সৃষ্টিগতভাবে সকল মানুষ নিখুঁতভাবে জন্মগ্রহণ করে না। কারো হাত নেই ,কারো পা নেই, কেউ চোখে কম দেখে, কেউ কানে কম শোনে, কেউ কথা বলতে পারে না ,কারো বুদ্ধি কম, কারো যৌনাঙ্গ বা প্রজননক্ষমতায় ত্রুটি। তবু আমরা সবাই মানুষ; সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি।
আল্লাহ তাআলা যাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সৃষ্টি করেন। তাঁর সৃষ্টিতে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারো নেই। কারণ, সবাইকে একইরকম করে সৃষ্টি না করার হেকমত, উদ্দেশ্য ও রহস্য কী—তা শুধু তিনিই জানেন। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব তাঁরই, তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন’ (সূরা শূরা: ৪৯)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই মহান সত্ত্বা ; মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা আলে ইমরান: ৬)
ইসলামের দৃষ্টিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও মানুষ হিসেবে যথাযথ সম্মান পাওয়ার যোগ্য। শুধু মানুষ হিসেবে সম্মান পাওয়ার অধিকারী নয়, বরং ত্রুটিপূর্ণ দৈহিক গঠনের জন্য সহানুভূতিরও দাবিদার তারা। ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হলো- তারা মা-বাবার সম্পত্তির অংশ পাবে। কীভাবে তার অংশ নির্ধারণ হবে? এর উত্তরে হাদিসে এসেছে, যে হিজড়ার মধ্যে নারীর বৈশিষ্ট্য প্রবল, সে নারী হিসেবে এবং যার মধ্যে পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রবল, সে পুরুষ হিসেবে উত্তরাধিকার সম্পদ পাবে। আর যার বৈশিষ্ট্য সহজে নির্ধারণ করা যায় না তার ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া হবে। (সুনানে বায়হাকি: ১২৯৪)
আমরা জানি, বর্তমানবিশ্বের অত্যাধুনিক চিকিৎসায় কাউকে পুরুষ বা নারী নির্ধারণ করা কঠিন নয়। কিন্তু এরপরও যদি কোনো হিজড়ার লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে সে জটিল হিজড়া বলে বিবেচিত হবে এবং তার উত্তরাধিকার সম্পদ নির্ধারণের নিয়ম হলো- নারী-পুরুষের প্রাপ্ত অংশের মধ্য হতে কম অংশ যেটা হবে তাকে তা-ই দেওয়া হবে। অর্থাৎ তখন তাকে নারী হিসেবেই সম্পত্তির অংশ দেওয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ যদি কেউ এক ছেলে, এক মেয়ে এবং একজন জটিল হিজড়া রেখে মারা যায়, তাহলে তাকে মেয়ের সমপরিমাণ অংশ দেয়া হবে। একইভাবে মৃত ব্যক্তি যদি এক ছেলে এবং এক জটিল হিজড়া রেখে মারা যায় তাহলে ছেলে পাবে দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ আর সে পাবে এক তৃতীয়াংশ সম্পদ। (ফতোয়ায়ে শামি: ১০/৪৫০, আলমউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুওয়াইতিয়্যাহ: ২০/৩২, আররাজি শরহে সিরাজি; পৃষ্ঠা-৯৪)
ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও মুকাল্লাফ বা আল্লাহর বিধান পরিপালনে আদিষ্ট। সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত আদায় করতে হবে। যার ভেতর নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল সে নারী হিসেবে এবং যার ভেতর পুরুষের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রবল, সে পুরুষ হিসেবে ইসলামের বিধান মান্য করবে। আর যার মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্যই প্রবল নয়, সে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নারী বা পুরুষ হিসেবে ইসলামের বিধান মান্য করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নারী-পুরুষ-তৃতীয় লিঙ্গ সবার অধিকার ও পাওনা যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।