মাঝে মধ্যেই ভূমিকম্পের ধাক্কায় পৃথিবী কেঁপে ওঠে। তছনছ হয়ে যায় শহর, নগর, বন্দর ও জনপদ। চোখের পলকে মাটির সঙ্গে মিশে যায় স্বপ্ন, সাধনা ও শ্রমে গড়ে তোলা ভুবন।
ভূমিকম্প হচ্ছে মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। মানুষ যেন নিজের অপরাধের জন্য তাওবা করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। নিজের অনৈতিক আচার-আচরণ ঠিক করে নেয়। সবার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দোয়া করে। আল্লাহকে অনেক বেশি স্মরণ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
মানুষকে সতর্ক করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!’ (সুরা আরাফ: ৯৭)
পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্প বিষয়ে ‘যিলযাল’ এবং ‘দাক্কা’ শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়েছে। ‘যিলযাল’-এর অর্থ একটি বস্তুর নড়াচড়ায় আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা। ‘দাক্কা’ এর অর্থ প্রচণ্ড কোনো শব্দ বা আওয়াজের কারণে কোনো কিছু নড়ে ওঠা বা ঝাঁকুনি খাওয়া।
পৃথিবীতে বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কঠিন শিলাত্বকে চ্যুতি বা স্থানান্তরের কারণে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে ভূমিকম্প হয় বান্দার অপরাধ বেড়ে গেলে।
বান্দার অপরাধ ক্ষমা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা: ৩০)
হাদিসে এসেছে, অশ্লীলতা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপকতাই এর মূল কারণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে। (তিরমিজি: ২২১২)
ভূমিকম্পের বিভীষিকা নিয়ে কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন— ‘হে মানব সকল, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে এক মারাত্মক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যপায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। দৃশ্যত মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা হজ: ১-২)
ভূমিকম্পের কতগুলো কারণ সম্পর্কে জানা যায় হাদিসের মাধ্যমে। প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখলে তা আত্মসাৎ করা হবে। জাকাতকে মনে করা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে। পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে বাবাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে। সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি সমাজের শাসক হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো—রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূকম্পনের, ভূমিধসের, লিঙ্গ পরিবর্তন, পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।’ (তিরমিজি: ১৪৪৭)
আমরা বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে এ হাদিসের বাস্তবতা খুঁজে পাই।
আল্লাহ অধিকাংশ জাতিকে ভূমিকম্পের গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন। ভূমিকম্প এমনই একটা দুর্যোগ, যা নিবারণ, প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা বা পূর্বাভাষ পাওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি মানুষ অদ্যাবধি আবিষ্কার করতে পারেনি।
সুতরাং এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।