পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রতি বছর হজের জন্য লাখ লাখ মুসলিম একত্রিত হন আল্লাহ তাআলার সান্বিধ্য অর্জন করতে। হজের দিনগুলোতে তারা হজ করেন। এর আগে পরে কেউ কেউ ওমরাও করেন।
এই হজ ও ওমরা পালনের সময় বিশেষ কিছু স্থান রয়েছে যেখানে দোয়া কবুল হয়। সবচে প্রসদ্ধি কয়েকটি স্থান রয়েছে যেখানে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজের সময় দোয়ার জন্য অবস্থান করেছিলেন।
সাফা ও মারওয়া
এখানে গিয়ে হাজিরা প্রথমে তালবিয়া পাঠ করবেন,
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَك
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক।
আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। তোমার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরীক নেই।
এরপর কোরআন হাদিস থেকে যেকোনো দোয়া পড়বেন। তারপর সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে নিজের জন্য দোয়া করবেন।
আরাফার ময়দান
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল দোয়ার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ’আরাফার দিনের দোয়া আর শ্রেষ্ঠ কালিমা (যিকির) যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ পাঠ করেছেন তা হলো,
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْء قدير
‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’। অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তার কোনো শরিক নেই। তারই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সকল শক্তির আঁধার।। (তিরমিজি ৩৫৮৫)
এখানে এই দোয়ার পাশাপাশি নিজের জন্য হাত তুলে দোয়া করা যায়। বিশেষ করে নামাজের পর।
মুজদালিফা
মুজদাল ফায় ফজর নামাজ পড়ে দুহাত তুলে দোয়া করা সুন্নত। মুজদালিফার ফজিলত প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেন,
‘যখন তোমরা আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করো তখন আল্লাহকে স্মরণ করো মুজদালিফায়। স্মরণ করো যেভাবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তো ইতোপূর্বে পথভ্রষ্ট ছিলে। (সুরা বাকারা ১৯৮)
প্রথম ও দ্বিতীয় জামারা
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম দুই জামারায় পাথর নিক্ষেপ শেষেই দুহাত তুলে লম্বা সময় ধরে দোয়া করতেন। তবে তিনি তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপ শেষে কোনো দোয়া করতেন না।
এসব স্থান বাদেও আরও যেসব স্থানে দোয়া করা যায়
হারাম শরিফ
মসজিদুল হারাম: মসজিদুল হারাম হলো কাবা শরিফের চারদিকের বৃত্তাকার মসজিদ। এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ।
কাবা শরিফ
মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কৃষ্ণ বর্ণের চতুষ্কোণ আয়তাকার গৃহটিই হলো কাবা শরিফ। কাবা হলো আল্লাহর ঘর। কাবা মুসলিম জাতির কিবলা বা ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। ইবাদত ও দোয়া কবুলের জন্য এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
হাতিমে কাবা
কাবাঘর–সংলগ্ন উত্তর দিকে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থানকে ‘হাতিম’ বলা হয়। এই স্থানটুকু আগে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই এখানে নামাজ পড়া মানে কাবার ভেতরে নামাজ পড়া।
মিজাবে রহমত
কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য উত্তর পাশে হাতিমের ভেতরে মাঝখান বরাবর একটি সোনার পরনালা রয়েছে। একে মিজাবে রহমত বলে। এটি দোয়া কবুলের স্থান।
কাবা শরিফের কোণসমূহ
কাবাঘরের প্রতিটি কোণকে রোকন বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব কোণে হাজরে আসওয়াদ অবস্থিত। কাবাঘরের উত্তর-পূর্ব কোণকে বলা হয় রোকনে ইরাকি, উত্তর-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে শামি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে ইয়ামানি।
হাজরে আসওয়াদ
কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেয়ালে লাগানো জান্নাতি পাথর। এখান থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয় এবং এখানেই শেষ করতে হয়। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনে গুনাহ মাফ হয়। ইশারায়ও চুম্বন করা যায়।
রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যস্থল
কাবার পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ হলো রোকনে ইয়ামানি এবং পূর্ব-দক্ষিণ কোণ হলো রোকনে হাজরে আসওয়াদ। তাওয়াফের প্রতি চক্করে এই স্থানে পড়তে হয়: ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাছানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাছানা; ওয়া কি না আযাবান নার।’ হে আল্লাহ, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতে কল্যাণ দিন এবং দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করুন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১)।
মাতাফ
মাতাফ, অর্থাৎ তাওয়াফ করার স্থান। কাবা শরিফের চতুর্দিকে তাওয়াফের জন্য খোলা স্থানটিই হলো মাতাফ।
মাকামে ইবরাহিম
কাবা শরিফের পূর্ব দিকে মাতাফ বা তাওয়াফ ভূমিসংলগ্ন মাকামে ইবরাহিমে যে প্রস্তরখণ্ড সংরক্ষিত আছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘরের প্রাচীর গাঁথতেন। এই পবিত্র স্থানের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতি প্রকার তাওয়াফের পর দুই রাকাত ‘ওয়াজিবুত তাওয়াফ’ নামাজ আদায় করতে হয়।
জমজম
পবিত্র কাবাঘরের পূর্ব দিকে মসজিদুল হারাম শরিফ চত্বরেই জমজম কূপ অবস্থিত। এটি জগতের সবচেয়ে সুপেয় পানির উৎস।
মিনা
আল্লাহ তাআলার আদেশে হযরত ইবরাহিম (আ.) হযরত ইসমাইলকে (আ.) যে স্থানে কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই স্থানের নাম মিনা। মক্কা শরিফ থেকে মিনা পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে অবিস্থত। মিনা প্রান্তরে হজের আগের দিন এবং হজের পর তিন দিন, অর্থাৎ চার দিন তাঁবুতে অবস্থান করতে হয়।