বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনাল মানেই যেন বাংলাদেশের জন্য হৃদয়ভাঙার স্মৃতি। ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে টাইগাররা। কিন্তু কোনোবারই পায়নি শিরোপা জয়ের স্বাদ, প্রতিবার খুশি থাকতে হয়েছে রানার্সআপ হয়েই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ আরও একটি সিরিজের ফাইনালে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সপ্তম ফাইনালে এসে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে কি-না, সেটা বলবে সময়। তার আগে একবার ঘুরে আসা যাক আগের ছয় ফাইনাল থেকে
২০০৯ :ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল
প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে হারলেও নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সুবাদে নিশ্চিত করে সিরিজের ফাইনাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৪৯.২ ওভারে ১৫২ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। বল হাতে অবশ্য শুরুতেই দারুণভাবে আঘাত হানে তারা। ছয় রান তুলতেই লংকানরা হারিয়ে ফেলে পাঁচ উইকেট। তবে ষষ্ঠ উইকেটে জিহান মুবারকের সঙ্গে ৪৫ আর সপ্তম উইকেটে ফারভেজ মাহারুফের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটিতে দলকে ম্যাচে ফেরান কুমার সাঙ্গাকারা। তিন বলের ব্যবধানে ৫৯ রান করা সাঙ্গাকারা আর নুয়ান কুলাসেকারাকে তুলে নিয়ে আবারও জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন সাকিব আল হাসান। তবে সেদিন বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন ভাঙেন হঠাৎই ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া মুত্তিয়া মুরালিধরন। তার ১৬ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংসে ভর করে দুই উইকেটের জয় পায় লংকানরা।
২০১৬ :এশিয়া কাপ ফাইনাল
টি২০ ফরম্যাটে হওয়া টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের দৈর্ঘ্য বৃষ্টির কারণে নেমে এসেছিল ১৫ ওভারে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ তুলেছিল ১২০ রান। ভারতীয় টপঅর্ডারের ব্যাটিং তোপে সেই সংগ্রহই হয়ে যায় মামুলি। শিখর ধাওয়ানের ৪৪ বলে ৬০, বিরাট কোহলির ২৮ বলে ৪১ আর শেষদিকে মহেন্দ্র সিং ধোনির ৬ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় করা ২০ রানের ঝড়ো ইনিংসে আট উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।
২০১৮ :ত্রিদেশীয় সিরিজ ফাইনাল
ফাইনালের আগের ম্যাচটাতেই শ্রীলংকার বিপক্ষে মাত্র ৮২ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ, ম্যাচ হেরেছিল ১০ উইকেটে। শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে বোলিংটা ভালো হলেও ব্যাটিং ছিল ব্যর্থতার বৃত্তেই। আগে ব্যাট করা শ্রীলংকাকে ২২১ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয়ের সম্ভাবনা ভালোভাবেই টিকিয়ে রেখেছিল টাইগাররা। কিন্তু ব্যাটিংয়ে শুরুতেই লাগে বড় ধাক্কা। ৯০ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে। রিয়াদ একা করেন ৭৬, অতিরিক্ত থেকে আসে ১১, দলের বাকি সবার সম্মিলিত অবদান ৫৫! বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৪২ রানে।
নিদাহাস ট্রফি ফাইনাল
আরও একটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল, আরও একবার শেষ বলে স্বপ্নভঙ্গ। ভারতের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে সাব্বির রহমানের ৫০ বলে ৭৭, মেহেদী হাসান মিরাজের ৭ বলে ১৯ আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৬ বলে ২১ রানের ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ১৬৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। বোলাররা এরপর বেশ চাপেই ফেলে দিয়েছিল ভারতকে। শেষ ২ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৩৪ রান, হাতে ছিল পাঁচ উইকেট। রুবেল হোসেনের ১৯তম ওভার থেকে দিনেশ কার্তিক নেন ২২ রান। শেষ ওভারে ১২ রান পুঁজি করে দারুণ বোলিংয়ে সৌম্য সরকার ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিলেন শেষ বল পর্যন্ত। সেই বলে ভারতের লাগত পাঁচ রান। শেষ বলটি কভারের ওপর দিয়ে ছয় মেরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন কার্তিক।
২০১৮ :এশিয়া কাপ ফাইনাল
ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচটিতেও জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছিল ম্যাচের শেষ বলে গিয়ে। তবে সেটা মূলত শেষদিকে ভারতের শম্বুকগতির ব্যাটিংয়ের সুবাদেই। আগে ব্যাট করে লিটন দাসের ১২১ রানের দারুণ এক ইনিংসের পরও বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২২২ রানে। লক্ষ্য তাড়ায় ভারত নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও জয়ের পথ থেকে ছিটকে যায়নি কখনোই। ৩৭তম ওভারে মহেন্দ্র সিং ধোনি যখন পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন, ভারত তখন জয় থেকে ৬৩ রান দূরে। এরপর কেদার যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজার দুটি ২৩ রানের ইনিংস ও ভুবনেশ্বর কুমারের ২১ রানের ইনিংসে ৩ উইকেটের জয় পায় ভারত।
২০১২ :এশিয়া কাপ ফাইনাল
প্রাথমিক পর্বের ম্যাচে ভারত ও শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। শিরোপার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান, প্রাথমিক পর্বের একমাত্র হারটা ছিল যাদের বিপক্ষে। আগে ব্যাট করা পাকিস্তানকে ৫০ ওভারে ২৩৬ রানেই বেঁধে ফেলেছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় স্কোরকার্ড সচল থাকলেও রান তোলার গতি ছিল স্লথ। তবে শেষদিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর মাশরাফি বিন মুর্তজার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ দুই ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯ রান। মাশরাফি ফিরে গেলেও শেষ ওভারে ৯ আর শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৪ রান। পাকিস্তানি পেসার আইজাজ চিমা পঞ্চম বলে বোল্ড করেন আবদুর রাজ্জাককে। আর শেষ বলে লেগবাই থেকে আসে ১ রান। ২ রানের সেই হৃদয়ভাঙা হার বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় পরাজয়ের একটি।