পবিত্র কোরআন পড়ার ফজিলত ও উপকারিতা

মহান আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠদান পবিত্র কোরআন আর এই কোরআন পড়ার মর্যাদাও অনেক অনেক বেশি। কুরআনের প্রতিটি আয়াতে যেমন রয়েছে বিশ্বমানবতার হেদায়াত ও মুক্তির বারতা তেমনি কুরআন তিলাওয়াতে রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য অফুরান সওয়াব ও পুরস্কারের ঘোষণা। পবিত্র কোরআন পড়ার কারণে প্রতি হরফে ১০ নেকি করে পেয়ে থাকে।। মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে, বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বদলা হবে দশগুণ, এ কথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মিম একটি অক্ষর (তিরমিজি-২৯১)।

কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও শিক্ষা থেকেই মানুষ পায় মুক্তির পথ। আর যারা কোরআন থেকে দূরে সরে যায়; তারা পথহারা ও বিপদগ্রস্ত হয়। তাই সঠিক পথে দিশা পেতে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের বিকল্প নেই। নিয়মিত শুধু কোরআন তেলাওয়াতেও রয়েছে বিশেষ কিছু উপকার। তাহলো-

১. সঠিক পথের সন্ধান

মুমিন মুসলমানের জন্য হেদায়েত ও পথ নির্দেশ হচ্ছে কোরআন। ব্যক্তি, পারিবার, সামাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে তা-ও রয়েছে এ মহাগ্রন্থে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আমি তোমার জন্য কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটি হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৮৯)

২. কবরের আজাব থেকে মুক্তি

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, যখন মানুষকে কবরে দাফন করা হয় তখন ফেরেশতা মাথার দিক থেকে আজাব দেওয়ার জন্য আসে, তখন কুরআন তাকে বাধা দেয়। যখন ফেরেশতা সামনের দিক থেকে আসে, তখন দান-সদকা তাকে বাধা দেয়। যখন ফেরেশতা পায়ের দিক থেকে আসে, তখন মসজিদে পায়ে হেঁটে যাওয়া তাকে বাধা দেয়।

৩. কোরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী

কোরআনুল কারিম দুনিয়াতে মানুষের জীবন ব্যবস্থা ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। কেয়ামতের দিনও কোরআন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তেলাওয়াত কর, কারণ কোরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)

৪. কোরআন পাঠে প্রশান্তি নাজিল হয়

হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন এক লোক (কোরআনের) সুরা কাহফ পড়ছিল। তার পাশেই দুটো রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ইতোমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিলো। মেঘটি লোকটির কাছাকাছি হতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চমকাতে (লাফালাফি) আরম্ভ করলো। এরপর যখন সকাল হলো তখন লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করল। তা (শুনে) তিনি (প্রিয় নবি) বললেন, ‘ওটি ছিল প্রশান্তি; যা তোমার কোরআন পড়ার কারণে নাজিল হয়।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

৫. কুরআন তিলাওয়াতে দরিদ্রতা দূর হয়

বহু মানুষের পরীক্ষিত আমল সূরা ইখলাস। এ সূরা সবারই মুখস্থ আছে। বেশি বেশি পড়লে রাব্বুল আলামিন অভাব মোচন করে দেবেন। সাহল ইবনে সায়েদি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে দারিদ্র্যের অভিযোগ করল, রাসূল (সা.) তাকে বলেন, যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সূরা ইখলাস পড়বে। সাহাবি লাগাতার ক’দিন আমল করেন। ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্য দূরীভূত হয়ে যায়। [কুরতুবি : ২০/১৮৫]

৬. জান্নাত লাভ

কোরআনের বিধান মতো যে চলবে সে ব্যক্তি সফল। বিশেষ করে কোরআন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য জান্নাতের যাওয়ার অন্যতম মাধ্যমও বটে। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কেয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে- হে আমার রব! আমি দিনের বেলায় তাকে (এ রোজাদারকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। অনুরূপভাবে কোরআন বলবে- ‘হে আমার রব! আমাকে তেলাওয়াত তথা অধ্যয়ন করার কারণে রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এরপর উভয়ের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

কেন কোরআন পড়তে হবে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য উল্লেখিত হাদিসের বর্ণনাগুলোই যথেষ্ট। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে কোরআন পড়ার বিকল্প নেই। কোরআন পড়ায় মিলবে দুনিয়া শান্তি ও পরকালের মুক্তি।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআন অধ্যয়ন করে নিজেদের জীবনে তার বাস্তবায়ন করা জরুরি।। আর তাতেই মিলবে দুনিয়ার প্রশান্তি ও আখেরাতের মুক্তি।