পৃথিবীর অনেকেই মনে করেন হযরত ঈসা আ. কে শূলে চড়ানো হয়েছে। কিন্তু আসলে কী ঘটেছিলো? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে এ বিষয়ে কী বলেছেন।
اِذۡ قَالَ اللّٰہُ یٰعِیۡسٰۤی اِنِّیۡ مُتَوَفِّیۡکَ وَرَافِعُکَ اِلَیَّ وَمُطَہِّرُکَ مِنَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَجَاعِلُ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡکَ فَوۡقَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ ۚ ثُمَّ اِلَیَّ مَرۡجِعُکُمۡ فَاَحۡکُمُ بَیۡنَکُمۡ فِیۡمَا کُنۡتُمۡ فِیۡہِ تَخۡتَلِفُوۡنَ
অর্থ: (তার কৌশল সেই সময় প্রকাশ পেল) যখন আল্লাহ বলেছিলেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে (সহি-সালামতে) ফেরত নিয়ে নেব, তোমাকে নিজের কাছে তুলে নেব এবং যারা কুফরী অবলম্বন করেছে তাদের (উৎপীড়ন) থেকে তোমাকে মুক্ত করব, আর যারা তোমার অনুসরণ করেছে তাদেরকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত সেই সকল লোকের উপর প্রবল রাখব, যারা (তোমাকে) অস্বীকার করেছে। তারপর তোমাদের সকলকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তোমাদের মধ্যে সেই বিষয়ে মীমাংসা করব, যা নিয়ে তোমরা বিরোধ করতে। (সুরা আলে ইমরান ৫৫)
তাফসিরে তাওযিহুল কোরআনে মুফতি তাকি উসমানি এ বিষয়ে লিখেন, শত্রুগণ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে শূলে চড়ানোর ষড়যন্ত্র এঁটেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে আসমানে তুলে নেন এবং যারা তাকে গ্রেফতার করতে এসেছিল তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে তার সদৃশ বানিয়ে দেন।
শত্রুগণ হযরত ঈসা মনে করে তাকেই শূলে চড়ায়। আয়াতের যে তরজমা করা হয়েছে তার ভিত্তি متوفيك.-এর আভিধানিক অর্থের উপর। মুফাসসিরদের একটি বড় দল এস্থলে এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। শব্দটির আরও একটি ব্যাখ্যা করা সম্ভব, যা হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকেও বর্ণিত আছে। তার জন্য দেখুন মাআরিফুল কুরআন ২য় খণ্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে যারা স্বীকার করে (তা সঠিকভাবে স্বীকার করুক, যেমন মুসলিম সম্প্রদায় অথবা ভ্রান্তভাবে স্বীকার করুক, যেমন খ্রিস্টান সম্প্রদায়), তাদেরকে আমি তার বিরুদ্ধাবাদীদের উপর সর্বদা প্রবল রাখব। সুতরাং ইতিহাসে লক্ষ্য করা যায় যে, সর্বদা এমনই হয়েছে। হাঁ সুদীর্ঘ শত-শত বছরের ইতিহাসে স্বল্পকালের জন্য যদি তার বিরুদ্ধাবাদীদেরকে ক্ষেত্রবিশেষে প্রবল দেখা যায়, তবে এটা সে সাধারণ রীতির পরিপন্থী নয়।
এ আয়াতের ব্যাংখ্যায় তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে আছে, তারা (অর্থাৎ যারা তার নবুয়ত অস্বীকার করেছিল, তাকে হত্যা ও নির্যাতন করার উদ্দেশ্যে) গোপন কৌশল অবলম্বন করলো ( সেমতে ষড়যন্ত্র ও কৌশলে তাকে গ্রেফতার করে শূলীতে চড়াতে উদ্যত হলো) এবং আল্লাহ তাআলাও (তাকে নিরাপদ রাখার জন্য) গোপন কৌশল অবলম্বন করলেন।
(তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারলো না। কারণ আল্লাহ্ বিরোধীদের মধ্য থেকেই এক ব্যক্তিকে হযরত ঈসা আ.-এর আকৃতিতে রূপান্তরিত করে দিলেন এবং ঈসা আ.-কে আকাশে উঠিয়ে নিলেন। এতে তিনি বিপদমুক্ত হয়ে যান এবং রূপান্তরিত ইহুদীকে শূলে চড়ানো হয়। ইহুদীরা আজ পর্যন্ত এ গোপন কৌশলের কথা জানতেই পারেনি, প্রতিরোধের সামর্থ্য হওয়া তো দূরের কথা) আল্লাহ্ তা’আলা শ্রেষ্ঠতম কৌশলী। (কারণ অন্যদের কৌশল দুর্বল ও মন্দ এবং অস্থানেও প্রয়োগ হয়ে থাকে।
কিন্তু আল্লাহর কৌশল মজবুত, উত্তম ও হেকমত অনুযায়ী হয়। আল্লাহ তাআলা এ কৌশল তখন অবলম্বন করলেন,) যখন তিনি (গ্রেফতারের সময় ঈসা [আ]-কে কিছুটা উদ্বিগ্ন দেখে) বললেন, হে ঈসা (চিন্তা করো না), নিশ্চয় আমি তোমাকে (প্রতিশ্রুত সময়ে স্বাভাবিক পন্থায়) মৃত্যুদান করব (সুতরাং স্বাভাবিক মৃত্যুই যখন তোমার বিধিলিপি, তখন নিশ্চিতই শত্রুর হাতে শূলে নিহত হওয়া থেকে তুমি নিরাপদ থাকবে। আপাতত) আমি তোমাকে (ঊর্ধ্বলোকের দিকে) উঠিয়ে নেব, তোমাকে অবিশ্বাসীদের অপবাদ থেকে পবিত্র করব এবং যারা তোমাদের অনুসরণ করবে, তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের ওপরে জয়ী রাখব।
(যদিও বর্তমানে অবিশ্বাসীরাই প্রবল ও শক্তিশালী।) অতঃপর (যখন কিয়ামত আসবে,) তখন (দুনিয়া ও বরযখ থেকে) আমার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে। আমি (তখন) তোমাদের (সবার) মধ্যে (কার্যত) ঐ সব বিষয়ে মীমাংসা করে দেব, যাতে তোমরা পরস্পর মতবিরোধ করতে (তন্মধ্যে ঈসার ব্যাপারটি অন্যতম)।