ইসলামের দৃষ্টিতে সদকা করা উৎকৃষ্ট কাজ। আর ভিক্ষা করা নিন্দনীয় কাজ। নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে কারো কাছে হাত পাতার চেয়ে অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করতেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। ওপরের হাত দাতার, আর নিচের হাত ভিক্ষুকের। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৯)
অহেতুক অন্যের কাছে হাত পাতার ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করতেন। প্রকৃত অভাবী না হয়েও মানুষের কাছে অভাবের কথা বলে বেড়ানো, হাত পাতা জঘন্য অপরাধ। একান্ত বিপদে না পড়ে শুধু সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কারো কাছে চাইলে, তা জাহান্নামের আগুন চাওয়ার নামান্তর।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে কিছু চায়, সে অধিক দোজখের আগুন চায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬২৯)
তবে কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই বিপদে পড়ে যায়, তাহলে বিপদ কেটে যাওয়া পর্যন্ত তার জন্য অন্যের কাছে হাত পাতার সুযোগ আছে।
কবিসাহ ইবনে মুখারিক্ব আল হিলালী (রা.) বলেন, একবার আমি (দেনার জমিন হয়ে) বিরাট অঙ্কের ঋণী হয়ে পড়লাম। কাজেই আমি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে এ জন্য তাঁর নিকট চাইলাম।
তিনি বলেন, ‘জাকাত বা সদকার মাল আসা পর্যন্ত আমার কাছে অপেক্ষা করো। তা এসে গেলে আমি তোমাকে তা থেকে দিতে নির্দেশ দেব। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি বললেন: হে কবিসাহ! মনে রেখো, তিন ব্যক্তি ছাড়া কারো জন্য হাত পাতা বা সাহায্য প্রার্থনা করা হালাল নয়।
(১) যে ব্যক্তি (কোনো ভালো কাজ করতে গিয়ে বা দেনার জমিন হয়ে) ঋণী হয়ে পড়েছে। ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সাহায্য প্রার্থনা করা তার জন্য হালাল। যখন দেনা পরিশোধ হয়ে যাবে তখন সে এ থেকে বিরত থাকবে।
(২) যে ব্যক্তি প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হয়েছে এবং এতে তার সব সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে। তার জন্য সাহায্য চাওয়া হালাল, যতক্ষণ না সে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়। রাবীর সন্দেহ- তিনি কি ‘ক্বিওয়াম’ শব্দ বলেছেন না ‘সিদাদ’ শব্দ বলেছেন? (উভয় শব্দের অর্থ একই)।
(৩) যে ব্যক্তি এমন অভাবগ্রস্ত হয়েছে যে তার গোত্রের তিনজন জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোক সাক্ষ্য দেয় যে ‘সত্যিই অমুক অভাবে পড়েছে’। তার জন্য জীবিকা নির্বাহের পরিমাণ সম্পদ লাভ করার আগ পর্যন্ত সাহায্য প্রার্থনা করা হালাল। হে কবিসাহ! এই তিন প্রকার লোক ছাড়া আর সবার জন্য সাহায্য চাওয়া হারাম। অতএব, এই তিন প্রকার লোক ছাড়া যেসব লোক সাহায্য চেয়ে বেড়ায় তারা হারাম খায়। (মুসলিম, হাদিস : ২২৯৪)
তাই ভিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো ভিক্ষুকের ব্যাপারে সন্দেহ হলে- সে আসলেই ভিক্ষুক কি না তা যাচাই করা উচিত।