আইপিএলের মত একটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে এমন দুটি দলকেই হয়তো দর্শক-সমর্থকরা আশা করে, যাদের ওপর আস্থা বেশি তাদের। সন্দেহ নেই, আইপিএলে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালি দুটি দল চেন্নাই সুপার কিংস আর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। সবচেয়ে বেশি ৩বার করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব শুধুমাত্র এই দুটি দলেরই দখলে।
সর্বোচ্চ অষ্টমবার ফাইনাল খেলছে চেন্নাই। আইপিএলে এ নেয় দ্বাদশ আয়োজন। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই আসরে খেলতে পারেনি মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। বাকি ১০ বারের মধ্যে ৮বারই ফাইনাল খেলছে তারা। বোঝাই যাচ্ছে, আইপিএল মানেই চেন্নাই। গত আসরের চ্যাম্পিয়নও তারা। এবার আবারও শিরোপার সামনে দাঁড়িয়ে সুপার কিংসরা। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে জমজমাট ফাইনালের লড়াই।
অন্যদিকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স খেলছে পঞ্চম ফাইনাল। জিতেছে তিনটিতে। এবার নিয়ে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে রোহিত শর্মার দল। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে মাঠে নামা মানেই মুম্বাইয়ের জয়। সে ধারা বজায় থাকলে এবারও চ্যাম্পিয়ন তারা, কোনো সন্দেহ নেই।
আইপিএল চেন্নাই সম্পর্কে তথ্যগুলো জানলে অবাকই হতে হয়। ১২ বারের আইপিএলে তারা প্লে-অফেই খেলেছে ১০ বার! বাকি দু’বার তো তারা আইপিএলেই ছিল না, ছিল নিষিদ্ধ। অর্থ্যাৎ, চেন্নাই আইপিএলে খেলা মানেই প্লে-অফ নিশ্চিত। কোনোবারই তারা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়নি।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স প্লে-অফ খেলেছে ৮ বার! চেন্নাই ছাড়া এমন সাফল্য আর কোন দলের আছে? কিন্তু এ দু’দলের এমন সাফল্যের রহস্য কি? চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রে বলা যায়, টানা এত বছর ধরে মোটামুটি একটা কোর টিম ধরে রাখলে কী হয়, তার আদর্শ উদাহরণ চেন্নাই।
ধোনি-রায়না-জাদেজা-ব্রাভো-মুরালি বিজয়, খুব একটা বদলায়নি চেন্নাই সুপার কিংস। এটাই তাদের সাফল্যের মূল। মুম্বাইও প্রায় সে পথেই এগিয়েছে। পোলার্ড এত বছর ধরে টানা মুম্বাইয়েই খেলে যাচ্ছে। বারবার দল বদলালে দলের মধ্যে ভারাসাম্য আসে না। তারপর ধোনি আর রোহিতের মতো নেতা পেয়েছে দুটি দলই। সাফল্য আসার কথাই।
আরও একটা ব্যাপার আছে। নিলামে দুটো দলই অনেক বেশি অঙ্ক কষে নামে। চেন্নাই এবার হরভজনকে কিনে নিয়েছে। তা দেখে তখন অনেকেই নাক সিঁটকেছিল; কিন্তু ভাজ্জি দেখিয়ে দিলেন সবাইকে। নিলামে এরকম অঙ্ক কষে নামাটা অন্য দলের মধ্যে দেখা যায় কম।
তবে পরিসংখ্যানের বিচারে আজ এগিয়ে মুম্বাই। সেটা ৫৫-৪৫। মুম্বাইকে এগিয়ে থাকার কারণ, দলের ভারসাম্য। দুই দলকে পাশাপাশি রাখলে, ধোনিদের চেয়ে প্রতিটি বিভাগে এগিয়ে রোহিতরা। পেস বোলিংয়ে মালিঙ্গা-বুমরার সঙ্গে হার্দিক পান্ডিয়া রয়েছে। তিনজনই ম্যাচ জেতাতে পারে যে কোনো সময়।
বিশেষ করে বুমরা। ডেথ ওভারে অসাধারণ। ধোনির হাতে ডেথ ওভারে তেমন কোনো বোলার নেই বুমরার মতো। চেন্নাই পেসার দীপক চাহার শুরুর দিকে ভালো বল করলেও ডেথ ওভারে মার খাচ্ছে প্রচুর। ব্র্যাভোর বোলিংয়েও সেই আগের ঝাঁঝ নেই। তাছাড়া মুম্বইয়ে ম্যাচ জেতানোর ক্রিকেটারের সংখ্যাও বেশি। সব মিলিয়ে রোহিতরাই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
আজ লড়াইটা হবে মূলতঃ ভাজ্জি-তাহির বনাম মুম্বাই ব্যাটিংয়ের। ইমরান তাহির খুব ভালো বল করলেও ফাইনালে ওকে বাজি ধরা যাচ্ছে না। হরভজনও ভালো বল করছে; কিন্তু তারপরও মুম্বাই খুব বড় সমস্যায় পড়বে না হয়তো। কারণ, ওদের ব্যাটসম্যানরা স্পিন খুব ভালো খেলে।
রোহিতের সঙ্গে সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়ারাও স্পিনে স্বচ্ছন্দ্য। এমনকি কাইরন পোলার্ডও স্পিনে এখন পারদর্শী। সে দিক থেকে তাহির-ভাজ্জি খুব বড় সমস্যায় ফেলবে বলে মনে হয় না। হায়দরাবাদের যা উইকেট, সেখানে ধোনি তৃতীয় স্পিনার হিসেবে জাদেজাকেও খেলাবে বলে মনে হয় না।
তবুও দু’দলের লড়াইটা হবে মূলতঃ মিডল অর্ডারে। এখানেও মুম্বাইকে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। চেন্নাইয়ের ওপেনিং জুটি সেভাবে ফর্মে নেই। ডু প্লেসি-ওয়াটসনই হোক বা ওয়াটসনের সঙ্গে বিজয়ই খেলুক, এখনও ওপেনিং জুটি থেকে খুব বড় রান আসেনি। ফলে চাপ পড়ছে মিডল অর্ডারে।
সেখানে রায়ডু খুব একটা ফর্মে নেই। কেদার যাদব চোটের কারণে বাইরে। বিজয়কে খেলালেও রান পাচ্ছে না। রায়নার উপর ভরসা করা যায়; কিন্তু তার মধ্যেও ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। ফাইনালে রায়না জ্বলে উঠলে অবশ্য ম্যাচের ফলাফল বদলে যেতে পারে। সুতারং, ঘুরেফিরে সেই ধোনির উপরেই দায়িত্ব বর্তাচ্ছে। ধোনি যথেষ্ট চেষ্টা করছে; কিন্তু প্রতিদিনই একা কি করবে?
লড়াই হবে দুই অধিনায়ক ধোনি আর রোহিতের মধ্যেও। ধোনির সঙ্গে নেতা হিসেবে রোহিতের অনেক মিল রয়েছে। অসম্ভব ঠাণ্ডা মাথার। চাপের মুখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বোলিং চেঞ্জ বা ফিল্ডিং সাজানো, দুটো বিষয়েই বেশ ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন রোহিত। ধোনির ভালো গুণ রোহিতের মধ্যেও রয়েছে। সুতরাং, দুই সেরা নেতৃত্বের মগজের যুদ্ধ দেখারও অপেক্ষায় থাকবে সমর্থকরা।
হায়দরাবাদের উইকেটও একটা ফ্যাক্টর। ফাইনালের উইকেটে ভালো বাউন্স থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বল ক্যারি করবে। স্পিনারদের চেয়েও পেসাররা এই উইকেটে বেশি সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা। খুব বড় স্কোর নয়, ১৬০-১৬৫ রানের ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা বলে মনে করছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বিদায় হওয়ার কারণে উইকেটটা বিশ্রাম পেয়েছে। পানি দেওয়া গিয়েছে।এ কারণে তাজা উইকেটে খেলা হবে। সুতরাং, ফাইনালটা বেশ উপভোগ্য হবে বলেই মনে হয়। দুটো সেরা দলের যুদ্ধ দেখতে আজ সমর্থকরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে হায়দরাবাদের উপ্পলে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে।