Makka

কবুল হজের বিনিময় জান্নাতে যাবো

হজ আরবি শব্দ। যার অর্থ, ইচ্ছা করা। নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত কিছু বিধান পালনের নাম হলো হজ। এর মধ্যে বাইতুল্লাহ তথা আল্লাহর ঘর জিয়ারত করা, মসজিদে নববীর জিয়ারত করা, আরাফায় অবস্থান করা ইত্যাদি হলো এক একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে হজ হলো একটি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হজ একটি আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত।

যার জন্য প্রয়োজন হলো সক্ষমতা বিশেষ করে আর্থিক সক্ষমতা থাকা জরুরি। মহা গ্রন্থ আলকুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার ওপর অবশ্য কর্তব্য। আর যে তা অস্বীকার করবে (সে জেনে রাখুক যে), আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী। (সুরা আলে ইমরান ৯৭)

আয়াতে– যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বাইতুল্লাহ আসা-যাওয়ার খরচ পূর্ণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ ও পাথেয় যার কাছে আছে। একইভাবে রাস্তা ও জান-মালের নিরাপত্তা এবং শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদিও সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। আর মহিলাদের জন্য মাহরাম (স্বামী অথবা যার সঙ্গে তার বিবাহ চিরতরে হারাম এমন কোনো পুরুষ) থাকা জরুরি। (ফাতহুল কাদির)

এই আয়াতটি প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর হজের বিধান ফরজ হওয়ার দলীল। হাদিসের আলোকে এ কথা জানা যায় যে, হজ জীবনে একবারই ফরজ। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করাকে কুরআন ‘কুফরি’ (অস্বীকার) বলে আখ্যায়িত করেছে। এ থেকেও হজ ফরজ হওয়া এবং তা যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না। বহু হাদিস ও সাহাবিদের উক্তিতে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে হজ করে না, তার ব্যাপারে কঠোর ধমক এসেছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
আর মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দিন। তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটসমূহের পিঠে (আরোহণ করে), তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সুরা হজ : ২৭)

তাফসিরে আহসানুল বয়ানে উল্লেখ করা হয়, আল্লাহ তায়ালার কুদরতের এক অপার মহিমা যে, মক্কা নগরীর পাহাড়ের চূড়া থেকে উচ্চারিত সেই আহবান আজ পৃথিবীর কোণায় কোণায় পৌঁছে গেছে; প্রত্যেক হজ ও উমরা সম্পাদনকারী হজ ও উমরার সময় সেই আহবানে সাড়া দিয়েই মহান মালিক আল্লাহর কাছে ‘লাব্বাইক’ –আমি উপস্থিত–বলে সাড়া দিয়ে থাকেন।

আলহামদুলিল্লাহ, যা বর্তমান সময়েও স্বাভাবিকভাবে পালিত হয়ে আসছে। ‎হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন– আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহর পথে (শত্রুর মোকাবেলায়) জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন– ‘হজ্জুল–মাবরূ’র তথা কবুল হজ। (সহিহ বুখারি : ১৫১৯)

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন– এক ‘উমরা’ হজের পর আরেকটি ‘উমরা হজ পালন করা, উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা স্বরূপ। আর একটি হজ্জে মাবরূরের তথা কবুলকৃত হজের প্রতিদান হলো জান্নাত। (সহিহ বুখারি : ১৭৭৩)

শাওয়াল জিলকদ ও জিলহজ এ তিনটি মাস হলো পবিত্র হজব্রত পালনের মাস। ইতোমধ্যে সারাবিশ্ব থেকে আল্লাহর অনেক মেহমান হাজিগণ হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে বাইতুল্লাহর সফর শুরু করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও বাইতুল্লাহ যাওয়ার তাওফিক দান করুন। যারা এ বছর হজে যাচ্ছেন। হজব্রত পালন করবেন, তাদের হজকে কবুল করুন। আমিন।

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ,গাজীপুর

Scroll to Top