রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর (আরসিবি) টাইটেল স্পন্সর রঙ (WRONG) নামে একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড। যার মালিকায় যৌথভাবে রয়েছেন বিরাট কোহলি এবং অঞ্জন রেড্ডি। আরসিবির জার্সির সামনেই বড় করে লেখা wrong। দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে ৪ উইকেটে হার এবং টানা ৬ ম্যাচে পরাজয়ের পর টুইটারে অখিলেস নামে একজন লিখেছেন, ‘Somehow everything has gone WRONG with #RCB this season #IPL2019 #RCBvDC।’
এবারের আইপিএল শুরুর আগেই অধিনায়কত্ব নিয়ে ভারতীয় দলের সাবেক ওপেনার এবং বর্তমানে বিজেপির রাজনীতিতে নাম লেখানো গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে একচোট হয়ে গেছে বিরাট কোহলির। গম্ভীর মন্তব্য করেছিলেন, ‘কোহলির কপাল ভালো যে, তাকে এখনও অধিনায়ক রাখা হয়েছে (আরসিবির)।’
জবাবটা বেশ কড়া ভাষাতেই দিয়েছিলেন কোহলি। বলেছেন, ‘আমি জানি লোকে অনেক কিছু বলছে। ওরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলেই এ সব কথা বলা শুরু করে। আমার দায়িত্ব আমি জানি। দলকে আইপিএল জেতাতে পারলে আমি দারুণ খুশি হব। মাঠের বাইরে থেকে কে কী বলল, এই নিয়ে যদি মাথা ঘামাতে হয়, তা হলে আমি পাঁচটা ম্যাচও টিকে থাকতে পারতাম না। বাড়িতে বসে থাকতে হতো।’
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নেতৃত্ব দিয়ে দুটি শিরোপা জিতিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর। আর বিরাট কোহলি রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে নেতৃত্ব দিয়ে এখনও পর্যন্ত একটি শিরোপাও উপহার দিতে পারেননি। বরং, প্রতিটি আসরেই বিশাল বাজেটের এবং তারকা সমৃদ্ধ টাইটানিক নিয়ে টুর্নামেন্টের শুরুতেই ডুবে যেতে হয় কোহলির দলকে।
গম্ভীরকে কড়া ভাষায় জবাব দিলেও বিরাট কোহলি দেখাতে পারলেন না, আসলেই তার সমালোচনা করা ঠিক নয়! তিনি প্রমাণ করতে পারলেন না, গম্ভীরের দাবি মিথ্যা। পারলেন না প্রমাণ করতে যে, তারকা সমৃদ্ধ টাইটানিক সব সময় ডোবেও না, সকল ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝেও সদর্পে টিকে থাকে।
বরং, এবার উল্টো আরও বেশি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হলো কোহলি অ্যান্ড কোংকে। এবারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি কোহলির দল। এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং বিরাট কোহলি- বিশ্বের সেরা দুই ব্যাটসম্যান এখন একই দলে। কিন্তু সেই দলটিই কি না টানা ৬টি ম্যাচে হারের লজ্জা বরণ করলো!
প্রতিটি ম্যাচেই টস করতে নামেন বিরাট কোহলি আর তার সমর্থকরা আশায় বুক বাধতে থাকেন, এবার বুঝি তাদেরকে জয় উপহার দেবেন কোহলিরা। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেই একই হতাশা আর ব্যর্থতা নিয়ে, অবনত মস্তকে ঘলে ফিরে যান তারা। এমনকি দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে জার্সির রঙ পরিবর্তন করেও দলের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেননি কোহলিরা। ১৪৯ রানে অলআউট হওয়ার পর হেরেছে তারা ৪ উইকেটের ব্যবধানে।
বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ভারতীয় অধিনায়কের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে এখন সত্যিই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো ভারতের সমর্থকরা। যে দলের অধিনায়ক জিততেই ভুলে গেলেন এবং টানা হারতে হারতে আত্মবিশ্বাস তলানীতে নামিয়ে এনেছেন, বিশ্বকাপে গিয়ে কি করবেন তিনি?
সত্যিই, জিততে ভুলে গেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। টানা কতটি ম্যাচ হেরেছেন তিনি? আইপিএলের টানা এই ৬ ম্যাচ? তা নয়, কোহলি মূলত হেরেছেন টানা ৯টি ম্যাচ। সাম্প্রতিক হিসেব করলে ১১টি পরাজয়ের দগদগে ক্ষত তৈরি হয়েছে কোহলির মাঝে।
আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে চিপকে স্বাগতিক চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে হার দিয়ে শুরু করেন কোহলি অ্যান্ড কোং। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কাছে ৬ রানে, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে ১১৮ রানের বিশাল ব্যবধানে, রাজস্থান রয়্যালসের কাছে ৭ উইকেটে এবং সর্বশেষ কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ২০৫ রান করেও তাদেরকে হারতে হয়েছিল ৫ উইকেটের ব্যবধানে। সর্বশেষ দিল্লির কাছে পরাজিত হলো ৪ উইকেটের ব্যবধানে।
আইপিএলে কিন্তু টানা ৭ ম্যাচে হার কোহলির রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর। গত বছর রাজস্থান রয়্যালসের কাছে শেষ ম্যাচে হার দিয়ে শেষ হয়েছিল আরসিবির আইপিএল। সেই হার মিলিয়ে আইপিএলে টানা সাত ম্যাচে হার কোহলির দলের।
এবারের আইপিএলে ৬ হারের সঙ্গে বিরাট কোহলি টানা ৯টি ম্যাচে হারলেন। আইপিএল শুরুর আগেই তারা ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টানা তিনটি ওয়ানডেতে হেরেছিলেন তিনি। ৫ ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ জিতেছিল কোহলির দল। এরপর টানা তিন ম্যাচ হেরে সিরিজই খুইয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। সেই সিরিজ হারের পর কোহলি বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপে কেউই ফেবারিট নয়।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে তাদের সঙ্গে ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল কোহলির ভারত। সেই দুই টি-টোয়েন্টিতেও হেরেছিল অর্থ্যাৎ, মাঝে দুটি ওয়ানডে বাদ দিলে সাম্প্রতিক সময়ে ১১টি হারের লজ্জায় পুড়তে হয়েছে বিরাট কোহলিকে।
কোহলির এই হার দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন। তিনি টুইটারের মাধ্যমে আর্জি জানিয়েছেন, ‘ভারতের জন্য খুবই ভালো হতো, যদি বিশ্বকাপের জন্য তারা এই মুহূর্তে বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দিতে পারতো! বড় ইভেন্টের আগে তাকে কিছু সময় দেয়া প্রয়োজন।’
যদিও মাইকেল ভনের এই মতামতের সঙ্গে একমত নন অধিকাংশ ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থক। রি-টুইটেই তারা জবাব দিয়েছেন ভনের কথার। সেখানে তারা লিখেছে, কোহলি এমন ব্যক্তি নন যে, দলকে মাঝ সমুদ্রে রেখে নিজে পালাবেন? কেউ কেউ তো বলেছেন, ভালো প্রস্তাব, তবে কোহলি এটা গ্রহণ করবেন বলে মনে হয় না। কারও মত, কোহলির উচিৎ, আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলোকে বিশ্বকাপের রিহারস্যাল হিসেবে নেয়া। যাতে বিশ্বকাপের আগে তার মানসিক দৃঢ়তা বাড়ে। কারও কারও মতে, আইপিএলের এই পারফরম্যান্স বিশ্বকাপে প্রভাব ফেলবে না।
টুইটারে কোহলিদের টানা অর্ধডজন হারের পর ঝড় বয়ে গেছে টুইটারজুড়ে। সেখানেও চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা-বার্তা। প্রাবু নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আরসিবির সিরিয়াসলি নিজেদের মধ্যে দুটি দল করে একটি প্র্যাকটিস ম্যাচের আয়োজন করতে পারে। এভাবে হয়তো আরসিবির ক্রিকেটাররা অন্তত একটি জয় পেতে পারে। আমি হাসির কোনো কিছু বলছি না। এভাবেই হয়তো আরসিবির ক্রিকেটার, দর্শক-সমর্থকরা জয়ের স্বাদ পেতে পারে এবং মাঠে গিয়েও তারা সেভাবে দলকে সমর্থন জানাতে পারে।’
নবনিত মুন্দ্রা নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘চিন্তা করে দেখুন তো, ১৯৯০ দশকের দিকে শচীন টেন্ডুলকার আর ব্রায়ান লারা একই দলে, কিন্তু তারা নিজেদেরকে সময়ের সবচেয়ে বাজে দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করলো! এটা কখনোই সম্ভব নয়। অথচ, আরসিবি সেটাই করলো শেষ পর্যন্ত। যে দলে কোহলি এবং এবি ডি ভিলিয়াসের মত ক্রিকেটার রয়েছে, তারা তো শচীন-লারার মতই।’
ডার্থ ল্যাডার নামে একজন লিখেছেন, ‘এবারের আইপিএলটা প্রমাণ করে দিয়েছে, এই আসর ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য কোনোভাবেই ভালো যাচ্ছে না।’
রেজওয়ানুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘বিরাট কোহলির জন্য সত্যিই খারাপ লাগছে। তার মত এমন এক অসাধারণ খেলোয়াড়, যিনি কি না চলতি টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ভাগ্যের কোনো স্পর্শই পাননি।’
মুলতাজিম খান নামে একজন হার্শা ভোগলের ধারাভাষ্যে বলা কথার পূনরাবৃত্তি করেছেন এভাবে, ‘এটা সত্যি কোনো বিরাট কোহলি নয়, যাকে আমরা চিনি। এখানে হয়তো কোহলির চেহারায় অন্য কেউ। অধিনায়ক হিসেবে এর চেয়ে ভিন্ন তিনি কি করতে পারতেন?’
কল্যানারামান নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি মনে করি আরসিবির জন্য এবারের আইপিএল শেষ। তাদের জন্য খুব দুঃখ হচ্ছে। তবে এই দলটি পুরোপুরি কোহলির ওপর নির্ভরশীল। আগামী আইপিএলের আগে তাদের (আরসিবি) উচিৎ হবে সব ক্রিকেটারকে (কোহলিসহ) ছেড়ে দেয়া এবং নিলাম থেকে সম্পূর্ণ নতুন একটি দল গঠন করা।’
এজন তো আরসিবির সঙ্গে লাহোর কালান্দার্সের একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনেরও দাবি জানিয়েছে! পিএসএলে এভাবেই টানা হেরে গিয়েছিল লাহোর কালান্দার্স। মাজহার আরশাদ নামে সেই টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, শুধু দেখতে চাই কে সবচেয়ে খারাপ, আরসিবি নাকি লাহোর কালান্দার্স।
রিক আইরি নামে একজন লিখেছেন, ‘এই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আরসিবির উচিৎ হবে তাদেরকে একজন নতুন এবং ভালোমানের অধিনায়ক নিয়ে ভাবা।’