আল্লাহ মানুষকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন

দিনের পর দিন আমরা গোপনে বা প্রকাশ্যে নানান পাপ কাজ করি। আমাদের পাপের কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাৎক্ষণিক পাকড়াও করেন না বরং কখনো অবকাশ দিয়ে থাকেন।

অবকাশ দেওয়ার অর্থ এটা নয় যে, তিনি আমাদের পাপের জন্য আর কখনই পাকড়াও করবেন না। বরং তিনি এজন্যই অবকাশ দেন আমরা যেন আমাদের ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে সহজ সরল পথে চলার অঙ্গীকার করি।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অন্যায়, বিরোধিতা, আল্লাহর অংশীদার স্থির করা যে ব্যাপারে তিনি কোনো প্রমাণ নাজিল করেননি, আর আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। আর প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে। সুতরাং যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবে না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৩-৩৪)
অনেক মুমিন পাপী ও অবিশ্বাসীদের দৌরাত্ম্য দেখে হতাশ হয়, তাদের মনে হয়, এরা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে অন্যের ওপর জুলুম করেও কোনো ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছে না। উল্টো মুমিন বান্দাদেরই তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। আল্লাহ কেন তাদের এভাবে অত্যাচার করার সুযোগ দিচ্ছেন।

এই প্রশ্নে উত্তর পবিত্র কোরআনেই আছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আলিফ-লাম-র, এগুলো কিতাবের এবং সুস্পষ্ট কোরআনের আয়াতসমূহ। এমন একটা সময় আসবে যখন অবিশ্বাসীরা আক্ষেপ করে বলবে, ‘হায়, আমরা যদি মুসলিম হয়ে যেতাম!’ ছেড়ে দাও ওদেরকে, ওরা খেতে থাক আর ভোগ করতে থাক, আর (মিথ্যা) আশা ওদেরকে উদাসীনতায় ডুবিয়ে রাখুক, শিগগিরই ওরা (ওদের আমালের পরিণতি) জানতে পারবে। আমি কোনো জনপদকে তার নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ধ্বংস করিনি। কোনো জাতিই তাদের সুনির্ধারিত সময় থেকে আগে বাড়তে পারে না আর পিছাতেও পারে না। ’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১-৫)

অর্থাৎ অবিশ্বাসী ও জালিমদের দৌরাত্ম্য চিরস্থায়ী নয়, তাদেরকে মিথ্যা আশা, অহংকার ও উদাসীনতা অন্ধ করে রেখেছে, যার জন্য পরকালে তারা আফসোস করবে। যখন আফসোস করে আর কিছুই করার থাকবে না। এর বিপরীতে যেসব মুমিন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে। আল্লাহর আদেশ মানতে গিয়ে কখনো কখনো শারীরিক-মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়, অবিশ্বাসী ও পাপীদের তাচ্ছিল্যের শিকার হয়, তাদের ব্যাপারে নবীজি (সা.) বলেছেন, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হলো। জান্নাত বলল, গরিব-মিসকিন ও দুর্বল ব্যক্তি আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। জাহান্নাম বলল, যত স্বৈরাচারী জালিম ও অহংকারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বলেন, তুই আমার আজাব, আমি তোর দ্বারা যার থেকে ইচ্ছা প্রতিশোধ গ্রহণ করব। তিনি জান্নাতকে বলেন, তুমি আমার রহমত, আমি তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা উপকৃত করব। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৬১)

অতএব পাপিষ্ঠদের দৌরাত্ম্যে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, প্রকৃত সফল তো তারা, যারা পরকালীন সফলতা পাবে। তাই দুনিয়ার মরীচিকার পেছনে না ছুটে মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থেকে পরকাল সাজানোই মুমিনের কাজ। মৃত্যু বা চূড়ান্ত আজাব আসার আগেই কৃত পাপ থেকে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করাই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। মহান আল্লাহ আমাদের সুবুদ্ধি দান করুন। আমিন।