জাকাত প্রত্যেক স্বাধীন সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী মুসলিম নর-নারীর জন্য আল্লাহর নির্দেশিত অন্যতম ফরজ ইবাদত।
জাকাত মানুষকে পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্তিদানের লক্ষ্যে প্রবর্তিত হয়েছে। কোনো স্থানে বা কোনো সময়ে জাকাত গ্রহণকারী লোকের সন্ধান পাওয়া না গেলেও ধনীদের ওপর জাকাত প্রদানের আদেশ সমভাবে বহাল থাকে।
জাকাতের অর্থ শুধু আল-কুরআনে নির্দেশিত খাতেই ব্যয় করতে হবে। এটি প্রত্যেক মুমিনের জন্য আর্থিক ফরজ ইবাদত। জাকাতের সম্পর্ক আল্লাহ ও বান্দার সঙ্গে।
ট্যাক্স হলো সরকারি কর। সরকার এই কর যেকোনো কাজেই ব্যয় করতে পারে। ট্যাক্সের সঙ্গে সম্পর্ক হচ্ছে সরকার ও জনগণের। এর সঙ্গে জাকাতের কোনো সম্পর্ক নেই। ‘রাষ্ট্রকে যে পরিমাণ ট্যাক্সই দেওয়া হোক না কেন, তাতে জাকাত আদায় হবে না। বরং ট্যাক্স পরিশোধের পর সম্পদ নেছাব পরিমাণ থাকলে এবং তা এক বছর অতিবাহিত হলে তাতে জাকাত দিতে হবে’ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৮৫)।
জাকাত দেওয়ার মাধ্যমে জাকাত প্রদানকারীদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাও সুদৃঢ় হয়। ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আর্থিক উন্নতি ঘটে। যারা অভাবি হিসেবে জাকাত গ্রহণ করে তারাও একসময় জাকাত দাতারূপে পরিবর্তিত হয়।
ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়- সাহাবি, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের যুগে জাকাতভিত্তিক অর্থনীতি বাস্তবায়নের ফলে মুসলমানদের সম্পদ ও আর্থিক অবস্থা এত বেশি সচ্ছল হয়েছিল যে, তখন জাকাত নেয়ার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় আয়করের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও জাকাতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তাই ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, গত দেড় হাজার বছরে পৃথিবীতে রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে থাকলেও ইসলামের দৃষ্টিতে জাকাতের মূল দর্শনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে আয়কর এবং জাকাত এ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
অতএব রাষ্ট্রীয় বিধান মেনে আয়কর দিলেও জাকাত দিতে হবে। এতে জাকাতের বিধান কোনোক্রমেই রহিত কিংবা বাতিল হবে না।