহাম্মদ হাফিজ করেন ১৬ রান। জবাব দিতে নেমে ১৩.৪ ওভারে ৩.উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলটির হয়ে ক্রিস গেইল করেন ৩৬ বলে ৬ চার ও ৩ ছয়ে ৫০ রান। এছাড়া নিকলস পুরান ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ১০৬ রানের লক্ষ্যটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ছিল একবারেই মামুলি ব্যাপার। সেটাই শুরুতে দেখান দলটির দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও শেই হোপ। তারা ৪.৩ ওভারে তোলেন ৩৬ রান। এরপর মোহাম্মদ আমিরের বলে বোল্ড হয়ের ফিরেন হোপ (১১)। কিছুক্ষণ পরই আবার উইন্ডিজ শিবিরে ছোবল দেন সেই আমির। এবার এ বাঁহাতি দ্বিতীয় স্লিপে হারিস সোহেলের ক্যাচে সাজঘরের পথ দেখান ড্যারেন ব্রাভোকে। তবে এক প্রান্তে ঝড় অব্যহত রাখেন ক্রিস গেইল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলিকে পরপর দুটি চারে স্বাগত জানান তিনি। এক ওভার পর আবার একই বোলারের দুটি বলকে পরপর ছয়ে পরিণত করেন এ ব্যাটিং দানব। এরপর ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে হাসানের বলে আবারও বিরতি দিয়ে দুটি চার আদায় করে নেন তিনি। তাতে জয়ের পথে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এদিকে ইনিংসের দশম ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের উপর ঝড় তোলেন গেইল। প্রথম বলে বিশাল এক ছয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে অফ ও লেগ দিয়ে দুটি চার। এ ধারাবাহিকতায় এ বাঁহাতি মাত্র ৩৩ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। সে সময় তিনি হাঁকান ৬ চার ও ৩ ছয়। অবশ্য এর এক বল পরই তিনি মোহাম্মদ আমিরের তৃতীয় শিকার হয়ে সাদাব খানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। ততক্ষণে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় উইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত তার দেখানো পথে দারুণভাবেই পৌঁছে যায় জেসন হোল্ডারের দল।
পাকিস্তানের হতাশার দিনে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নামা মোহাম্মদ আমির। এ বাঁহাতি পেসারই শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের একটু হলেও ভুগিয়েছেন। এরফলও তিনি পেয়েছেন। নিয়েছেন ৬ ওভারে ২৬ রানে ৩টি উইকেট।
এরআগে ট্রেন্ট ব্রিজের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দাপট দেখাতে পারেনি পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা। উল্টো কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররাও জ্বলে ওঠেন। শুরু থেকেই পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা শর্ট বলে খাবি খেতে থাকেন। সেই সুবিধা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে জেসন হোল্ডার, ওসান টথমাস, আন্দ্রে রাসেলরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিতে থাকেন। যার শুরুটা তারা করেছিলেন তৃতীয় ওভারের শেষ বলে। শেলডন কটরেলের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে দাঁড়ান শেই হোপের হাতে ধরা পড়ে ফিরেন ইমাম-উল-হক। কিছুক্ষণ পরই আন্দ্রে রাসেলের বাউন্সার ফখর জামানের হেলমেটের গ্রিল লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে দিশেহারা পাকিস্তানকে পথ দেখাতে পারেননি বাবর আজম (১২)। তাকে ফেরান ওসান থমাস। অনেকটা সময় ক্রিজে থাকা মোহাম্মদ হাফিজও ফিরেন তার গতিময় বাউন্সারে। যে কারণে একশ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল পাকিস্তান। তবে নয় নম্বর ব্যাটসম্যান ওয়াহাব রিয়াজ হতে দেননি সেটা। তার ১৮ রানে ভর করে তিন অঙ্কের কোঠা পার করে সরফরাজ আহমেদের দল।
বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের সর্বনিম্ন (১০৫) স্কোর। গত বিশ্বকাপে ক্রাইস্টচার্চে করা ১৬০ ছিল তাদের আগের সর্বনিম্ন। তবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দেশটি সর্বনিম্ন স্কোর করেছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। সেদিন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলটি মাত্র ৭৪ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার থমাস। অধিনায়ক হোল্ডার ৩ উইকেট নেন ৪২ রানে।
লেটেস্টবিডিনিউজ/এনপিবি