এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আটটি দান বাক্সে রেকর্ড পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। মাত্র ১২৫ দিনের ব্যবধানে দান বাক্সে মিলেছে পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
এর আগে গত সাত জানুয়ারি পাগলা মসজিদের দান বাক্সে চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকাসহ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার মিলেছিল।
আজ শনিবার (৬ মে) রাত সোয়া ৯টার দিকে গণনা শেষে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ পারভেজ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে সকাল আটটার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভুঁইয়াসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সিলগালা করা মসজিদের আটটি দান বাক্স খোলা হয়।
পরে টাকাগুলো ১৯টি বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় নিয়ে টাকা গণনার কাজ শুরু করেন। রূপালী ব্যাংকের ডিজিএম শাহীদুর রহমান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামসহ ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আনসার সদস্য, মাদরাসার শতাধিক ছাত্র ও কর্মচারী টাকা গণনা শুরু করেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে গণনার কাজ শেষ হয়।
টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারগুলো কঠোর নিরাপত্তায় রূপালী ব্যাংকে পাগলা মসজিদের নিজস্ব একাউন্টে জমা করা হয়েছে।
এর আগে টাকা গণনার সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা মসজিদ পরিদর্শন করেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এ মসজিদকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। এ মসজিদে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে সকল ধর্মের ও বর্ণের নারী-পুরুষ পাগলা মসজিদে দান করে থাকেন। দিন দিন দানের পরিমাণ বেড়েই চলছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, গভীর রাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দামি গাড়ি নিয়ে লোকজন এসে গোপনে দান করেন। পাগলা মসজিদে এ দানের বিষয়টি পুরো জেলাসহ সারা দেশের আলোচিত বিষয় হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ পারভেজ জানান, দানের টাকায় দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ও বিভিন্ন মসজিদে অনুদান দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া শত কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
একই কথা বলেন পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
জানা গেছে, জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় পাগলা মসজিদের অবস্থান। সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিন তলা পাগলা মসজিদটি কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা।
প্রায় ৫০০ বছর আগে বাংলার ১২ ভুঁইয়ার অন্যতম ঈশা খানের আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা নামে এক ব্যক্তি নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ আদায় করতেন। পরে সেখানে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিলকদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায় বলে জানা গেছে।