অন্তর মরে যাওয়ার ৬ কারণ

মানুষের অন্তর তার দেহের কেন্দ্রবিন্দু। এটি শুধুমাত্র একটি শারীরিক অঙ্গ নয়, বরং বিশ্বাস, ইচ্ছা, এবং নৈতিকতার আসন। অন্তরের সুস্থতা মানুষের সামগ্রিক জীবনের গুণমান নির্ধারণ করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অন্তরের গুরুত্ব, এর রোগ, সেগুলোর প্রতিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

অন্তরের সুস্থতা না থাকলে মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই অন্তরের রোগগুলোর কারণ ও প্রতিকারের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব।

আল্লাহতায়ালা মানুষের বাহ্যিক রূপ নয়, অন্তর ও কাজ দেখেন। অন্তর হচ্ছে ইমান, নিয়ত, ও ইখলাসের কেন্দ্রস্থল। কোরআনে অন্তর শব্দটি ১৩২ বার উল্লেখ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও দেহ নয়; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজ দেখেন। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)

তিনি আরও বলেছেন, জেনে রাখ! দেহে এমন এক টুকরো গোশত রয়েছে, যা ভালো থাকলে গোটা দেহ ভালো থাকে। আর তা খারাপ হলে গোটা দেহ খারাপ হয়ে যায়। সেটি হলো অন্তর। (বুখারি, হাদিস: ৫২)

অন্তরের রোগ ও ক্ষতি সাধনের কারণসমূহ

আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীনতা

যে অন্তর আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকে না, তা ধীরে ধীরে কঠোর হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন সংকটময় হবে এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে তুলব। (সুরা তহা, আয়াত: ১২৪)

পাপ কাজের আধিক্য

পাপ কাজ অন্তরে কালো দাগ ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা যখন পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। বারবার পাপ করলে এই দাগ পুরো অন্তর ঢেকে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৩৪) আল্লাহ বলেন, তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে। (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত: ১৪)

দুনিয়ার প্রতি আসক্তি

দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ইমানকে দুর্বল করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইমান এদিকে (ইয়েমেনের দিকে)। কঠোরতা ও অন্তরের কাঠিন্য তাদের মধ্যে যারা সব সময় দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। (বুখারি, হাদিস: ৩৩০২)

অসৎ লোকের সঙ্গ

অসৎ সঙ্গ অন্তরে গিবত, সমালোচনা ও অহেতুক কথার প্রভাব ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হলো আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপর। আতর বিক্রেতার কাছে গেলে তুমি সুঘ্রাণ পাবে, আর কর্মকারের হাপর তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে। (বুখারি, হাদিস: ২১০১)

গান-বাজনা শোনা

গান-বাজনা অন্তরকে দুর্বল করে। আল্লাহ বলেন, কেউ কেউ বেহুদা কথা ক্রয় করে, যাতে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। (সুরা লোকমান, আয়াত: ৬) ইমাম হাসান বসরি (রহ.) বলেন, এই আয়াত গান-বাজনার জন্য নাযিল হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

উপদেশে প্রভাবিত না হওয়া

মৃত অন্তর আল্লাহর আয়াত ও উপদেশ শুনে ভীত হয় না। আল্লাহ বলেন, যখন মুমিনদের কাছে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তর ভীত হয়। আর যখন তাদের সামনে আয়াত পড়া হয়, তাদের ইমান বেড়ে যায়। (সুরা আনফাল, আয়াত: ২)

অন্তর মানুষের কর্ম ও চরিত্রের মূল কেন্দ্র। এটি সুস্থ রাখার জন্য আল্লাহর স্মরণ, পাপ থেকে বিরত থাকা, সৎ সঙ্গী গ্রহণ, এবং কোরআন ও হাদিসের চর্চা অপরিহার্য। অন্তর ভালো থাকলে দেহ, মন, এবং কাজও ভালো থাকে।

পক্ষান্তরে, অন্তর অসুস্থ হলে তা মানুষের জীবনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই অন্তরের রোগ থেকে বেঁচে থাকতে হলে, আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা এবং সৎকর্মে মনোনিবেশ করাই হচ্ছে আসল পথ। আল্লাহ আমাদের অন্তরকে পবিত্র এবং জীবন্ত রাখুন। আমিন!

Scroll to Top