ইফতার :
শুরু করা উচিত একগ্লাস পানি দিয়ে। ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। কৃত্রিম শরবতের চেয়ে লেবুর শরবত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে এক গ্লাসের বেশি শরবত না খাওয়াই ভালো। খেজুর অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীরা একটি বা দুটি খেজুর খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে কম। ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলে কম মিষ্টিযুক্ত খেজুর সংগ্রহ করতে পারেন। আলজেরিয়া থেকে আমাদের দেশে যেসব খেজুর আসে সেগুলোর মিষ্টি অনেক কম।
শসা খাওয়া যেতে পারে যেহেতু এখন পর্যন্ত এর মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়নি। তরমুজ খেতে চাইলে সাবধানে খেতে হবে। কারণ তরমুজ টকটকে লাল রং করার জন্য অভিনব উপায়ে রঙিন রাসায়নিক পদার্থ তরমুজে প্রবেশ করানো হয়। পেট ভরে ইফতার করবেন না। এর ফলে পেটের সমস্যা ছাড়াও নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদত করতে সমস্যা হবে।
অনেক সুস্থ মানুষ এমনভাবে ইফতার করেন যে, পরের দিন ইফতার পর্যন্ত ক্ষুধা লাগে না। এভাবে খাবার গ্রহণ রোজার আদর্শ বিরোধী। মনে রাখতে হবে রোজার মাসে সব কিছুর মাঝে সংযম থাকতে হবে।
ইফতারের সময় রেস্টুরেন্ট এবং ফুটপাথে যেসব শরবত বিক্রি করা হয় তাতে বরফ মেশানো হয় যা মূলত সরবরাহ করা হয় মাছের জন্য ব্যবহৃত বরফ, এমনকি মৃত মানুষ সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহƒত বরফ থেকে। মাঝে মাঝে ছোটখাটো কারখানা থেকে নদীর দূষিত পানি দিয়ে বরফ তৈরি করে তা বাজারে সরবরাহ করা হয়।
শুধু ইফতারের শরবত নয় বরং রমজান মাসে কেনাকাটা করার সময় মেয়েরা বিশেষ করে লাচ্ছি এবং ফালুদা খাবেই। লাচ্ছি এবং ফালুদাতেও একই বরফ মেশানো হয়। মুড়ি, ছোলা, পিঁয়াজু, ঘুগনি, জিলাপি, ধনেপাতা সবকিছু এক করে মিশিয়ে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়ার মাঝে এক অন্য ধরনের আনন্দ রয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুড়িকে বড় এবং সাদা করার জন্য ইউরিয়া মেশানো হয়। ইউরিয়া মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইউরিয়া হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরিয়েজ এনজাইম মানব দেহে না থাকার জন্য মানুষ ইউরিয়া হজম করতে পারে না ফলে ইউরিয়া দেহের অভ্যন্তরে থেকে যায়। ইউরিয়া খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন জটিলতা সহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাদা মুড়ি বর্জন করে হাতে ভাজা মুড়ি খেতে হবে।
ইফতারে কলা খেতে চাইলে কেনার সময় দেখেশুনে কিনতে হবে যেন কলাতে কার্বাইড মেশানো না থাকে। কার্বাইড পাকানো কলার বোঁটা হালকা সবুজ থাকে এবং কলার খোসা বা উপরিভাগ দাগহীন পরিষ্কার হলুদ রঙের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক কলা কখনোই এরকম দাগহীন পরিষ্কার হলুদ রঙের হয় না। তবে ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে। ছোট চিনি চম্পা কলা অথবা বিচি কলা কিনতে পারেন। দাম কম বলে এবং লাভ কম হয় বলে রাসায়নিক মিশ্রণের সম্ভাবনা কম থাকে।
রমজান মাসে কেউ যদি হোটেলে খেতে বাধ্য হন তাহলে ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস না খাওয়াই ভালো। ঢাকা শহরের অধিকাংশ হোটেলে ভালো মুরগির সঙ্গে মরা মুরগিও রান্না করা হয়। তাই হোটেলে একান্তই খেতে হলে মুরগির পরিবর্তে মাছ খাওয়াই উত্তম।
কিডনি রোগীরা যদি রোজা রাখেন তাহলে ইফতারের সময় ডালের তৈরি কোনো ইফতার সামগ্রী গ্রহণ করবেন না। বেগুনি না খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন রঙিন জিলাপি খাবেন না। রঙিন জিলাপিতে কৃত্রিম রং মেশানো থাকে। এটি আপনার কিডনির অবস্থা আরও খারাপ করে ফেলবে।
শুধু তাই নয় কৃত্রিম রং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হালিম খাওয়া আপনার জন্য বিষের মতো। ইফতারের সময় কিডনি রোগীরা শুধু পানি দিয়ে ইফতার শুরু করবেন। ফলের মধ্যে আপেল, নাশপাতি খাবেন। দু একটি খেজুর খেতে পারেন। পালংশাক, পুঁইশাক, অথবা অন্য কোনো শাকের পাকুড়া খাবেন না। কাবাব জাতীয় খাবার খাবেন না। সামান্য ইফতার করে নামাজ পড়ার পর আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের খাবার খেয়ে নেবেন। তরকারি হিসাবে চিচিঙ্গা, ধুন্দুল এবং লাউ খেতে পারেন।
সেহরি :
সেহরি খাবার পর চা বা কফি পান করবেন না। সেহরিতে কোমল পানীয় অর্থাৎ কোল্ড ড্রিংকস খাবেন না। এতে দিনের বেলায় আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে। ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তখন আপনার রোজা রাখতে বেশ কষ্ট হবে। যারা মুখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা সেহরি খাবার পর মলম জাতীয় ওষুধ মুখের অভ্যন্তরে ব্যবহার করবেন না।
রোজারত অবস্থায় মলম গলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যাবে। রোজা রাখা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবে না। মেসওয়াক করতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত।