হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৩য় স্ত্রী। ইসলামের দ্বিতীয় প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)-এর কন্যা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র কুমারী স্ত্রী।
হজরত আয়েশা (রা.) অন্যতম হাদিস বর্ণনাকারী। তিনি ২২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেকোনো বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম তার দ্বারস্থ হতেন। রাসুল (সা.)–এর কাছ থেকে তিনি ইসলাম সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
আয়েশা (রা.) প্রতি বছর হজে যেতেন। হেরা ও সাবির পর্বতের মাঝখানে তার তাঁবু স্থাপন করা হতো। দূরদূরান্তের জ্ঞানপিপাসুরা সেই তাঁবুর পাশে ভিড় জমাতেন। তিনি তাঁদের যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করতে উৎসাহ দিতেন। শুধু নারীদেরই নয়, পুরুষদেরও তিনি শিক্ষা দিতেন। আবু মুসা আশয়ারী (রা.) বলেন, ‘যখনই কোনো হাদিস নিয়ে আমাদের সমস্যা হতো, আয়েশা (রা.)–কে জিজ্ঞেস করলে আমরা তার সমাধান পেয়ে যেতাম।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৮৩)
তিনি ইতিহাস ও সাহিত্যের জ্ঞানার্জন করেছিলেন তার বাবার কাছ থেকে। চিকিৎসা শাস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাসুল (সা.)–এর দরবারে আসা আরব গোত্রের প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)–কে বিয়ে করার আগে রাসুল (সা.) এর সুসংবাদ পেয়েছিলেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন, একজন ফেরেশতা একখণ্ড রেশমি কাপড়ে কিছু একটা মুড়ে এনে বলল, ‘এ আপনার স্ত্রী।’ রাসুল (সা.) সেটি খুলে দেখলেন তার মধ্যে আয়েশা (রা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২,৪২৮)
একবার আয়েশা (রা.) রাসুল (সা.)–এর সফরসঙ্গী ছিলেন। চলার পথে রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)–কে বললেন, ‘এসো, আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি।’ প্রতিযোগিতায় জয়ী হন আয়েশা (রা.)। এর কিছুদিন পর আবার তারা দুজন দৌড় প্রতিযোগিতা করেন। সেদিন রাসুল (সা.) জয়ী হন। রাসুল (সা.) মজা করে বললেন, ‘এটা হলো ওই দিনের প্রতিশোধ।’ (আবু দাউদ)
আয়েশা (রা.)–এর গায়ের রং ছিল সাদা ও লালের মিশ্রণে। তাই তাঁকে ‘হুমায়রা’ নামেও সম্বোধন করা হতো।
ইফকের ঘটনা
ষষ্ঠ হিজরি সনে বনু মুস্তালিক যুদ্ধে রাসুল (স.)- এর সাথে হজরত আয়েশা (রা.)-ও ছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তার গলার হার হায়িয়ে যায়। হারানো হার খুঁজতে গিয়ে তিনি কাফেলা থেকে পিছনে পড়ে যান।
ফিরতে দেরি হয়ে যায়। এ সুযোগে মুনাফিকরা তার বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা করল। এতে তিনি চরম মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। তার জীবন একেবারে বিষণ্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু তিনি ধৈর্য হারান নি। আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে অটল ছিলেন।
এ সময়ে রসুলুল্লাহ (সা.) কোনো সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারেন নি। তিনি চিন্তিত হলেন। হজরত আয়েশা (রা.)-এর পিতামাতাও চরম উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের মধ্যে কালাতিপাত করছিলেন।
অবশেষে আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা বর্ণনা করে সুরা নুরে ১১-২১ নম্বর আয়াত নাজিল হলো। মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলো। রসুলুল্লাহ (সা.) চিন্তামুক্ত হলেন। হজরত আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা ও চারিত্রিক মাধুর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
মহানবী (সা.)–এর মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত আয়েশা (রা.) তার পাশে ছিলেন। তাদের দাম্পত্যজীবন ছিল ৯ বছরের। এই ৯ বছরে তিনি রসুল (সা.)–এর কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কোরআন, হাদিস, তাফসির ফিকহ ও ফতোয়া ইসলামি শিক্ষার সব বিভাগেই তার অগাধ জ্ঞান ছিল। হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমার (রা.) ও হজরত উসমান (রা.)–এর খিলাফতকালে তিনি ফতোয়া দিতেন।
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) ৫৮ হিজরির ১৭ রমজান মদিনায় ইন্তেকাল করেন। জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।